• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৫ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

• লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক [পর্ব-৭]

হজের রুকন, ওয়াজিব ও সুন্নতসমূহ

  মুনীরুল ইসলাম ইবনু যাকির

০৪ আগস্ট ২০১৯, ১৩:০৮
07

হজের রুকন ৪টি

‘রুকন’ বলতে ঐসব আমল উদ্দেশ্য, যেগুলি হজের ক্ষেত্রে অবশ্যই সম্পাদন করতে হবে এবং অন্য কোন আমল যেগুলির স্থলাভিষিক্ত হতে পারবে না। হজের রুকন ৪টি। যথা: ইহরাম, তাওয়াফ, সাঈ এবং উকুফ। আমরা এখানে এ ব্যাপারে সংক্ষেপে আলোচনা করবো।

১. ইহরাম বাঁধা :

ইহরাম অর্থ, হজ শুরুর নিয়ত করা। মনে মনে নিয়ত না করলে ইহরাম সম্পন্ন হবে না। উমর ইবনুল খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,

«إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى»

‘প্রত্যেকটি কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল। আর প্রত্যেকেই তার নিয়ত অনুযায়ী প্রতিফল পাবে।’ [বুখারি, আসসাহিহ : ১; মুসলিম, আসসাহিহ : ৪৯২৭]

ইমাম ইবনুল মুনযির (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘সবাই একমত পোষণ করেছেন যে, কেউ হজের তালবিয়া পড়ার ইচ্ছা পোষণ করে উমরার তালবিয়া পড়ে ফেললে অথবা উমরার তালবিয়া পড়ার ইচ্ছা করে হজের তালবিয়া পড়ে ফেললে তার অন্তরের নিয়তটাই ধর্তব্য হবে; মৌখিক উচ্চারণ নয়।’ [মুনযিরি, আল-ইজমা, পৃ. ৫৫]

২. তাওয়াফ করা :

এখানে তাওয়াফ (যা রুকন হিসেবে বর্ণিত হলো) তার দ্বারা তাওয়াফে ইফাদা বা হজের তাওয়াফ উদ্দেশ্য, যা আরাফা এবং মুযদালিফা থেকে ফিরে এসে করা হয়। মহান আল্লাহ বলেন,

﴿وَلۡيَطَّوَّفُواْ بِٱلۡبَيۡتِ ٱلۡعَتِيقِ﴾

‘তারা যেন এই সুসংরক্ষিত গৃহের তাওয়াফ করে।’ [সুরা হজ, ২৯]

ইমাম ইবনু কুদামা (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘তাওয়াফে ইফাদা হজের একটি রুকন, এটি ব্যতীত হজ পূর্ণ হবে না এবং এ বিষয়ে কোন মতানৈক্য আছে বলে আমাদের জানা নেই। কেননা আল্লাহ বলেন, ‘তারা যেন এই সুসংরক্ষিত গৃহের তাওয়াফ করে।’ [সুরা হজ, ২৯]

ইমাম ইবনু আবদিল বার (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, এটি হজের ফরযসমূহের একটি, তাতে উলামায়ে কেরামের মধ্যে কোনো মতানৈক্য নেই।’ [ইবনু কুদামাহ, আল-মুগনি, ৫/৩১১]

৩. সাঈ করা :

মহান আল্লাহ বলেন,

﴿إِنَّ ٱلصَّفَا وَٱلۡمَرۡوَةَ مِن شَعَآئِرِ ٱللَّهِۖ فَمَنۡ حَجَّ ٱلۡبَيۡتَ أَوِ ٱعۡتَمَرَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيۡهِ أَن يَطَّوَّفَ بِهِمَا﴾

‘নিঃসন্দেহে সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম। সুতরাং যারা কাবা ঘরে হজ বা উমরা পালন করে, তাদের পক্ষে এ দু’টি প্রদক্ষিণ করাতে কোনো দোষ নেই।’ [সুরা বাকারাহ, ১৫৮]

এখানে যদিও অনুমতিজ্ঞাপক শব্দ ব্যবহার হয়েছে, আদতে বিষয়টি তা নয়। বরং এটা আদেশ হিসেবেই গণ্য হবে। মূলত কুসংস্কারবশত মক্কার কাফিররা সাফা-মারওয়া সাঈ করাকে খারাপ কাজ হিসেবে গণ্য করতো। সে জন্যই আল্লাহ তায়ালা ব্যাপারটা একটা বৈধ কাজ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এ জন্যই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বলেছেন,

«يَا أَيُّهَا النَّاسُ اسْعَوْا فَإِنَّ السَّعْيَ قَدْ كُتِبَ عَلَيْكُمْ»

‘হে মানবমণ্ডলী! তোমরা সাঈ করো। কেননা সাঈ তোমাদের উপর ফরয করা হয়েছে।’ [দারাকুতনি, আসসুনান : ২/২৫৫]

আয়িশা (রা.) বলেন,

«مَا أَتَمَّ اللَّهُ حَجَّ امْرِئٍ وَلَا عُمْرَتَهُ لَمْ يَطُفْ بَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ»

‘সাফা-মারওয়ায় সাঈ না করা পর্যন্ত আল্লাহ কারো হজ বা উমরা কোনটাই পূর্ণ করবেন না।’ [বুখারি, আসসাহিহ : ১৭৯০; মুসলিম, আসসাহিহ : ৩০৮০]

সকলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে এ তিনটি অর্থাৎ ইহরাম বাঁধা, তাওয়াফ করা এবং সাঈ করা উমরারও রুকন। সাঈর ক্ষেত্রে মতানৈক্য থাকলেও অধিকাংশ বিদ্বানগণের নিকটে এটিও রুকন।

৪. উকুফ করা :

উকুফ মানে অবস্থান করা। আরাফায় অবস্থান করাকে উকুফ বলা হয়। মহান আল্লাহ বলেন,

﴿فَإِذَآ أَفَضۡتُم مِّنۡ عَرَفَٰت﴾

‘এরপর যখন তোমরা আরাফা থেকে ফিরে আসবে...।’ [সুরা বাকারাহ, ১৯৮]

আরাফায় অবস্থানের পরেই তো সেখান থেকে ফিরে আসা হয়। আরাফায় অবস্থান এমন একটি রুকন, যা ছুটে গেলে হজই হবে না। আবদুর রহমান ইবনু ইয়ামুর (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আরাফায় অবস্থান করতে দেখেছি। এমতাবস্থায় তাঁর নিকটে নাজ্‌দের কতিপয় লোক এসে বলল, ‘হে আল্লাহ্‌র রাসুল! হজ কেমন করে আদায় করব?’ তিনি বললেন,

«الْحَجُّ عَرَفَةُ، فَمَنْ جَاءَ قَبْلَ صَلاَةِ الْفَجْرِ لَيْلَةَ جَمْعٍ، فَقَدْ تَمَّ حَجُّهُ»

‘আরাফায় অবস্থানই হচ্ছে হজ। অতএব, যে ব্যক্তি মুযদালিফার রাতে ফজরের পূর্বে এখানে আসল, তার হজ পূর্ণ হল।’ [ইবনু মাজাহ, আসসুনান : ৩০১৫]

ইমাম ইবনুল মুনযির (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘সমস্ত ইমামগণ একমত পোষণ করেছেন যে, আরাফায় অবস্থান করা ফরয। যার এখানকার অবস্থান ছুটে যাবে, তার হজ নেই।’ [ইবনুল মুনযির, আল-ইজমা, পৃ. ৬৪]

হজের ওয়াজিব ৭টি

১. যার যার মিকাত (চারদিক থেকে মক্কায় প্রবেশের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা) থেকে ইহরাম বাঁধা। অর্থাৎ মীকাত থেকে ইহরাম বাঁধা ওয়াজিব; আর ইহরাম বাঁধা হচ্ছে রুকন। ২. যে ব্যক্তি দিনের বেলায় আরাফার ময়দানে অবস্থান নিয়েছে তার জন্য সূর্য ডোবা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করা ওয়াজিব। ৩. যাদের যমযম পানি পান করানো কিংবা হাদির পশু চরানোর দায়িত্ব নেই তাদের জন্য তাশরিকের দিনগুলোতে মিনার ময়দানে রাত্রি যাপন করা। ৪. যারা মধ্যরাতের পূর্বে মুযদালিফায় পৌঁছেছেন তাদের জন্য মধ্যরাতের পর পর্যন্ত মুযদালিফাতে রাত্রিযাপন করা; যমযম পানি পান করানো ও হাদির পশু চরানোর দায়িত্বে যারা রয়েছেন তারা ছাড়া। ৫. ক্রমধারা রক্ষা করে জামরাগুলোতে কংকর নিক্ষেপ করা। ৬. মাথা ন্যাড়া করা কিংবা মাথার চুল ছোট করা। ৭. বিদায়ী তাওয়াফ করা।

হজের সুন্নতসমূহ

রুকন ও ওয়াজিব বাদে হজের অবশিষ্ট কার্যাবলি ও কথামালা হচ্ছে সুন্নত। যেমন, তাওয়াফে কুদুম, আরাফার রাত্রিতে মিনাতে রাত্রিযাপন, যথাযথসময়ে ইযতিবা ও রমল করা, হাজরে আসওয়াদকে চুমু খাওয়া, দুয়া ও যিকির পড়া, সাফা-মারওয়া পাহাড়ে আরোহন করা। রুকন, ওয়াজিব ও সুন্নতের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে, রুকন পালন করা ব্যতীত হজ সহিহ হবে না। ওয়াজিব বাদ পড়লে যদিও হজ সহিহ হবে; তবে জমহুর আলিমের মতানুযায়ী দম (ছাগল জবাই) দিতে হবে। আর সুন্নত বাদ পড়লে কোন কিছু করতে হয় না। [বিস্তারিত : ইবনু উসাইমিন, আশ-শারহুল মুমতি, ৭/৩৮০-৪১০]

চলবে, ইনশাআল্লাহ।

প্রচলিত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ব্যখ্যা, সমাজের কোন অমীমাংসিত বিষয়ে ধর্মতত্ত্ব, হাদিস, কোরআনের আয়াতের তাৎপর্য কিংবা অন্য যেকোন ধর্মের কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সর্বপরি মানব জীবনের সকল দিকে ধর্মের গুরুত্ব নিয়ে লিখুন আপনিও- [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড