• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

রমজানের শেষ দশ দিনের ফজিলত (পর্ব- ১)

  লাইফস্টাইল ডেস্ক

২৭ মে ২০১৯, ১১:২২
রমজান
ছবি : প্রতীকী

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

«كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دَخَلَ العَشْرُ شَدَّ مِئْزَرَهُ، وَأَحْيَا لَيْلَهُ، وَأَيْقَظَ أَهْلَهُ».

“যখন রমজানের শেষ দশক আসতো তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর লুঙ্গি কষে নিতেন (বেশি বেশি ইবাদতের প্রস্তুতি নিতেন বা স্ত্রীদের থেকে দূরে থাকতেন) এবং রাত্রে জেগে থাকতেন ও পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন।”

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন,

«كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَجْتَهِدُ فِي الْعَشْرِ الْأَوَاخِرِ، مَا لَا يَجْتَهِدُ فِي غَيْرِهِ».

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যান্য সময়ের তুলনায় রমযানের শেষ দিকে অধিক পরিমাণে এমনভাবে সচেষ্ট থাকতেন যা অন্য সময়ে থাকতেন না।”

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষ দশকে এত পরিমাণ আমল করতেন যা তিনি অন্য কোনো মাসে করতেন না। তাঁর আমলসমূহের মধ্যে অন্যতম আমল হলো :

রাত্রি জাগরণ :

তাঁর আমলসমূহের মধ্যে অন্যতম ছিল রাত জাগা।

রাত্রি জাগরণের আরেক অর্থ হতে পারে রাতের অধিকাংশ সময় জেগে ইবাদত করতেন। এক বর্ণনায় এসেছে, যে ব্যক্তি অর্ধরাত জাগ্রত থেকে ইবাদত করল সে যেন পুরো রাত জেগে ইবাদত করল। সহীহ মুসলিমে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«وَمَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَامَ لَيْلَةً حَتَّى الصَّبَاحِ».

“আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সকাল পর্যন্ত জেগে ইবাদত করতে দেখি নি।”

ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কেউ জামা‘আতের সাথে ইশার সালাত আদায় করে ফজরের সালাত জামা‘আতের সাথে আদায় করার দৃঢ় ইচ্ছা থাকলে তার সারারাত জাগরণের সাওয়াব অর্জিত হবে।

ইমাম শাফে‘ঈ রহ. বলেন, কেউ ইশা ও ফজরের সালাতের জামা‘আতে উপস্থিত হলে সে লাইলাতুল কদরের অংশ প্রাপ্ত হবে। ইবন মুসাইয়্যেব থেকে ইমাম মালিকের থেকেও অনুরূপ বর্ণনা পাওয়া যায়।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে মারফু‘ সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি ইশার সালাত জামা‘আতের সাথে আদায় করবে সে লাইলাতুল কদর প্রাপ্ত হবে।

আবু জা‘ফর মুহাম্মাদ ইবন আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে মারফু‘ সুত্রে বর্ণনা করেন,

«مَنْ أَتَى عَلَيْهِ شَهْرُ رَمَضَانَ صَحِيحًا مُسْلِمًا، صَامَ نَهَارَهُ، وَصَلَّى وِرْدًا مِنْ لَيْلِهِ، وَغَضَّ بَصَرَهُ، وَحَفِظَ فَرْجَهُ وَلِسَانَهُ وَيَدَهُ، وَحَافَظَ عَلَى صَلَاتِهِ مَجْمُوعَةً، وَبَكَّرَ إِلَى جُمَعِهِ، فَقَدْ صَامَ الشَّهْرَ، وَاسْتَكْمَلَ الْأَجْرَ، وَأَدْرَكَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ، وَفَازَ بِجَائِزَةِ الرَّبِّ».

“যে ব্যক্তি সুস্থ ও মুসলিম অবস্থায় রমযান পেয়ে দিনের বেলায় সাওম পালন করল, রাতের বেলায় সালাতে কুরআন তিলাওয়াত করল, চক্ষু অবনমিত রাখল, নিজের লজ্জাস্থান, যবান ও হাত হিফাযত করল, জামা‘আতের সাথে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করল ও খুব তাড়াতাড়ি জুম‘আত সালাতে গেল, তাহলে সে যথাযথভাবে সাওম পালন করল, পুরোপুরি সাওয়াব প্রাপ্ত হবে, লাইলাতুল কদর লাভ করবে এবং তার রবের পুরস্কার প্রাপ্ত হয়ে সফলকাম হবে।

ইমাম আবু জা‘ফর রহ. বলেন, এ পুরষ্কার দুনিয়ার রাজা-বাদশার পুরস্কারের সাথে সাদৃশ নয় (বরং এটি মহান রবের বিশেষ পুরস্কার)।

পরিবারের লোকদেরকে জাগানো :

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষ দশকে তাঁর পরিবার-পরিজনকে সালাতের জন্য জাগাতেন, যা তিনি অন্য মাসে করতেন না। আবু যার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, “রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তেইশ, পঁচিশ ও সাতাশ রমযান তার পরিবারকে সালাতের জন্য জাগাতেন।

আরও বর্ণিত আছে যে, তিনি বিশেষ করে সাতাশ রমযান তাঁর পরিবার-পরিজনকে সালাতের জন্য আহ্বান করতেন। এটি প্রমাণ করে যে, যে সময় লাইলাতুল কদর হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা তিনি সেসময় তাদেরকে জাগিয়ে দিতেন।

«أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُوقِظُ أَهْلَهُ فِي العَشْرِ الأَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ».

“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষ দশ দিন তার পরিবারের লোকদেরকে জাগাতেন”।

সুফইয়ান সাওরী রহ. বলেন, আমার কাছে সর্বাধিক প্রিয় কাজ হলো রমযানের শেষ দশ দিন আসলে রাতে বেশি পরিমাণ তাহাজ্জুদ পড়া, এতে কঠোর অধ্যাবসয়ী হওয়া, পরিবার-পরিজন ও সন্তানদেরকে সম্ভব হলে জাগিয়ে দেওয়া।

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাতিমা ও আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার দরজায় কড়া নাড়তেন এবং বলতেন, তোমরা কি উঠেছ ও সালাত আদায় করেছ? তিনি রাতের বেলায় তাহাজ্জুদ সালাত শেষে বিতরের সালাত আদায় করার সময় আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে জাগাতেন। তারগীবে বর্ণিত আছে, তিনি তাঁর এক স্ত্রীকে সালাতের জন্য জাগিয়েছেন এবং তার চেহারায় পানির ছিটা দিয়েছেন।

মুয়াত্তায় বর্ণিত আছে,

أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ كَانَ يُصَلِّي مِنَ اللَّيْلِ مَا شَاءَ اللهُ. حَتَّى إِذَا كَانَ مِنْ آخِرِ اللَّيْلِ، أَيْقَظَ أَهْلَهُ لِلصَّلاَةِ. يَقُولُ لَهُمُ: الصَّلاَةَ، الصَّلاَةَ. ثُمَّ يَتْلُو هذِهِ الآيَةَ: ﴿وَأۡمُرۡ أَهۡلَكَ بِٱلصَّلَوٰةِ وَٱصۡطَبِرۡ عَلَيۡهَا١٣٢﴾ [طه: ١٣٢]

“উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাতে যতটুকু সম্ভব সালাত আদায় করতেন। রাতের শেষাংশ হলে তিনি তার পরিবারের লোকদেরকে সালাতের জন্য জাগাতেন এবং বলতেন, সালাত, সালাত। অতঃপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করতেন :

﴿وَأۡمُرۡ أَهۡلَكَ بِٱلصَّلَوٰةِ وَٱصۡطَبِرۡ عَلَيۡهَا١٣٢﴾ [طه: ١٣٢]

“আর তোমার পরিবার-পরিজনকে সালাত আদায়ের আদেশ দাও এবং নিজেও তার ওপর অবিচল থাক”। [সূরা ত্বা-হা, আয়াত: ১৩২]

চলবে...

লেখক : মুরাদ বিন আমজাদ, প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মুসলিম উম্মাহ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।

ওডি/এনএম

প্রচলিত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ব্যখ্যা, সমাজের কোন অমীমাংসিত বিষয়ে ধর্মতত্ত্ব, হাদিস, কোরআনের আয়াতের তাৎপর্য কিংবা অন্য যেকোন ধর্মের কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সর্বপরি মানব জীবনের সকল দিকে ধর্মের গুরুত্ব নিয়ে লিখুন আপনিও- [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড