• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

রমজানের শেষ সাত দিনের গুরুত্ব (পর্ব- ১)

  ধর্ম ডেস্ক

০১ জুন ২০১৯, ০৯:৫৩
লাইলাতুল কদর
ছবি : প্রতীকী

আসুন আমরা জেনে নিই রমজানের শেষ সাত দিনের ফজিলত। এ মর্মে ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত যে-

«أَنَّ رِجَالًا مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أُرُوا لَيْلَةَ القَدْرِ فِي المَنَامِ فِي السَّبْعِ الأَوَاخِرِ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَرَى رُؤْيَاكُمْ قَدْ تَوَاطَأَتْ فِي السَّبْعِ الأَوَاخِرِ، فَمَنْ كَانَ مُتَحَرِّيهَا فَلْيَتَحَرَّهَا فِي السَّبْعِ الأَوَاخِرِ».

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কতিপয় সাহাবীকে স্বপ্নযোগে রমজানের শেষের সাত রাতে লাইলাতুল কদর দেখানো হয়। (এ কথা শোনে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমাকেও তোমাদের স্বপ্নের অনুরূপ দেখানো হয়েছে। (তোমাদের দেখা ও আমার দেখা) শেষ সাত দিনের ক্ষেত্রে মিলে গেছে। অতএব, যে ব্যক্তি এর সন্ধান প্রত্যাশী, সে যেন শেষ সাত রাতে সন্ধান করে।” [১]

ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

«الْتَمِسُوهَا فِي الْعَشْرِ الْأَوَاخِرِ يَعْنِي لَيْلَةَ الْقَدْرِ فَإِنْ ضَعُفَ أَحَدُكُمْ أَوْ عَجَزَ، فَلَا يُغْلَبَنَّ عَلَى السَّبْعِ الْبَوَاقِي».

“তোমরা রমজানের শেষ দশদিনে কদরের রাত অনুসন্ধান কর। তোমাদের কেউ যদি দুর্বল অথবা অপারগ হয়ে পড়ে, তবে সে যেন শেষ সাত রাতে অলসতা না করে”। [২] রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদর তালাশ করতে আদেশ করেছেন। ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

«التَمِسُوهَا فِي العَشْرِ الأَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ لَيْلَةَ القَدْرِ، فِي تَاسِعَةٍ تَبْقَى، فِي سَابِعَةٍ تَبْقَى، فِي خَامِسَةٍ تَبْقَى».

“তোমরা তা (লাইলাতুল কদর) রমজানের শেষ দশকে তালাশ কর। লাইলাতুল কদর (শেষ দিক থেকে গনণায়) নবম, সপ্তম বা পঞ্চম রাত অবশিষ্ট থাকে।” [৩]

বুখারীর অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

«هِيَ فِي العَشْرِ الأَوَاخِرِ، هِيَ فِي تِسْعٍ يَمْضِينَ، أَوْ فِي سَبْعٍ يَبْقَيْنَ».

“তা শেষ দশ দিনে, তা অতিবাহিত নবম রাতে অথবা অবশিষ্ট সপ্তম রাতে অর্থাৎ লাইলাতুল কদর”। [৪ ]

উয়াইনা ইবন আবদুর রহমান বলেন, আমার পিতা আবদুর রহমান বলেন,

«ذُكِرَتْ لَيْلَةُ القَدْرِ عِنْدَ أَبِي بَكْرَةَ فَقَالَ: مَا أَنَا مُلْتَمِسُهَا لِشَيْءٍ سَمِعْتُهُ مِنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلاَّ فِي العَشْرِ الأَوَاخِرِ، فَإِنِّي سَمِعْتُهُ يَقُولُ: التَمِسُوهَا فِي تِسْعٍ يَبْقَيْنَ، أَوْ فِي سَبْعٍ يَبْقَيْنَ، أَوْ فِي خَمْسٍ يَبْقَيْنَ، أَوْ فِي ثَلاَثِ أَوَاخِرِ لَيْلَةٍ، وَكَانَ أَبُو بَكْرَةَ يُصَلِّي فِي العِشْرِينَ مِنْ رَمَضَانَ كَصَلاَتِهِ فِي سَائِرِ السَّنَةِ، فَإِذَا دَخَلَ العَشْرُ اجْتَهَدَ».

“আবু বাকরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কাছে একবার লাইলাতুল কদর সম্পর্কে আলোচনা হলো। তিনি বললেন, আমি লাইলাতুল ক্বাদর রামাযানের শেষ দশ দিন ছাড়া অন্য কোনো রাতে অনুসন্ধান করব না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে একটি বাণী শোনার কারণে; কারণ আমি তাকে বলতে শুনেছি যে, তোমরা এ রাতটিকে রমজানের নয় দিন বাকী থাকতে বা সাত দিন বাকী থাকতে বা পাঁচ দিন বাকী থাকতে বা তিন দিন বাকী থাকতে বা এর শেষ রাতে অন্বেষণ কর। বর্ণনাকারী বলেন, আবু বাকরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রামাযানের বিশ দিন পর্যন্ত অন্যান্য সুন্নাতের মতোই সালাত আদায় করতেন। কিন্তু শেষ দশ দিনের ক্ষেত্রে খুবই প্রচেষ্টা চালাতেন।” [৫]

আব্দুল্লাহ ইবন উনাইস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,

«قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّ لِي بَادِيَةً أَكُونُ فِيهَا، وَأَنَا أُصَلِّي فِيهَا بِحَمْدِ اللَّهِ، فَمُرْنِي بِلَيْلَةٍ أَنْزِلُهَا إِلَى هَذَا الْمَسْجِدِ، فَقَالَ: «انْزِلْ لَيْلَةَ ثَلَاثٍ وَعِشْرِينَ».

“আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি এক গ্রামে থাকি এবং সেখানে আলহামদুলিল্লাহ সালাত আদায় করি। অতএব, আমাকে লাইলাতুল কদরের সংবাদ দিন সে রাতে এ মসজিদে এসে সালাত আদায় করব। তিনি বললেন, তুমি তেইশ তারিখ রাতে এসো”। [৬]

কেউ কেউ চব্বিশ রমযান রাতে লাইলাতুল কদর তালাশ করে থাকেন। এটি আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ও হাসান রহ. এর মত। হাসান রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি সূর্যকে বিশ বছর যাবত পর্যবেক্ষণ করেছি। আর চব্বিশে রমযান সূর্য উদিত হয় কিন্তু এর আলোকরশ্মি থাকে না।

ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে অনুরূপ বর্ণনা আছে, ইমাম বুখারী তা উল্লেখ করেছেন, তবে তিনি বলেছেন : ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে সঠিক বর্ণনা হলো তেইশ তারিখ দিবাগত রাত। আইঊব সাখতিয়ানী রহ. তেইশে রমযান রাতে গোসল করতেন, আর চব্বিশে রমযান সুগন্ধি ব্যবহার করতেন। তিনি বলতেন, তেইশে রমযান মদীনাবাসীর রাত আর চব্বিশে রমযান বসরাবাসীর রাত।

লাইলাতুল কদরের ব্যাপারে আলেমগণ মতানৈক্য করেছেন। জমহুর আলেমের মতে এটি রমজানের শেষ দশকে। সহীহ হাদীসসমূহ এ মতটিই প্রমাণ করে। তবে শেষ দশকের কোন রাতটি বেশি সম্ভাবনাময় সে ব্যাপারে তারা মতানৈক্য করেছেন। হাসান ও মালিক রহ. থেকে বর্ণিত, তারা বলেন, শেষ দশ দিনের সব রাতেই লাইলাতুল কদর তালাশ করতে হবে। এ মতটি আমাদের অনেক আলেম গ্রহণ করেছেন।

তবে অধিকাংশ আলিমের মতে, শেষ দশ দিনের কতিপয় রাত লাইলাতুল কদরের সম্ভাবনাময় রাত। অতঃপর তারা বলেছেন : বেজোড় রাতগুলোই বেশি সম্ভাবনাময়। নির্দিষ্ট কোনো রাত সে ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে স্পষ্ট বাণী নেই। লাইলাতুল কদরের রাত নির্ধারণ না করার হিকমত (আল্লাহই ভালো জানেন) মুমিনগণ যাতে এ রাতগুলোতে বেশি বেশি ইবাদত করতে পারে। তাই রমজানের শেষ দশকের প্রতিটি রাতকেই লাইলাতুল কদর বলা হয়। লাইলাতুল কদর পাওয়ার আশায় এ শেষ দশকের প্রতিটি রাতে ইবাদতে কঠোর পরিশ্রম করা ও ই‘তিকাফ করা দ্বারা এটিই প্রমাণিত হয়।

[১] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০১৫, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৬৫। [২] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৬৫। [৩] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০২১। [৪] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০২২। [৫] তিরমিযী, ৭৯৪, ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন, হাদীসটি হাসান সহীহ। ইবন হিব্বান, ৩৬৮৬, শু‘য়াইব আরনাঊত বলেছেন, হাদীসের সনদটি সহীহ। মুসতাদরাকে হাকিম, ১৫৯৮, ইমাম হাকিম রহ. বলেছেন, হাদীসটির সনদ সহীহ, তবে ইমাম বুখারী ও মুসলিম রহ. তাখরিজ করেননি। [৬] আবু দাউদ, হাদীস নং ১৩৮০, আলবানী রহ. হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন।

লাইলাতুল কদরের সর্বাধিক সম্ভাবনাময় রাত -

রমজানের সাতাশ তারিখ লাইলাতুল কদরের সর্বাধিক সম্ভাবনাময় রাত। সহীহ মুসলিমে উবাই ইবন কা‘ব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি লাইলাতুল কদর সম্পর্কে বলেন,

«وَاللهِ إِنِّي لَأَعْلَمُهَا، وَأَكْثَرُ عِلْمِي هِيَ اللَّيْلَةُ الَّتِي أَمَرَنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِقِيَامِهَا هِيَ لَيْلَةُ سَبْعٍ وَعِشْرِينَ».

“আল্লাহর কসম আমি এ রাত (লাইলাতুল কদর) সম্পর্কে অধিক জানি। আমার অধিক জ্ঞান হলো, এটি সে রাত যে রাতে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সালাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। আর এটি সাতাশ তারিখের রাত।” [১]

যির ইবন হুবাইশ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি উবাই ইবন কা‘ব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বললাম,

«إِنَّ أَخَاكَ ابْنَ مَسْعُودٍ يَقُولُ: مَنْ يَقُمِ الْحَوْلَ يُصِبْ لَيْلَةَ الْقَدْرِ؟ فَقَالَ رَحِمَهُ اللهُ: أَرَادَ أَنْ لَا يَتَّكِلَ النَّاسُ، أَمَا إِنَّهُ قَدْ عَلِمَ أَنَّهَا فِي رَمَضَانَ، وَأَنَّهَا فِي الْعَشْرِ الْأَوَاخِرِ، وَأَنَّهَا لَيْلَةُ سَبْعٍ وَعِشْرِينَ، ثُمَّ حَلَفَ لَا يَسْتَثْنِي، أَنَّهَا لَيْلَةُ سَبْعٍ وَعِشْرِينَ، فَقُلْتُ: بِأَيِّ شَيْءٍ تَقُولُ ذَلِكَ؟ يَا أَبَا الْمُنْذِرِ، قَالَ: بِالْعَلَامَةِ، أَوْ بِالْآيَةِ الَّتِي أَخْبَرَنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهَا تَطْلُعُ يَوْمَئِذٍ، لَا شُعَاعَ لَهَا».

“আপনার ভাই আব্দুল্লাহ ইবন মাস‘উদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, যে ব্যক্তি গোটা বছর রাত জাগরণ করে সে কদরের রাতের সন্ধান পাবে। তিনি (উবাই) বললেন, আল্লাহ তাকে রহম করুন, এর দ্বারা তিনি একথা বুঝাতে চাচ্ছেন যে, লোকেরা যেন কেবল একটি রাতের ওপর ভরসা করে বসে না থাকে। অথচ তিনি অবশ্যই জানেন যে, তা রমযান মাসে শেষের দশ দিনের মধ্যে এবং ২৭তম রজনী। অতঃপর তিনি শপথ করে বললেন! তা ২৭তম রজনী। আমি (যির) বললাম, হে আবুল মুনযির! আপনি কিসের ভিত্তিতে তা বলছেন? তিনি বললেন, বিভিন্ন আলামত ও নিদর্শনের ভিত্তিতে যে সস্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের অবহিত করেছেন। যেমন, সেদিন সূর্য উঠবে কিন্তু তাতে আলোক রশ্মি থাকবে না।” [২]

চলবে...

লেখক : মুরাদ বিন আমজাদ, প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মুসলিম উম্মাহ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।

ওডি/এনএম

প্রচলিত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ব্যখ্যা, সমাজের কোন অমীমাংসিত বিষয়ে ধর্মতত্ত্ব, হাদিস, কোরআনের আয়াতের তাৎপর্য কিংবা অন্য যেকোন ধর্মের কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সর্বপরি মানব জীবনের সকল দিকে ধর্মের গুরুত্ব নিয়ে লিখুন আপনিও- [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড