অধিকার ডেস্ক ০৩ জুলাই ২০১৮, ০৯:৩৮
হজের কয়েকটি মাস আছে সুবিদিত। এসব মাসে যে লোক হজের পরিপূর্ণ নিয়ত করে, তাহলে সে হজের সময়ে তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করতে পারবে না। কোন অশোভন কাজ, ঝগড়া-বিবাদ হজের সেই সময় করতে পারবে না।
মহান আল্লাহ্ সূরা বাকারার (১৯৭) আয়াতে এরশাদ করেন, "আর তোমরা যে কোন সৎকাজ কর না কেন, আল্লাহ্ তা জ্ঞাত আছেন। আর তোমরা তোমাদের সাথে পাথেয় নিয়ে নাও, বস্তুত উৎকৃষ্ট পাথেয় হচ্ছে তাকওয়া বা আল্লাহর ভয়। সুতরাং হে জ্ঞানীগণ! একমাত্র আমাকেই ভয় করতে থাক (তোমাদের উপর তোমাদের পালনকর্তার অনগ্রহ অন্বেষণ করায় কোনো পাপ নেই)।”
উল্লেখিত আয়াতাংশে বলা হয়েছে, “হজের কয়েকটি মাস আছে সুবিদিত”। এখানে ‘আশহুরুন’ শব্দটি শাহরুন শব্দের বহুবচন। এর অর্থ মাসসমূহ। এর ভাবার্থে আব্দুল্লাহ্ ইব্ন উমার (রাঃ) বর্ণনা করেন, “শাওয়াল, যিলকাদ এবং যিলহজ মাসের দশদিন।”(ফাতহুল বারী ৩/৪৯০)
হজ অথবা উমরা এ দু’টির মধ্যে উমরার জন্যে কোনো সময় নির্ধারিত নেই। বছরের যে কোনো সময় তা আদায় করা যায়। কিন্তু হজের মাস এবং অনুষ্ঠানাদি আদায়ের জন্যে সুনির্দিষ্ট তারিখ নির্ধারিত রয়েছে। কাজেই এ আয়াতের শুরুতেই বলে দেয়া হয়েছে যে, হজের ব্যাপারটি উমরার মত নয়। এর জন্যে কয়েকটি মাস রয়েছে সেগুলি প্রসিদ্ধ ও সুবিদিত।
জাহিলিয়াতের যুগ থেকে ইসলামের আবির্ভাব পর্যন্ত এ মাসগুলোই হজের মাসরূপে গণ্য হয়ে আসছে। সুতরাং হজের মাস শাওয়াল হতে আরাম্ভ হওয়ার অর্থ হচ্ছে, এর পূর্বে হজের এহরাম বাঁধা যায়েজ নয়। কোনো কোনো ইমামের মতে শাওয়ালের পূর্বে হজের ইহরাম বাঁধলে হজ আদায় হবে না।
হজের মৌসুমে ধনবান মুসলিমদের মনে শয়তান ওয়াসওয়াসা দেয়। লক্ষ-লক্ষ টাকা খরচ করে হজ করলে কী লাভ হবে? বাড়িতে বসে থেকেই হজের সাওয়াব কামায় করা যায়। অনেকে আবার বিভিন্ন অযুহাত দেখায় যেমন : ছেলে-মিয়ে বিয়ে দেয়া, জায়গা-জমি বন্টন ইত্যাদি।
হজ একটি শারিরীক ও মালি ইবাদত। হজ সর্বসম্মতভাবে ইসলামের আরকানসমূহের মধ্যে একটি রুকন এবং ইসলামের ফারায়েয বা অবশ্য করণীয় বিষয়সমূহের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ফরয। কুরআন মাজিদের বহু আয়াত এবং অসংখ্য হাদীসের মাধ্যমে এর প্রতি তাকীদ ও গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
সুতরাং যদি কোনো ধনবান মু’মিন ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও শরয়ী কারণ ছাড়া হজ আদায় করা থেকে বিরত থাকেন তাহলে সে গুনাহগার হবেন এবং তার জন্যে অপেক্ষা করছে কঠিন পরিণতি। আল্লাহর বণী “যে ব্যক্তি এ মাসগুলিতে হজের সংকল্প করে অর্থাৎ হজের ইহরাম বাঁধে”।(সূরা বাকারা ১৯৭) এর দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে যে, হজের ইহরাম বাঁধা ও তা পূরণ করা অবশ্য কর্তব্য। সূরা বাকারার ১৯৬ নং আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, “তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ ও উমরাহ সম্পূর্ণ কর”।
হাদীসের বাণী : সর্বাধিক হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবী আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একাদা আমাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। ভাষণে তিনি বলেন, হে জনমন্ডলী! তোমাদের ওপর হজ ফরজ করা হয়েছে, তোমরা সবাই হজ পালন কর। অতপর জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করে বললো, হে আল্লাহর রাসূল (সা.), প্রতি বছরই কি আমাদের ওপর এ হজ পালন করা ফরয?
তখন রাসূল (সা.) চুপ থাকলেন (কোনো জবাব দিলেন না)। লোকটা তার এ প্রশ্ন তিন তিন বার করলেন। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমার প্রশ্নের জবাবে আমি যদি হ্যাঁ বলতাম, তাহলে তোমাদের ওপর প্রতিবছর হজ পালন করা অবশ্যই ওয়াজিব হয়ে যেত। যদিও তা তোমরা পালন করতে সক্ষম হতে না। অতপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমাদের ব্যাপারে আমি যা কিছু বাদ দেই, তা বলা হতে আমাকে ছেড়ে দাও (অর্থাৎ বলতে বাধ্য করো না)। জেনে রেখো, তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিগুলো তাদের নবীদের নিকট অতিমাত্রায় প্রশ্ন ও পারস্পরিক মতানৈক্য করার কারণেই ধ্বংস হয়েছে। সুতরাং আমি যখন কোনো বিষয়ে তোমাদেরকে সির্দেশ দেই তোমরা তা শক্তি ও সাধ্যানুযায়ী পালন করবে। আর কোনো বিষয়ে নিষেধ করলে তা হতে বিরত থাকবে। (সহীহ মুসলীম)
মহান আল্লাহ্ প্রতিটি সামর্থবান ঈমানদার মুসলিম নর-নারীরকেই যথাসময় হজব্রত পালন করার তাওফিক দান করুন। শরীয়াতের ভেতর অযথা বিতর্ক করা থেকে বিরত থাকা উচিত। আমিন।
হজ সম্পর্কিত আগের লেখা পড়তে- হজ ফরজ হওয়ার সময় কাল
লেখক : শাইখ শফিকুল ইসলাম, ইসলামি লেখক ও গবেষক, সাবেক প্রিন্সিপাল মারকাজ আবু বাকর সিদ্দীক(রাঃ) কিশোরগঞ্জ।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড