• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

জাকাত সম্পর্কে যাবতীয় যা কিছু (শেষ পর্ব)

  ধর্ম ডেস্ক

১৬ মে ২০১৯, ১৩:৪৪
জাকাত
ছবি : প্রতীকী

আধুনিক ও সমসাময়িক গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয়ে জাকাতের হুকুম-

শেয়ারের জাকাত-

যারা শেয়ার ক্রয় করেন তারা মূলত দুটি উদ্দেশ্যে শেয়ার ক্রয় করে থাকেন। এক. বার্ষিক ডিভিডেন্ড (লভ্যাংশ) গ্রহণের উদ্দেশ্যে স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে শেয়ার ক্রয় করেন। অর্থাৎ কোম্পানির AGM থেকে যে লভ্যাংশ ঘোষণা হবে তাই তাদের উদ্দ্যেশ্য। দুই. যারা শেয়ারকে অন্যান্য পণ্যের মত লাভের আশায় বেচা-কেনা করেন। তাদের উদ্দ্যেশ্য থাকে আশানুরূপ দর পেলেই তার বিক্রি করে দিবে। বাৎসরিক লভ্যাংশ এদের মুখ্য উদ্দেশ্য থাকে না। এরা মুলত Capital Gain করে থাকে।

উপরোক্ত দুই শ্রেণির শেয়ার হোল্ডারদের যাকাতের হুকুম ভিন্ন ভিন্ন। যারা ক্যাপিটাল গেইন করেন তথা শেয়ারকে অন্যান্য পণ্যের মত বেচাকেনা করেন তাদের যাকাতের হুকুম হলো, তারা শেয়ারের বর্তমান বাজার দরের ওপর জাকাত আদায় করবেন। ফেস ভ্যালুর ওপর নয়। অর্থাৎ যে দিন তার জাকাতের অর্থবছর পূর্ণ হবে সেদিন ঐ শেয়ারের মার্কেট ভ্যালু কত? তার ওপর জাকাত আদায় করবে।

আর যারা বার্ষিক লভ্যাংশের উদ্দেশ্যে শেয়ার ক্রয় করে তাদের যাকাতের হুকুম হলো তারা প্রথমে কোম্পানির ব্যালেন্স শিট দেখে কোম্পানির স্থায়ী ( Fixed Assets) সম্পদ ও জাকাতযোগ্য সম্পদের অনুপাত বের করবেন। কোম্পানির স্থায়ী সম্পদ হলো বিল্ডিং, মেশিন, জমি, গাড়ি ইত্যাদি। অর্থাৎ যেগুলো বিক্রি করা হয় না। আর জাকাতযোগ্য সম্পদ হলো নগদ টাকা, ব্যবসায়িক সামগ্রী ও বিভিন্ন পর্যায়ের কাঁচামাল ইত্যাদি। অতঃপর কোম্পানির মোট সম্পদের ( Assets ) যত পার্সেন্ট জাকাতযোগ্য হয় সে তার শেয়ারের বাজার দরের ততপার্সেন্টের জাকাত আদায় করবে।

ধরা যাক একটি কোম্পানির একটি শেয়ারের ফেস ভ্যালু ১০০ টাকা। আজ তার বাজার দর ২০০ টাকা। এ দিকে কোম্পানির স্থায়ী সম্পদ মোট সম্পদের ২০পার্সেন্ট। আর নগদ টাকা, ব্যবসায়িক পণ্য, কাঁচামাল ইত্যদি তথা জাকাত যোগ্য সম্পদ ৮০ পার্সেন্ট। তাহলে যিনি ক্যাপিটাল গেইনের উদ্দেশ্য শেয়ার ক্রয় করেছেন তিনি আজ জাকাত দিলে ২০০ টাকার জাকাত দিবেন। আর যিনি লভ্যাংশের উদ্দেশ্যে শেয়ার ক্রয় করেছেন তিনি আজ জাকাত দিবেন [২০০-(২০*২)] ১৬০ টাকার। আর যদি কোম্পানির ব্যালেন্স শিট পাওয়া না যায় বা কোম্পানির আর্থিক অবস্থা জানা না যায় তবে সতকর্তামূলক পূর্ণ বাজার দরের জাকাত দিয়ে দিবে ।

বন্ডের জাকাত-

বন্ড মূলত ঋণের সার্টিফিকেট। বন্ডসহ যবতীয় অর্থনৈতিক সনদের জাকাত আদায় করা ওয়াজিব। কেননা এগুলো নগদ অর্থ এর হুকুমে।

প্রভিডেন্ট ফান্ডের জাকাত-

সরকারি বা বেসরকারি চাকুরিজীবীদের বেতন থেকে জি,পি বা সি,পি ফান্ডের জন্য বাধ্যতামূলক যে অংশ কর্তন করা হয় তা উত্তোলনের পূর্বে চাকুরিজীবীর মালিাকানায় আসে না। তাই ফান্ডে থাকাকালীন উক্ত টাকার ওপর জাকাত আসবে না। এবং হস্তগত হওয়ার পরেও বিগত বছরের জাকাত দিতে হবে না। তবে হস্তগত হওয়ার পরে পূর্ব থেকে নেসাবের মালিক না থাকলে উক্ত টাকার ওপর এক বছর অতিবাহিত হলে তার ওপর জাকাত ওয়াজিব হবে। আর পূর্ব থেকে নেসাবের মালিক থাকলে জাকাত হিসাবের সময় উক্ত ফান্ড থেকে প্রাপ্ত টাকারও জাকাত দিতে হবে, সেক্ষেত্রে উক্ত টাকার ওপর এক বছর অতিক্রান্ত হওয়া জরুরি নয়। এ হল বাধ্যতামূলক ফান্ডের হুকুম।

আগের পর্ব পড়তে : জাকাত সম্পর্কে যাবতীয় যা কিছু (পর্ব- ৩)

আর যে সব চাকুরিজীবীরা (সরকারি বা বেসরকারি) বাধ্যতামূলকের পাশাপাশি ঐচ্ছিকভাবে টাকা রাখেন বা পূরোটাই ঐচ্ছিকভাবে রাখেন বা সে নিজ উদ্যোগে ঐ ফান্ডের টাকা অন্য কোন ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে স্থানান্তর করিয়ে নেন তাদের উক্ত ফান্ডের টাকা জাকাতযোগ্য সম্পদ হিসেবে গণ্য হবে। কাজেই সে নেসাবের মালিক হলে উক্ত টাকারও জাকাত আদায় করবে।

প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে ঋণের জাকাত-

প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থ মূলত তার নিজের। কাজেই জাকাতযোগ্য সম্পদ থেকে এই ঋণ বিয়োগ হবে না। সুতরাং প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে ঋণ নিলে সে অর্থেরও জাকাত আদায় করতে হবে।

বীমা বা ইন্সুরেন্সের জাকাত-

বীমা বা ইন্সুরেন্সের যে কোনো স্কিমে প্রদেয় মূলটাকা জাকাতযোগ্য সম্পদ হিসাবে বিবেচিত হবে। অর্থাৎ উক্ত টাকা এককভাবে বা অন্যান্য জাকাতযোগ্য সম্পদের সাথে মিলে যদি নেসাব পরিমাণ হয় তবে বছরান্তে তার ওপর জাকাত ফরজ হবে।

ব্যাংক থেকে পাওয়া সুদের জাকাত-

ব্যাংক থেকে বা অন্য যে কোনোভাবে পাওয়া সূদের টাকার ওপর জাকাত আসবে না। সুদী চুক্তিকে আবদ্ধ হওয়া ও সুদী টাকা গ্রহণ করা উভয়টিই হারাম। উক্ত টাকা কোনোভাবে হস্তগত হয়ে গেলে মালিককে ফিরিয়ে দেওয়ার সুযোগ থাকলে মালিককে ফিরিয়ে দিবে। অন্যথায় ছাওয়াবের নিয়ত ব্যাতীত পুরো টাকা ছদকাহ করে দিবে।

বায়নানামার টাকার জাকাত-

জমি, ফ্ল্যাট, বাড়ি ইত্যাদি ক্রয় করার পর বায়না হিসাবে যে আংশিক টাকা দেওয়া হয় তার জাকাত বিক্রেতা আদায় করবে।

ভাড়াবাবদ অগ্রিম প্রদেয় টাকার জাকাত-

দীর্ঘমেয়াদী ইজারা বা ভাড়ার ভিত্তিতে অগ্রিম যে টাকা দেওয়া হয় তার জাকাত টাকা গ্রহণকারী আদায় করবে।

ব্যাংক একাউন্টে গচ্ছিত টাকার জাকাত-

ব্যাংকের ব্যক্তি মালিকানাধীন সকল প্রকার অ্যাকাউন্টের গচ্ছিত টাকা জাকাতযোগ্য। চাই কারেন্ট একাউন্ট হোক বা সেভিংস অ্যাকাউন্ট হোক বা ফিক্সড ডিপোজিট হোক বা দীর্ঘমেয়াদী ডিপোজিট হোক বা স্যালারি একাউন্ট হোক, সর্বপ্রকার একাউন্টের জাকাত আদায় করতে হবে যদি সে নেসাবের মালিক হয়। কাজেই যেদিন তার জাকাতের অর্থ বছর পুরা হবে ঐদিন সে সকল প্রকার একাউন্টের ব্যাংক স্ট্যাটমেন্ট দেখে গচ্ছিত টাকাগুলোর জাকাত হিসাব করে আদায় করবে।

তথ্যসূত্র : মুফতী আবুল হুসাইন।

ওডি/এনএম

প্রচলিত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ব্যখ্যা, সমাজের কোন অমীমাংসিত বিষয়ে ধর্মতত্ত্ব, হাদিস, কোরআনের আয়াতের তাৎপর্য কিংবা অন্য যেকোন ধর্মের কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সর্বপরি মানব জীবনের সকল দিকে ধর্মের গুরুত্ব নিয়ে লিখুন আপনিও- [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড