ধর্ম ডেস্ক
তাকওয়া শব্দের অর্থ হলো আল্লাহভীতি, পরহেজগারিতা, দ্বীনদারি, ভয় করা, বিরত থাকা, আত্মশুদ্ধি ইত্যাদি। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় আল্লাহ তায়ালার ভয়ে সব ধরনের অন্যায়, অত্যাচার ও পাপাচার বর্জন করে পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী মানব জীবন পরিচালনা করার নামই তাকওয়া। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে- “তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি অধিক মর্যাদা সম্পন্ন, যে অধিক মুত্তাকি।” (সূরা আল হুজরাত : ১৩)
মাহে রমজানের সিয়াম অন্তর্নিহিত তাৎপর্য হচ্ছে তাকওয়া ও হৃদয়ের পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। তাকওয়ার মাধ্যমেই বান্দা ইহকাল ও পরকালে তার মর্যাদাকে বৃদ্ধি করে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে পরম সম্মানিত হয়।
যত প্রকার ইবাদত ও বিধি বিধান আছে, সব কিছুর মূলে হলো তাকওয়া। তাকওয়া হাসিল হওয়ার পর মানুষের হৃদয় আল্লাহর দিকে গভীরভাবে আকৃষ্ট হয়। তেমনিভাবে রমজান মাসে রোজাদার তাকওয়া ভিত্তিক চরিত্র গঠনের নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যান। যিনি মুত্তাকী বা পরহেজগার হবেন, তিনি যাবতীয় খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকবেন এবং ভালো কাজের অনুশীলন করবেন।
সত্যবাদিতা, আমানতদারি, ধৈর্য,ন্যায়বিচার বা আদল-ইহসান প্রভৃতি যত রকমের অনুপম মানবিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, তিনি সেগুলোর অধিকারী হতে চেষ্টা করবেন। তিনি সর্বদা সৎ কাজ করবেন এবং অপরকে সৎ কাজ করতে বিনীত অনুরোধ বা আহ্বান জানাবেন। এবং নিজে অসৎ কাজ থেকে সর্বদা বিরত থাকবেন ও অপরকে অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখতে সচেষ্ট হবেন। তিনি সময়মতো নামাজ আদায় করবেন, যাকাত প্রদান করবেন এবং মাহে রমজানে সিয়াম সাধনায় নিজেকে ব্রত রাখবেন।
সত্যবাদী ও মুত্তাকীদের সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে- ভালো কাজ এটা নয় যে, তোমরা তোমাদের চেহারা পূর্ব ও পশ্চিমে ফিরাবে। বরং ভালো কাজ হলো, যে ঈমান আনে, আল্লাহ, শেষ দিবস, ফেরেশতাগণ, কিতাব ও নবীগণের প্রতি এবং যে সম্পদ প্রদান করে, তার প্রতি আসক্তি সত্ত্বেও নিকটাত্মীয়গণকে, ইয়াতীম, অসহায়, মুসাফির ও প্রার্থনাকারীকে এবং বন্দি মুক্তিতে এবং যে সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং যারা অঙ্গীকার করে তা পূর্ণ করে, যারা ধৈর্য ধারণ করে কষ্ট ও দুর্দশায় ও যুদ্ধের সময়ে। তারাই সত্যবাদী এবং তারাই মুত্তাকী। (সূরা বাকারা, আয়াত : ১৭৭)
বছরের এক মাসব্যাপী সিয়াম পালনের উদ্দেশ্যে নিছক উপবাস থাকা নয়, এর মূল উদ্দেশ্য তাকওয়া অর্জন। মানুষের মধ্যে তাকওয়া বা আল্লাহভীতি অর্জনের লক্ষ্যে মাহে রমজানের পূর্ণাঙ্গ একটি মাস সিয়াম রাখা ফরজ করা হয়েছে। মুত্তাকীর বৈশিষ্ট্য অর্জনের জন্য পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন, হে মুমিনগণ, তোমাদের উপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেভাবে ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর। (সূরা বাকারা, আয়াত : ১৮৩)
সায়েম ব্যক্তি সিয়াম আছে কি না, তা সে ছাড়া অন্য কেউ জানে না। সামনে সুস্বাদু ও লোভনীয় খাবার উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও স্রষ্টার প্রতি আনুগত্যের কারণে সে তা গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকে। কোনো সায়েম যদি লোক চক্ষুর অন্তরালে কোনো খাবার ভক্ষণ করেন বা কিছু পালন করেন বা নিষিদ্ধ কোনো কাজ করে বসেন, তাহলে তা মানুষের জানার নয়। কিন্তু খাঁটি সায়েম ব্যক্তি তা করেন না। কারণ, সেই মুত্তাকী।
আর তিনি জানেন যে মানুষ না দেখলেও আল্লাহ তার বান্দার সব কর্মকাণ্ড প্রত্যক্ষ করছেন। এভাবে সায়েমের মাঝে আল্লাহভীতি সৃষ্টি হয় এবং সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার, যাবতীয় অশ্লীল কাজ, মিথ্যা কথা প্রভৃতি খারাপ কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখেন।
তাই সিয়ামকে বলা হয় তাকওয়া অর্জনের মাস। সিয়াম মুত্তাকীর জন্য এক অফুরন্ত নেয়ামত স্বরূপ। নাবী কারীম (সা.) বলেছেন- যে ব্যক্তি মাহে রমজানের সিয়াম পালন করতে গিয়ে সিয়ামের সীমারেখা বুঝে নিবে এবং যে কর্তব্য সিয়ামের ভেতর পালন করা বাঞ্ছনীয়, তা সুচারুভাবে পালন করে চলবে, তার এরূপ সিয়াম তার বিগত গুনাহের ক্ষমার কাফফারা হয়ে যাবে। (বায়হাকি)।
মাহে রমজানে তাকওয়ার গুণাবলী অর্জনের মাধ্যমে মানুষের পাপাচারের প্রতি আকর্ষণ দিন দিন হ্রাস পেতে থাকে। বস্তুত যে সিয়াম তাকওয়া তথা আল্লাহর ভয় এবং হৃদয়ের পবিত্রতা শূন্য, সে সিয়াম যেন প্রকৃত অর্থে সিয়ামই নয়।
সিয়াম যেন অন্তঃসারশূন্য আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত না হয় এবং তা যেন একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই পালন করা হয়, সে জন্য মাহে রমজানে তাকওয়াভিত্তিক সমাজ গঠনের প্রতিও বিশেষ তাগিদ প্রদান করা হয়েছে।
একজন সিয়াম পালনকারী ও তাকওয়া অবলম্বনকারী মুমিন মুসলমান সমাজে কোনো প্রকার অশ্লীল ও খারাপ কাজ করবেননা, কারও অনিষ্ট সাধনের চিন্তাও করবেন না, বরং সর্বদা পরোপকারে লিপ্ত থাকবেন এবং পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহর নির্দেশ মোতাবেক জীবন যাপন করে জান্নাত লাভের পথ সুগম করবেন। এখন থেকেই যদি আমরা তাকওয়াভিত্তিক সমাজ গঠনের জন্য সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল থাকতে পারি তাহলে আশা করা যায় আমরা মুত্তাকী হতে পারব। ইনশাআল্লাহ্।
মহান আল্লাহ তাকওয়া অর্জনে এ মাসে সকল প্রকার আল্লাহদ্রোহী কর্ম থেকে হিফাজত করুন। আমিন।
লেখক : মুরাদ বিন আমজাদ।
ওডি/এনএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড