সুলতান মাহমুদ বান্না
মাহে রমজান হচ্ছে, সবরের মাস। মানুষ তার কথাবার্তায়, আচার-আচরণে, কর্মে ও চলাফেরা যাবতীয় পর্যায়ে সবরের মাধ্যমে রোজা সাধনার পরিপূর্ণ লাভ করে। রমজান মাসে রোজাদার ব্যক্তি কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সবর করে সব ধরনের পাপ, পানাহার, স্ত্রী সম্ভোগ থেকে বিরত থাকেন। এটি সমবেদনা জানানোর মাস। এ মাসে রোজাকে পরিপূর্ণতা দেওয়ার জন্যই রোজাদারগণ তাদের সকল প্রকার রিপু দমন করার চরম ধৈর্য্যরে পরিচয় দিয়ে থাকে। তাই বলা হয় এটা ধৈর্য ধারণের মাস। ধৈযের বিনিময়ে নির্ধারিত রয়েছে সুশীতল ছায়ানীড় জান্নাত। রাসুল (সাঃ) বলেছেন, এটা সবর বা ধৈযের মাস। আর সবরের বিনিময় হচ্ছে জান্নাত। (মিশকাত)
সত্যিকার অর্থে আমাদের জীবনের প্রতিটি পদে ধৈর্য প্রয়োজন। যার ধৈর্য বেশি, তার পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে শান্তি ও শৃংখলা বেশি। কোনো কিছু হারিয়ে গেলে, অভাব-অনটনে পড়লে হারাম আয়ের দিকে না গিয়ে সীমিত হালাল রোজগারের ওপর ধৈর্য ধারণ করতে হবে। ধৈর্য বা সবর হচ্ছে মোমিনের সাফল্যের চাবিকাঠি। রাসূল (সাঃ) বলেছেন- ‘যে সবর করে আল্লাহ তাকে সবর ধারণে সাহায্য করেন। আল্লাহ সবরের চাইতে উত্তম ও প্রশস্ততা কাউকে দান করেন না।’ (বোখারি ও মুসলিম) অপর এক হাদিসে এসেছে, রাসূলে করিম (সাঃ) বলেছেন- “রোজা ধৈর্যের অর্ধেক এবং ধৈর্যের প্রতিদান জান্নাত।” (তিরমিজি) এ হাদিসে রোজাকে সবরের অর্ধেক বলা হয়েছে। কারণ, রমজানের সাথে ধৈর্যের মৌলিক অর্থ ও তাৎপযের বিরাট মিল রয়েছে। আল্লাহ যেসব কাজ নিষিদ্ধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকা হচ্ছে ধৈর্যের অর্ধেক। বাকী অর্ধেক হচ্ছে তাঁর আনুগত্য বা ইবাদত করা। সুতরাং এই রজমানে ত্রিশটি দিন রোজা রাখার মাধ্যমেই একজন মোমিন ধৈর্য ও সংযমের পরিচয় দিতে সক্ষমতা অর্জন করে। এ মাসে জীবনের সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর হুকুম পালন তথা আদেশ-নিষেধসহ ধৈর্য ও সহনশীলতার শিক্ষা গ্রহণ করতে হয়। রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন, “রোজাদার দিনে কেউ যেন অশ্লীল কথা না বলে এবং শোরগোল না করে। তার সঙ্গে কেউ ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত হলে সে যেন (অধৈর্য না হয়ে) বলে, আমি রোজাদার। (বুখারী)।
রমযান মাসে যারা ধৈর্যের সঙ্গে আল্লাহর কাছে সাহায্য চান, মহান আল্লাহ্ তাদের সাহায্য করেন। সিয়াম বা রোজা ধর্মপ্রাণ মুসলিমকে ত্যাগের মাধ্যমে ধৈর্য ধারণের অভ্যাস গড়তে শিখায়। আসলে একজন রোজাদার ব্যক্তি এ মাসে ধর্মীয় নিয়ম-রীতি পালনের মাধ্যমে যে ত্যাগ-তিতীক্ষা, ধৈর্য ও সহনশীলতার গুণাবলী অর্জন করেন। তা বছরের বাকি দিনগুলিতে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের সৃজনশীল নানা ক্ষেত্রে কাজে লাগিয়ে থাকেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ্ তায়ালা ইরশাদ করেন, হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন। (সূরা বাকারা : ১৫৩)।
মাহে রমযানে কঠোরভাবে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে অর্জিত ধৈর্য ও সহশীলতা ঈমান ও তার ন্যায্য দাবি প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম সাধনায় প্রচুর নিয়ামক শক্তি সঞ্চার করে। সিয়াম সাধনার মাধ্যমে অর্জিত এ সহনশীলতা মুসলমান সমাজের জন্য একটি দলগত কল্যাণ বয়ে আনে। মাহে রমযান প্রকৃত অর্থেই যেন মানুষের মনের পশুত্ব, আত্মঅহমিকা, হিংস্রতাসহ সব অমানবিক দোষ-ত্রুটি জ্বালিয়ে ভস্ম করে ধৈর্য ও সহনশীলতা বিকশিত করে। রমজানে সিয়াম সাধনার খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে সবর ও সহমর্মিতা। মাহে রমজানের এক মাস সিয়াম সাধনা, সংযম যেন আমাদের বরকত বয়ে আনে এবং তার শিক্ষা আমাদের বাকি জীবনকে সুন্দর করে সোই কাম্য।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড