সুলতান মাহমুদ বান্না
খারাপ নফস মানুষকে পাপ পথে চলার নির্দেশনা দেয়। এর থেকে বাঁচতে ও নিজ আত্মাকে সৎপথে পরিচালিত করার জন্য সিয়ামই একমাত্র হাতিয়ার, যা নফসের কুপ্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে। হৃদয় যদি গোনাহের পথে ডাকে, তাহলে সেই ডাকে সাড়া দেওয়া যাবে না। এভাবেই সিয়াম সাধনা বা রোজাব্রত পালন মানবজীবনকে পূতপবিত্র ও ইসলামি নীতিনৈতিকতায় গড়ে তোলার এক অপূর্ব সুযোগ। এ মাসে যারা একনিষ্ঠভাবে রোজা রেখে নিজেকে আত্মশুদ্ধির পর্যায়ে নিয়ে যায়, তারা মহান প্রভু আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি ও তাঁর করুণার দৃষ্টিতে নিজেকে মেলে ধরতে পারে। মানুষের আত্মশুদ্ধির একটি বলিষ্ঠ হাতিয়ার সিয়াম সাধনা। এ মাসে রোজা রাখার মধ্য দিয়ে একজন মুসলমান তার পাশবিক প্রবৃত্তিকে সংযত এবং নিজের আত্মিক সত্তাকে জাগ্রত ও বিকশিত করে তোলার পরিপূর্ণ সুযোগ লাভ করে। মানুষের হৃদয়ে যে পশুসুলভ ভাব রয়েছে, তা তার আত্মিক সত্তাকে জাগ্রত করতে অন্তরায়। মানুষ যখন এই দুষ্টশক্তির ওপর আত্মিক ও বিবেকের রাজত্ব সৃষ্টি করতে পারে, তখনই সে পরিপূর্ণতার দিকে এগিয়ে যায়।
মাহে রমজানে রোজা পালনের অতীব তাৎপর্য নির্দেশিত হয়েছে ইমাম মোহাম্মদ ইবনে ইসমাইল বোখারি (রহ.) সংকলিত এবং হজরত আবু হোরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদিসে নবী করিম (সা.) বলেছেন, 'রোজা (যাবতীয় অপকর্ম আর পাপাচার থেকে শরীর ও মনের) জুন্নাহ বা ঢালস্বরূপ। সুতরাং রোজাদার ব্যক্তি অশ্লীল কথা বলবে না বা জাহেলি আচরণ করবে না। কেউ তার সঙ্গে ঝগড়া করতে উদ্যত হলে বা গালমন্দ করলে সে বলবে, আমি রোজা রেখেছি। কথাটি দুবার বলবে। যার মুষ্টিতে আমার প্রাণ সে আল্লাহর শপথ, রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশকের সুগন্ধ অপেক্ষাও উৎকৃষ্ট।' আল্লাহতায়ালা বলেন, 'আমার উদ্দেশ্যেই পানাহার ও লোভনীয় বস্তু পরিত্যাগ করা হয়। সুতরাং রোজার পুরস্কার বিশেষভাবে আমিই দান করব। সুতরাং, আমাদের আত্মিক, শারীরিক, মানসিক ও সর্বোপরি সামাজিক কল্যাণ নিশ্চিতকারী এমন কল্যাণপ্রদ এবাদত পরিপালনীয় বিষয় ব্যতীত দ্বিতীয়টি মনে হয় আর নেই। মানবাত্মাকে সংশোধন করা হলেই আপনা-আপনি ইবাদতে সত্যনিষ্ঠা ও উৎসাহ বেড়ে যাবে। আর এই পরিশুদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে লোভলালসা, কামনাবাসনা, রিপুর চাহিদা, অপরের সম্পদ আত্মসাৎ, অন্যায়-অবিচার, অসামাজিক দুবৃত্ততা পরিহার করে ধার্মিকতার পথে একধাপ এগিয়ে যাবে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পরহেজগার তাকওয়ালা হওয়া প্রত্যেক মুসলিমের জন্য একান্ত জরুরি ও বাঞ্ছণীয়। পবিত্র কুরআনের সূরা আল-আলা (১৪ নং আয়াতে) বর্ণিত হয়েছে, ‘যে সংশোধিত হলো, সে সফলকাম হলো।’ সুতরাং, আত্মাকে সংশোধন, রিপুর লোভলালসা, দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা ইত্যাদি পরিমার্জন ও পরিশোধনের মাধ্যমে একজন সিয়াম পালনকারী সফলকাম হতে পারেন। আল্লাহ বলেন, ‘শপথ আত্মার এবং যিনি সুঠাম করেছেন তার, অতঃপর তাকে পাপাচারের ও ধার্মিক পথ শিক্ষা দিয়েছেন, সুতরাং সে সফলকাম, যে আত্মশুদ্ধি অর্জন করে। আর সে-ই ব্যর্থ, যে নিজেকে কলুষিত করে। (সূরা আশ শামস : ৭-১০)।
তাই আসুন, আমরা সঠিক আত্মোপলব্ধির করি। কেন আমরা রোজা রাখি এবং রাখবো। কারণ, আমরা কুপ্রবৃত্তির হাতিয়ারকে বশে আনার জন্য রোজা পালন করি। আমরা রমজানের এই মহান চেতনায় উদভাসিত হয়ে নিজেদের আত্মোপলব্ধির মাধ্যমে আত্মার সকল কুপ্রবৃত্তিকে পরাজিত করি এবং যাবতীয় অকল্যাণকর কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখি।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড