• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

দেশময় আল্লাহর গজব ডেঙ্গু, বন্যার কারণ ও প্রতিকার

  ধর্ম ডেস্ক

৩১ জুলাই ২০১৯, ১২:০৪
দেশ
ছবি : প্রতীকী

আমরা অনেক নেতা নেত্রীর মুখে শুনে থাকি বাংলাদশ এখন অর্থনীতিতে অনেক উন্নত, কেউ না খেয়ে নেই। কথাটা একেবারে ফেলে দেওয়া যায় না। তবে নৈতিক অবক্ষয় কতটা বৃদ্ধি পেয়েছে সেটা পত্র পত্রিকা ও মিডিয়ায় আমরা প্রতিনিয়ত প্রত্যক্ষ করছি। সরকার বাহাদুর ও দায়িত্বশিলগণ! দরিদ্র সীমা আমরা অনেকটা অতিক্রম করেছি তবে চরিত্র সীমা শূন্যের কোটায়। তারপরেও আমরা বলছি, আমরা ভালো আছি, কোথাও কোনো অভাবে নেই। ভিন্নমত থাকলেও দেশ নেতাদের মুখে শোনা যায় দেশ এখন খাদ্যসহ সকল দিকে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এটা কি কোনো শুভ লক্ষণ? আসুন দেখি প্রাচুর্যময় অবস্থা সম্পর্কে মহান মহান স্রষ্টা কী বলেন,

فَلَمَّا نَسُوا مَا ذُكِّرُوا بِهِۦ فَتَحْنَا عَلَيْهِمْ أَبْوٰبَ كُلِّ شَىْءٍ حَتّٰىٓ إِذَا فَرِحُوا بِمَآ أُوتُوٓا أَخَذْنٰهُم بَغْتَةً فَإِذَا هُم مُّبْلِسُون

তাদেরকে যে (কুরআনের) উপদেশ দেওয়া হয়েছিল, তারা যখন তা বিস্মৃত হলো, তখন তাদের জন্য সমস্ত কিছুর দ্বার উন্মুক্ত করে দিলাম। অবশেষে তাদের যা দেওয়া হলো, তাতে তারা মত্ত হলো। (আর্থাৎ, প্রাচুর্যের ভোগ বিলাসে) তখন অকস্মাৎ তাদেরকে পাকড়াও করলাম। ফলে তখনই তারা নিরাশ হয়ে পড়ল। (সূরা- আনআম ৬/৪৪)

فَلَمَّا نَسُوا مَا ذُكِّرُوا بِهِۦٓ أَنجَيْنَا الَّذِينَ يَنْهَوْنَ عَنِ السُّوٓءِ وَأَخَذْنَا الَّذِينَ ظَلَمُوا بِعَذَابٍۭ بَـِٔيسٍۭ بِمَا كَانُوا يَفْسُقُونَ

তাদেরকে যে উপদেশ দেয়া হয় তা যখন তারা বিস্মৃত হয় তখন যারা অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করত তাদেরকে আমি উদ্ধার করি, আর যালিমদেরকে তাদের অসৎ কর্মের কারণে কঠোর শাস্তি দ্বারা পাকড়াও করলাম। (৭ আরাফ ১৬৫)

হে মুসলিম ভাই বোনেরা! কুরআন আমাদের কাছে অবিকৃত অবস্থায় থাকা সত্ত্বেও সেটাকে জানা, বুঝা ও আমল করা থেকে বিরত থাকার ফলে আমরা আল্লাহ তা'আলার আজাবকে দাওয়াত দিচ্ছি। প্রাচুর্যের মোহে আমরা মোহাচ্ছন্ন হয়ে আছি। মহান আল্লাহ বলেন,

أَلْهٰىكُمُ التَّكَاثُرُ

প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদেরকে মোহাচ্ছন্ন করে রাখে,

حَتّٰى زُرْتُمُ الْمَقَابِرَ

যতক্ষণ না তোমরা কাবরসমূহে উপস্থিত হচ্ছ। (তাকাসুর ১০২/১-২)

আল্লাহ পাক যেন আমাদের দেশের সকলের শুভ বুদ্ধির উদয় করেন। আমরা যেন কোনো অবস্থাতেই আল্লাহ পাক ও তাঁর বিধান আল-কুরআনকে ভুলে না যাই। তিনি যেন আমাদের সে তওফিক দান করেন। কারণ তার তাওফিক ছাড়া কিছুই আশা করা যায় না।

কেন আসে গজব ও বিপর্যয় ? এগুলো সব আমাদের হতের কামাই। মহান আল্লাহ বলেন,

ظَهَرَ الْفَسَادُ فِى الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِى النَّاسِ لِيُذِيقَهُم بَعْضَ الَّذِى عَمِلُوا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ

মানুষের কৃতকর্মের কারণে সমুদ্রে ও স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে তাদেরকে কোনো কোনো কর্মের শাস্তি তিনি আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে। (৩০ রুম ৪১)

তবে তিঁনি দয়াময় আমাদের অধিকাংশ অপরাধ ক্ষমাই করে থাকেন। তিঁনি বলেন,

وَمَآ أَصٰبَكُم مِّن مُّصِيبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيكُمْ وَيَعْفُوا عَن كَثِيرٍ

তোমাদের যে বিপদ-আপদ ঘটে তাতো তোমাদেরই কৃতকর্মের ফল এবং তোমাদের অনেক অপরাধ তিনি ক্ষমা করে দেন। (৪২ শুরা ৩০)

তাছাড়া আমাদের বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ হলো পাপাচার। যা এখন সহজলভ্য হয়েছে মিডিয়া তথা ডিজিটালের ছোঁয়ায়! ডিজিটাল ভালো তবে নেতা কর্মীদের অনিহায় অনিয়ন্ত্রিত ব্যাবহার ঠিক নয়। যা উলামায়ে কেরাম সুশীল সমাজ বার বার হুশিয়ার করে আসছে। এখনো সময় আছে দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা অশ্লীলতার স্রোতের মোকাবেলায় এগিয়ে আসুন নইলে শুনুন রাজাধিরাজ কি বলেন-

وَإِذَآ أَرَدْنَآ أَن نُّهْلِكَ قَرْيَةً أَمَرْنَا مُتْرَفِيهَا فَفَسَقُوا فِيهَا فَحَقَّ عَلَيْهَا الْقَوْلُ فَدَمَّرْنٰهَا تَدْمِيرًا

যখন আমি কোন জনপদ ধ্বংস করার ইচ্ছা করি তখন ওর সমৃদ্ধশালী ব্যক্তিদেরকে সৎ কাজ করতে আদেশ করি, কিন্তু তারা সেখানে অসৎ কাজ করে। অতঃপর ওর প্রতি দন্ডাজ্ঞা ন্যায় সঙ্গত হয়ে যায় এবং আমি ওটাকে সম্পূর্ণ রূপে বিধ্বস্ত করি। (১৭ ইসরা ১৬)

বলা-মুসীবত সম্পর্কে কুরআন মাজিদে আরও বেশ কিছু আয়াত আছে। যেমন,

وَلَنُذِيقَنَّهُم مِّنَ الْعَذَابِ الْأَدْنٰى دُونَ الْعَذَابِ الْأَكْبَرِ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ

বড় শাস্তির পূর্বে তাদেরকে আমি অবশ্যই লঘু শাস্তি আস্বাদন করাবো, যাতে তারা ফিরে আসে। (৩২ সাজদা ২১)

উক্ত আয়াতগুলোর দ্বারা বুঝা যায়, মানুষের ওপর আপতিত বিপদসমূহ মানুষের কৃতকর্মের শাস্তি স্বরুপ। এগুলোর কিছু আখিরাতেও আরোপিত হবে। অন্যদিকে আল্লাহ পাক বিপদ দিয়ে এই জগতের মানুষের পরীক্ষা করে থাকেন। এগুলো সবরের সাথে মোকাবিলা করার মধ্যেই আমাদের কল্যাণ নিহিত।

বর্তমানে আমাদের দেশে চলমান অসংখ্য পাপাচার ও অন্যায় কর্মের মধ্যে অন্যতম হলো,

(১) নাস্তিকতা ও আল্লাহ দ্রোহিতা এবং নাস্তিকদের অপরাধের বিরুদ্ধে দায়িত্বশীলদের নিস্ক্রিয়তা।

(২) শিরক। যেমন- মূর্তিপূজা, মূর্তি সংস্কৃতি, স্কুল/কলেজ/ইউনিভার্সিটি/রাস্তার মোড়ে মোড়ে কবর ও মাজার পূজা, পরতন্ত্রের নানাবিধ শিরকী কর্মের মহড়া ইত্যাদি।

(৩) বিদ'আত। আমাদের দেশে বর্তমানে সুন্নাহর স্থান দখল করেছে বিদ'আত! দায়িত্বশিলরা বিদ'আতিদের লালন ও পৃষ্ঠপোষকতা করছে ফলে বিদ'আতের চোরা দরজা দিয়ে সুন্নাহর লিবাসে শিরক প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে।

(৪) বাক স্বাধীনতার ও মুক্তমনার আড়ালে আল্লাহ্‌ তাআলা ও রসূল (সা.) এর দ্বীন ও দ্বীনের বিধিবিধানকে প্রকাশ্যে হেয় প্রতিপন্ন করা ও বৃদ্ধাঙুলি প্রদর্শন করা হচ্ছে।

(৫) নির্বিচারে বিভিন্নভাবে মানুষ হত্যা, খুন, গুমের মতো জুলুমের মাহাউৎসব চলছে!

(৬) উলঙ্গপনা, বেহায়াপনার ও জিনা-ব্যভিচারের প্রতিযোগিতা চলছে দেধাড়ছে।

(৭) গায়ক, নায়ক, নায়িকা আর বাদ্যযন্ত্রের সয়লব।

(৮) পর্ণস্টার, নেশাজাতীয় দ্রব্য আমদানী হওয়ার ফলে খুন দর্শনের মতো পাপ বেড়েই চলেছে।

(৯) তাকওয়া না থাকার ফলে রক্ষক এখন ভক্ষক। যার ফলে জাতীয় সম্পদ লুটপাট, ঘুষ, দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে জাতীয় জীবন!

(১০) মিথ্যার মত জগণ্য পাপ এখন সত্যের স্থান দখল করে বসেছে। ফলে ব্যাবসা বানিজ্য, কোট-কাছারি সর্বস্তরে এখন মিথ্যার জয়জয়কার!

(১১) মহান রবের আইন-কানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ও সে বিধানের বিরুদ্ধে আইন রচনা করে সেসকল মানব রচিত আইনে বিচারকার্য পরিচালনা করে সোষণ করা হচ্ছে।

(১২) সুদভিত্তিক অর্থনীতি এবং ইসলামের নামে বেনামে সুদী কারবার চালু রেখে আল্লাহ তা'আলা ও তার রসূলের সাথে যুদ্ধ ঘোষনা করা হয়েছে!

(১৩) সংখ্যাগরিষ্ট মুসলিমের দেশে ইসলামি সংস্কৃতি বাদ দিয়ে ভিন্নধর্মীদের অপসংস্কৃতি গন্ডি পেরিয়ে ব্যাপক আমদানি ও চর্চা!

(১৪) ডিজিটাল ভালো তবে তার অপব্যবহার রোধের ব্যবস্থা না থাকায় শিশু থেকে বৃদ্ধ সকল শ্রেণির মানুষ এখন পর্ণের ছোবলে চারিত্রিক অধঃপতনের শিকার। এর বড় কারণ চরিত্র ধ্বংসের সকল উপকরণের সহজলভ্যতা।

ফলে স্কুল কলেজ মাদ্রাসার শিক্ষক পুরোহিত প্রশাসন কোথাও আজ নিরাপদ নেই আমাদের কোমলমতি শিশু কিশোর ছেলে মেয়েরা! খবরের কাগজ আর মিডিয়ার খবর দেখলেই বেশিরভাগ খুন, ধর্ষণ আর বলৎকার!

এসব দেখে সত্যি আতঙ্কিত হয়ে উঠতে হয়! যে, সত্যিই কি আমরা আল্লাহ তা'আলার আজাব গজব ও ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছি না? চলমান বিভিন্ন বালা মুসিবত যেমন- ডেঙ্গু, বন্যা, আইলা, সিডর, অগ্নিকাণ্ড এসব আল্লাহ তা'আলার গজবের পূর্বাভাস নয় কি?

হে রাজাধিরাজ করুনার আধার রব! আপনি আমাদের ব্যাপারে আপনার সিদ্ধান্ত (যা আপনি ছাড়া কেউ ফিরাতে পারে না) বাস্তবায়নের করার পূর্বে আমাদেরকে তাওবা করার সুযোগ দিন! আমাদের ক্ষমা করুন। আমাদের নেতৃত্বস্হানীয় সকলের শুভ বুদ্ধির উদয় করুন। আর প্রকৃত মুসলিম হওয়ার আগে আমাদের মৃত্যু দিয়েন না।

আমিন ইয়া রব্বাল আলামীন।

লেখক : মুরাদ বিন আমজাদ, প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মুসলিম উম্মাহ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।

ওডি/এনএম

প্রচলিত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ব্যখ্যা, সমাজের কোন অমীমাংসিত বিষয়ে ধর্মতত্ত্ব, হাদিস, কোরআনের আয়াতের তাৎপর্য কিংবা অন্য যেকোন ধর্মের কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সর্বপরি মানব জীবনের সকল দিকে ধর্মের গুরুত্ব নিয়ে লিখুন আপনিও- [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড