মুনীরুল ইসলাম ইবনু যাকির
হজের ফযিলত
১. হজের মাধ্যমে পূর্ববর্তী সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যায় আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন― مَنْ حَجَّ فَلَمْ يَرْفُثْ ، وَلَمْ يَفْسُقْ ، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ ‘যে ব্যক্তি হজ করে আর তাতে কোনোরূপ অশ্লীল ও অন্যায় আচরণ করে না তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’ [তিরমিযি, আসসুনান, হাদিস নং : ৮১১] অন্য বর্ণনায় রয়েছে―আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, আমি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, منْ حجَّ فَلَم يرْفُثْ، وَلَم يفْسُقْ، رجَع كَيَومِ ولَدتْهُ أُمُّهُ ‘যে ব্যক্তি হজ করল এবং অশ্লীল কথাবার্তা ও গুনাহ থেকে বিরত থাকল, সে ঐ দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে হজ থেকে ফিরে আসবে যেদিন মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ট হয়েছিল।’ [বুখারি, আসসাহিহ : ১৫২১; মুসলিম, আসসাহিহ : ১৩৫০] অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে― عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَسَارٍ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : مَنْ حَجَّ الْبَيْتَ فَقَضَى مَنَاسِكَهُ ، وَسَلِمَ الْمُسْلِمُونَ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ আতা ইবনু ইয়াসার (রহ.) হতে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহর হজ করে, হজের বিধানগুলো যথাযথভাবে আদায় করে, মুসলিমরা তার মুখ ও হাত থেকে নিরাপদ থাকে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। [আবদুর রাযযাক, আলমুসান্নাফ : ৮৮১৭; ইবনু কাসির, তাফসিরুল কুরআনিল আযিম, ১/৩৫৮] আমর ইবনুল আস (রা.) বর্ণনা করেন। দীর্ঘ এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, أَمَا عَلِمْتَ أَنَّ الإِسْلاَمَ يَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهُ؟ وَأَنَّ الْهِجْرَةَ تَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهَا؟ وَأَنَّ الْحَجَّ يَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهُ؟
‘হে আমর! তুমি কি জান না যে, ইসলামগ্রহণ পূর্বেকার যাবতীয় পাপকে মুছে ফেলে। হিজরত তার পূর্ববর্তী পাপসমূহকে মিটিয়ে দেয় এবং হজ অতীতের পাপসমূহ মুছে দেয়?’ [মুসলিম, আসসাহিহ : ১২১; আহমাদ, আলমুসনাদ : ১৭৭৭৭]
২. কবুল হজের বিনিময় হল জান্নাত আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, وَالحَجُّ الـمَبْرُورُ لَيْسَ لَهُ جَزَاءٌ إِلَّا الجَنَّةُ ‘কবুল হজের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়।’ [বুখারি, আসসাহিহ : ১৭৭৩; মুসলিম, আসসাহিহ : ১৩৪৯] আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, تَابِعُوا بَيْنَ الْحَجِّ وَالْعُمْرَةِ، فَإِنَّهُمَا يَنْفِيَانِ الْفَقْرَ وَالذُّنُوبَ، كَمَا يَنْفِي الْكِيرُ خَبَثَ الْحَدِيدِ وَالذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ، وَلَيْسَ لِلْحَجَّةِ الْمَبْرُورَةِ ثَوَابٌ إِلَّا الْجَنَّةُ ‘তোমরা হজ ও উমরা পরপর একত্রে পালন করো। কেননা এ দুটি দারিদ্র ও গুনাহসমূহ এমনভাবে দূর করে দেয় যেমন হাপর লোহা ও সোনা-রূপার ময়লা দূর করে দেয়। আর কবুল হজের বিনিময় তো জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়।’ [তিরমিযি, আসসুনান : ৮১০; আহমাদ, আলমুসনাদ : ৩৬৬৯]
৩. কবুল হজ সর্বোত্তম আমলের অন্তর্ভূক্ত আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হল, ‘সর্বোত্তম আমল কোনটি?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ঈমান আনা।’ জিজ্ঞাসা করা হল, ‘তারপর কোনটি?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহর পথে জিহাদ করা।’ জিজ্ঞাসা করা হল, ‘তারপর কোনটি?’ তিনি বললেন, ‘হজ্জে মাবরুর বা কবুল হজ।’ [বুখারি, আসসাহিহ : ২৬; মুসলিম, আসসাহিহ : ৮৩] عَنْ مَاعِزٍ ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ سُئِلَ : أَيُّ الْأَعْمَالِ أَفْضَلُ ؟ قَالَ : إِيمَانٌ بِاللَّهِ وَحْدَهُ ، ثُمَّ الْجِهَادُ ، ثُمَّ حَجَّةٌ بَرَّةٌ تَفْضُلُ سَائِرَ الْعَمَلِ كَمَا بَيْنَ مَطْلَعِ الشَّمْسِ إِلَى مَغْرِبِهَا মায়িয (রা.) থেকে বর্ণিত। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হল, ‘কোন আমল সর্বোত্তম?’ তিনি বললেন, ‘এক আল্লাহ তায়ালার প্রতি ঈমান আনা। এরপর হলো জিহাদ। এরপর হলো কবুল হজ। (আর কবুল হজ) অন্যান্য আমল হতে এত মর্যাদাপূর্ণ যেরূপ সূর্যের উদয়াচল হতে অস্তাচলের ব্যবধান। [আহমাদ, আলমুসনাদ : ১৯০১০; হাইসামি, মাজমাউয যাওয়ায়িদ : ৫২৬৩]
৪. নারীদের জিহাদ হল হজ-উমরা আম্মাজান আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত। একদা তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করলেন, يَا رَسُولَ اللَّهِ ، نَرَى الْجِهَادَ أَفْضَلَ الْعَمَلِ ، أَفَلَا نُجَاهِدُ؟ ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমরা তো জিহাদকে সর্বোত্তম আমল মনে করি। আমরা কি জিহাদ করব না?’ তিনি বললেন, ‘না। বরং নারীদের জন্য সর্বোত্তম জিহাদ হল কবুল হজ। [বুখারী, আসসাহিহ : ১৫২০; আহমাদ, আলমুসনাদ : ২৪৪২২]
অন্য বর্ণনায় রয়েছে―আয়িশা (রা.) বলেন, আমি বললাম, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমরা কি আপনাদের সাথে জিহাদ করব না?’ তিনি বললেন, ‘তোমাদের জন্য উত্তম জিহাদ হল হজ।’ আয়িশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাললাম থেকে এ কথা শুনার পর হতে আমি হজ ছাড়িনি। [বুখারী, আসসাহিহ : ১৮৬১; আহমাদ, আলমুসনাদ : ২৪৪৯৭]
৫. হাজিদের দুয়া কবুল হয় জাবির রা. বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেছেন― الْحُجَّاجُ وَالْعُمَّارُ وَفْدُ اللَّهِ ، دَعَاهُمْ فَأَجَابُوهُ ، وَسَأَلُوهُ فَأَعْطَاهُمْ ‘হাজি ও উমরাকারীগণ আল্লাহর প্রতিনিধি দল। তারা দুয়া করলে কবুল করা হয়, কিছু চাইলে দেওয়া হয়।’ [বাযযার, আলমুসনাদ : ১১৫৩; হাইসামি, মাজমাউয যাওয়ায়িদ : ৫২৮৮]
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড