ধর্ম ডেস্ক
ইতিকাফ কী? এর হুকুম কী?
দুনিয়াবী সকল কাজ থেকে মুক্ত হয়ে সম্পূর্ণ আল্লাহর ইবাদতের জন্য মসজিদে অবস্থান করাকে ইতিকাফ বলা হয়ে থাকে। ইতিকাফ করা সুন্নাত।
ইতিকাফের জন্য কী কী শর্ত পূরণ আবশ্যক?
(ক) মুসলমান হওয়া (খ) জ্ঞান থাকা (গ) বড় নাপাকী থেকে পবিত্র থাকা, গোসল ফরয হলে গোসল করে নেয়া। (ঘ) মসজিদে ইতিকাফ করা।
কাজেই কাফির-মুশরিক, অবুঝ শিশু, পাগল ও অপবিত্র লোক এবং হায়েয-নিফাস অবস্থায় নারীদের ই‘তিকাফ শুদ্ধ হবে না।
ইতিকাফের রুকন কয়টি ও কী কী?
এর রুকন ২টি :
(ক) নিয়ত করা (খ) মাসজিদে অবস্থান করা, নিজ বাড়ীতে বা অন্য কোথাও ই‘তিফাক করলে তা শুদ্ধ হবে না।
ইতিকাফ কখন শুরু ও শেষ করব?
ফযরের সালাত আদায় করে বা সূর্যাস্তের পর ই‘তিকাফে প্রবেশ করা সুন্নাত/মুস্তাহাব। আর শেষ করবে ঈদের চাঁদ দেখা গেলে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনটিই করতেন।
ইতিকাফ অবস্থায় কী কী কাজ নিষিদ্ধ?
(১) স্বামী স্ত্রীর মিলন, স্ত্রীকে চুম্বন ও স্পর্শ করা,
(২) মাসজিদ থেকে বের হওয়া। বেচাকেনা, চাষাবাদ, এমনকি রোগীর সেবা ও জানাযায় অংশ গ্রহণের জন্যও মাসজিদ থেকে বের হওয়া জায়েয নয়। বের হলে ইতেকাফ বাতিল হয়ে যাবে।
ইতিকাফ অবস্থায় কী কী কাজ করা বৈধ অর্থাৎ মুবাহ?
ইতিকাফকারীদের জন্য নিম্নোক্ত কাজ করা বৈধ :
১. একান্ত প্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলা।
২. চুল আঁচড়ানো, মাথা মুণ্ডানো, নখ কাটা, শরীর থেকে ময়লা পরিষ্কার করা, এবং সুগন্ধি ব্যবহার ও উত্তম পোশাক পরিচ্ছদ পরিধান করা।
৩. মসজিদের ভিতরে পানাহার করা, ঘুমানো এবং বিশেষ প্রয়োজনে বিবাহের কাবিননামা ও ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তিও সম্পাদন করা যাবে।
মেয়েরা কি নিজ বাসগৃহে ই‘তিকাফ করতে পারবে?
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যামানায় নারীরা মসজিদে ইতিকাফ করতেন।
বিশেষ প্রয়োজনে ইতিকাফ অবস্থায় মাসজিদ থেকে বের হতে পারবে কি?
মাসজিদের গন্ডির মধ্যে ব্যবস্থা না থাকলে শুধুমাত্র মানবিক প্রয়োজনে প্রস্রাব-পায়খানা, খাওয়া-দাওয়া ও পবিত্রতা অর্জনের জন্য মাসজিদ থেকে বের হওয়া জায়েয আছে। দলীল :
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ : كَانَ النَّبِيُّ -صلى الله عليه وسلم- إِذَا اعْتَكَفَ لاَ يَدْخُلُ الْبَيْتَ إِلاَّ لِحَاجَةِ الإِنْسَانَ
‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, একান্ত (পেশাব-পায়খানার) প্রয়োজন পূরণ ছাড়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদ ছেড়ে বাড়িতে প্রবেশ করতেন না।’ (মুসলিম : ২৯৭)
তবে মাসজিদে এসব ব্যবস্থা থাকার পর যদি কেউ বাইরে যায় তাহলে ইতিকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
ইতিকাফ অবস্থায় এক রাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রী সাফিয়াকে ঘরে পৌঁছিয়ে দিয়ে এসেছিলেন। (বুখারী)
ইতিকাফকারীর দায়িত্ব ও করণীয় কাজ কী কী? এবং তাঁর কী ধরনের ইবাদত করা উচিত?
উত্তম হলো নফল ইবাদত বেশি বেশি করা। যেমন সালাত আদায়, কুরআন তিলাওয়াত ও অধ্যয়ন করা, যিকর-আযকার ও তাসবীহ, তাহলীল করা অর্থাৎ সুবহানাল্লাহ, আল-হামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার, তাওবাহ-ইস্তেগফার, দুআ, দুরূদ ইত্যাদি ইবাদতে সর্বাধিক সময় মশগুল থাকা। তাছাড়া শরীয়া বিষয়ক ইলম চর্চা করা।
পার্থিব ব্যাপারে কথাবার্তা বলা, অনর্থক গল্পগুজব ও আলোচনা থেকে বিরত থাকা উচিত, তবে পারিবারিক কল্যাণর্থে বৈধ কোন বিষয়ে অল্পস্বল্প কথাবার্তা বলার মধ্যে কোন দোষ নেই।
কী কী কারণে ই‘তিকাফ ভঙ্গ হয়ে যায়?
নিম্ন বর্ণিত যে কোন একটি কাজ করলে ইতিকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে-
১. স্বেচ্ছায় বিনা প্রয়োজনে মাসজিদ থেকে বের হলে।
২. কোন শিরক বা কুফরী কাজ করলে।
৩. পাগল বা বেঁহুশ হয়ে গেলে।
৪. নারীদের হায়েয-নিফাস শুরু হয়ে গেলে।
৫. স্ত্রী সহবাস বা যে কোন প্রকার যৌনসম্ভোগ করলে।
মহান আল্লাহ আমাদেরকে লাইলাতুল কদরের অনুসন্ধনে যথাযথ ভাবে ইতিকাফ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : মুরাদ বিন আমজাদ, প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মুসলিম উম্মাহ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।
ওডি/এনএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড