ধর্ম ডেস্ক
আমাদের দেশে ইসলামি দল মতো তরিকা ও পথের অভাব নেই। প্রত্যেক দলই নিজেদের হক ও মুক্তিপ্রাপ্ত দল মনে মনে করে। মহান আল্লাহ বলেন,
مِنَ الَّذِیۡنَ فَرَّقُوۡا دِیۡنَہُمۡ وَ کَانُوۡا شِیَعًا ؕ کُلُّ حِزۡبٍۭ بِمَا لَدَیۡہِمۡ فَرِحُوۡنَ ﴿۳۲﴾
যারা নিজদের দীনকে বিভক্ত করেছে এবং যারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে (তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না)। প্রত্যেক দলই নিজদের যা আছে তা নিয়ে আনন্দিত। ( রুম ৩০/৩২) তথা কথিত পির মাশায়েক সংগঠক বিভিন্নভাবে নিজ নিজ মত পথ ইসলামের লেভেল লাগিয়ে পির মুরিদ আমির মামুর বানিয়ে যার য়ার বিভক্ত দলের দিকে আহ্বান করছে।
সাধারণ জনগণ এখন কিংকর্তব্য বিমুড়! তারা এখন হতাশায় পড়ে যাবে আর বলছে "ইসলসমি দল হালি হালি ফিরকা করেছে আমি কোনদিকে যাই, পড়ে আছি গোলক ধাঁধাতে" আর এগুলোর মূল কারণ হলো ইসলাম সম্পার্কে সঠিক ইলম না থাকা। আসুন আমরা জেনে নিই সত্যিকারে নাজাত তথা মুক্তিপ্রাপ্ত জান্নাতের হকদার কোনটি? আর বিষয়ে সর্বপ্রথম জানা ওয়াজিব-
(১) বান্দার উপর সর্বপ্রথম ওয়াজিব কোনটি?
বান্দার উপর সর্বপ্রথম ওয়াজিব হচ্ছে, তাদেরকে আল্লাহ তা’আলা যে উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন, তাদের থেকে যে বিষয়ের অঙ্গীকার নিয়েছেন, যে বিষয় দিয়ে রাসূল প্রেরণ করেছেন এবং কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, সে সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা। এ বিষয়টির জন্যই আল্লাহ্ তাআলা দুনিয়া-আখেরাত, জান্নাত-জাহান্নাম সৃষ্টি করেছেন।
এর জন্যেই কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবে, দাড়িপাল্লা স্থাপন করা হবে, আমলনামা প্রদান করা হবে। এ বিষয়টির কারণেই কেউ সৌভাগ্যবান হবে আবার কেউ হবে হতভাগা। এ অনুযায়ী কিয়ামতের দিন নূর বন্টিত হবে। সেদিন আল্লাহ যাকে নূর দান করবেন না, তার কোন নূর থাকবে না।
(২) সুতরাং ঐ বিষয়টি কি, যার জন্য আল্লাহ্ তাআ’লা মানুষ সৃষ্টি করেছেন?
আল্লাহ তা’আলা মানুষ ও জিন জাতিকে পৃথিবীতে তাঁর একত্ববাদ ও ইবাদত প্রতিষ্ঠা করার জন্যে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ্ তাআ’লা বলেন-
وَمَا خَلَقْنَا السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا لاَعِبِينَ * مَا خَلَقْنَاهُمَا إِلاَّ بِالْحَقِّ وَلَكِنَّ أَكْثَرَهُمْ لاَ يَعْلَمُونَ
‘‘আমি নভোমন্ডল, ভূমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবতী সবকিছু ক্রীড়াচ্ছলে সৃষ্টি করিনি। আমি আকাশ ও পৃথিবী যথাযথভাবে সৃষ্টি করেছি। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা বুঝে না’’। (সূরা আদ্ দুখানঃ ৩৮-৩৯) আল্লাহ তাআ’লা বলেন-
وَمَا خَلَقْنَا السَّمَاءَ وَالأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا بَاطِلاً ذَلِكَ ظَنُّ الَّذِينَ كَفَرُوا
‘‘আমি আকাশ ও পৃথিবী এবং এতদুভয়ের মধ্যে যা আছে তা অযথা সৃষ্টি করি নি। এটা কাফেরদের ধারণা মাত্র’’। (সূরা সোয়াদাঃ ২৭) আল্লাহ তাআ’লা বলেন-
وَخَلَقَ اللَّهُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ بِالْحَقِّ وَلِتُجْزَى كُلُّ نَفْسٍ بِمَا كَسَبَتْ وَهُمْ لاَ يُظْلَمُونَ
‘‘আল্লাহ আকাশ ও পৃথিবী যথাযথভাবে সৃষ্টি করেছেন এবং যাতে প্রত্যেক ব্যক্তি তার উপার্জনের ফল পায়। তাদের প্রতি যুলুম করা হবে না’’। (সূরা জাসিয়াঃ ২২) আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেন-
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالإِنسَ إِلاَّ لِيَعْبُدُونِ
‘‘আর আমি জিন এবং মানবকে কেবল আমার ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছি’’। (সূরা যারিয়াতঃ ৫৬)
(৩) আব্দ অর্থ কি?
আব্দ দ্বারা যদি অধিনস্ত উদ্দেশ্য হয়, তাহলে আসমান-যমীনের সকল জ্ঞানবান ও জ্ঞানহীন, তাজা-শুকনা, চলমান-স্থির, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য কাফের-মুমিন, সৎ-অসৎ সব কিছুই উদ্দেশ্য। সবই আল্লাহর সৃষ্টি, আল্লাহ কর্তৃক প্রতিপালিত, তাঁর অধিনস্ত, তাঁর পরিচালনাধীন। প্রত্যেক সৃষ্টির জন্য নির্দিষ্ট একটি গন্তব্যস্থল রয়েছে। সেখানে গিয়ে তার যাত্রা শেষ হবে। প্রত্যেকেই নির্দিষ্ট একটি সময়ের উদ্দেশ্যে চলমান। তার জন্যে নির্ধারিত সীমা ছেড়ে একটি সরিষার দানা পরিমাণ স্থানও অতিক্রম করতে পারবে না। আল্লাহ তা’আলা বলেন-
ذَلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ
‘‘আর এটি হল মহা পরাক্রমশালী ও মহাজ্ঞানী আল্লাহর নির্ধারণ’’। (সূরা ইয়াসীনঃ ৩৮)
আর আব্দ দ্বারা যদি ইবাদতকারী, অনুগত ও প্রিয় উদ্দেশ্য হয় তাহলে আব্দ অর্থ হবে আল্লাহর সম্মানিত মুমিন ব্যক্তিগণ। তারা হবেন আল্লাহর পরহেজগার বন্ধু। তাদের কোন ভয় নেই। আর তারা চিন্তিতও হবে না।
(৪) ইবাদত কাকে বলে?
আল্লাহ তা’আলা বান্দার যেসমস্ত প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য কথা ও কাজকে ভালবাসেন ও পছন্দ করেন এবং যে সমস্ত বিষয় আল্লাহর ভালবাসা ও পছন্দের বিপরীত ও পরিপন্থী, তা থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করার নামই ইবাদত।
(৫) বান্দার আমল কখন ইবাদতে পরিণত হয়?
আমলের মধ্যে যখন দু’টি বস্ত্ত পরিপূর্ণ অবস্থায় পাওয়া যাবে তখন তা এবাদতে পরিণত হবে। (১) আল্লাহকে পরিপূর্ণরূপে ভালবাসা এবং (২) আল্লাহর সামনে পরিপূর্ণভাবে বিনয় ও আনুগত্য প্রকাশ করা। আল্লাহ তাআ’লা বলেন-
وَالَّذِينَ آمَنُوا أَشَدُّ حُبًّا لِلَّه
‘‘আর যারা ঈমানদার, তারা আল্লাহ্কে সবচেয়ে বেশী ভালবাসে’’। (সূরা বাকারাঃ ১৬৫) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন-
إِنَّ الَّذِينَ هُمْ مِنْ خَشْيَةِ رَبِّهِمْ مُشْفِقُونَ
‘‘নিশ্চয়ই মুমিনগণ তাদের পালনকর্তার ভয়ে সদা সন্ত্রস্ত থাকে’’। (সূরা মুমিনূনঃ ৫৭) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন-
إِنَّهُمْ كَانُوا يُسَارِعُونَ فِي الْخَيْرَاتِ وَيَدْعُونَنَا رَغَبًا وَرَهَبًا وَكَانُوا لَنَا خَاشِعِينَ
‘‘তারা সৎকর্মে ঝাঁপিয়ে পড়ত, আশা ও ভীতি সহকারে আমাকে ডাকত এবং তারা ছিল আমার কাছে বিনীত’’। (সূরা আম্বীয়া- ৯০)
(৬) বান্দা যে আল্লাহ্কে ভালবাসে, তার আলামত কী?
বান্দা কর্তৃক আল্লাহকে ভালবাসার প্রমাণ হলো, সে আল্লাহর প্রিয় বস্ত্তকে ভালবাসবে এবং আল্লাহ যা অপছন্দ করেন, সে তা অপছন্দ করবে। আল্লাহর আদেশ মেনে চলবে এবং তাঁর নিষেধ থেকে দূরে থাকবে। আল্লাহর বন্ধুদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করবে এবং আল্লাহর শত্রুদেরকে শত্রু মনে করবে। এ জন্যই আল্লাহর জন্য কাউকে ভালবাসা এবং আল্লাহর জন্যই কাউকে ঘৃণা করা ঈমানের সবচেয়ে মজবুত হাতল।
চলবে...
লেখক : মুরাদ বিন আমজাদ, প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মুসলিম উম্মাহ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।
ওডি/এনএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড