ধর্ম ডেস্ক
রহমত, মাগফেরাত, নাযাতের প্রতি মুহূর্তের সওগাত নিয়ে আমাদের কাছে উপস্থিত হয় নুযুলে কুরআনের সম্মানিত মাস রমাজানুল মুবারক। এ মাসটি যেহেতু মহান মালিকের কনস্টিটিউশন অবতীর্ণের মাস। তাই এর প্রতিটি মুহূর্ত কল্যাণকর। এর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অনেকগুলো ইবাদতের সমাহার।
এ মাসের দিনের বেলা সিয়াম রাতের বেলা কিয়াম। এমাসের মধ্যে একটি রাত কিতাব নাযিলের রাত যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। তার অনুসন্ধানে আছে ইতেকাফ। সেহেরি, ইফতার, সাদাকাতুল ফিতর ও ঈদ। পৃথিবীর সূচনালগ্ন থেকে আল্লাহ্র বিধানে মাস গণনায় ১২ টি। (৯/৩৬) তন্মধ্যে আল-কুরআনে উল্লিখিত শুধু এই একটা মাস রমজান মাস। (২/১৮৩)
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, মাসটির শুরু নির্ধারণের থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত বিভ্রান্তিতে ঘিরে রেখেছে সে যে, আমাদেরকে সিরাতে মুস্তাকীম থেকে সরিয়ে রাখার জন্য চতুর্দিক থেকে ভ্রষ্ট করার জন্য সে একেবারেই আদম সৃষ্টির শুরু থেকেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ! (৭/১৬ -১৭) মানুষের সরল পথের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার প্রমাণ হলো আল-কুরআনের বিধানকে আঁকড়ে ধরে (৪৩/৪৩) একমাত্র রবের ইবাদতে প্রতিষ্ঠিত থাকাই সরল পথ।
আর মুসলিমদের ইবাদতের সম্পর্ক হলো চন্দ্রমাসের তথা হিজরি মাস। তাই শয়তান মুসলিমদের ইবাদত নষ্ট করার জন্য প্রথম হামলা করেছে ان عدة الشهور عندالله ----অর্থাৎ মাস গণনার আল্লাহর নির্ধারিত নির্দেশনার মধ্যে আগ-পিছ করার কুফরীর মাধ্যমে (৯/৩৭) যে বিষয় নিয়ে আলোচনা আমরা অনলাইনে আমরা পক্ষ-বিপক্ষে শুনেছি শুনছি। আজ ঐ বিষয়ে আলোচনা করবো না। আজ আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ সেহরি ও ইফতার বিষয়ক ও অন্যান্য বিভ্রান্তি নিয়ে -
।وکلوا واشربوا حتی
পানাহার করতে পারবে রাতের শুরু হতে ফজর পর্যন্ত। অতঃপর ফরয হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোযা চালিয়ে যাবে। (বাকারা / ১৮৭)
স্বাভাবিক সেহরির সময় হলো ফরজ পর্যন্ত ইবনে কাসীর আরবী (১ম :/২২২ পৃ)
আমাদের দেশে সেহরির শেষ সময় নির্ধারণ করার জন্য এক প্রকার ক্যালেন্ডার পাওয়ায় মানুষ মনে করে লিখিত ঐ সময়ের পরে যদি কেউ একান্ত প্রয়োজন ও পড়ে তাহলেও কিছু খাওয়া যাবে না। এমন কি রোজা কাযা করতে হবে বলে ফতোয়া দেয়া হয়। অথচ ক্যালেন্ডারের বর্ণিত ঐ সময়ই যে সেহরির শেষ সময় তার কোন দলিল নাই।
بخارى:كتاب الصوم،باب قدركم بين السحور والصلاة الفجر (مفتي عبدالروف)
হাদীসের মর্মার্থ : যায়েদ বিন সাবিত বলেন, আমরা রাসুল (সা.) এর সঙ্গে সেহরি করতাম অতঃপর রাসুল (সা.) ফজরের সালাতে দাঁড়াতেন। আনাস (রা.) বলেন তাহলে বলুনতো ফজরের আজান ও সেহরির মাঝে সময় ছিল কতটুকু? জবাবে যায়েদ বিন সাবিত বলেন ৫০ আয়াত পড়তে যতটা সময় প্রয়োজন হয় ততটা সময় ছিল। (সহীহ বুখারী আরবী ১/১৫৭ পৃঃ)
অত্র হাদীসে স্পষ্ট যে আযানের পর ৫০টি আয়াত পড়তে যতটা সময় প্রয়োজন ততটা সময় পরে সাহাবাগণ সেহরি করেছেন, অতঃপর রাসুল (সা.) ফজরের সালাতের জন্য দাঁড়িয়েছেন। আয়াত ছিল মধ্যম ধরনের ও তার তেলওয়াতও ছিল মধ্যম। (ফতহুল বারী ৪র্থ খন্ড ১৩৮ পৃ:)
উল্লিখিত সহীহ আল বুখারীর সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হলো ফজরের আযানের পর রাসুল (সা.) ও সাহাবাগণ সেহেরি করেছেন।
আবু হুরারা (রা.) হতে বর্ণিত- রাসুল (সা.) বলেন যখন তোমরা কেউ আযান শুনতে পেলে এমতাবস্থায় যে, খাবার পাত্র তোমার হাতে, তাহলে আযানের শব্দ শুনেই তা রেখে দিওনা। বরং প্রয়োজনীয় আহার শেষ করে তবে আহার হতে বিরত হও। (আবুদাঊদ আরবী ১ম/সিয়াম অধ্যায় ৩২৮পৃঃ)
এখন বলুন রাসুল (সা.) বলেন কী আর শেষ রাতে আমাদের মাসজিদের মাইক থেকে আওয়াজ আসছে কী? একটু ভেবে দেখবেন কী? এ হাদীস নিয়ে অনেকে ধুম্রঝাল সৃষ্টি করে বলেন যে, এটা ফজরের নয়, মাগরিবের অথবা কেউ বলেন এটা বেলালের তাহাজ্জুদের আযান। তাদের এ সকল কথা বিভ্রান্তিকর। তার প্রমাণ সহীহ বুখারী বর্ণিত পূর্বের হাদিসের সাথে আবু দাউদের হাদীসটি মিলিয়ে দেখুন, দেখবেন, তাদের বক্তব্য ঠিক নয়।
তালাক বিন আলি বলেন যে, রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা পানাহার কর, সুবহে কাজের যেন তোমাদিগকে বিব্রত না করে, কারণ তখন খাওয়া নিষেধ নয়। যদি প্রয়োজন হয় তাহলে তোমারা প্রভাতের লালিমা স্পষ্ট হওয়া পর্যন্ত খেতে পার। ইমাম তিরমিযী বলেন, والعل علی ھذا عند اھل العلم। মর্মার্থ- আলেমগণ এই হাদিসের ওপর আমল করে থাকেন। আলেমগণ প্রভাতের লালিমাচ্ছটা চতুর্দিকে ভালোভাবে ছড়িয়ে পড়ার পরও সেহরি করা হারাম বলে ফতোয়া দেন নাই। (তিরমিযী ১/৮৮)
উক্ত হাদীস প্রমাণ করে যে, সাদা আলোর পর যে লালিমা দেখা যায়, সেই লালিমা চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ার পরও সেহরি করা যায়।
عن حذیفہ قال تسحر نا مع رسولاللہ صلعم ھو واللہ النھار غیر ان الشمس لم تطلع
মর্মার্থ, হুযায়ফা (রা.) বলেন যে, আমরা রাসুল (সা.) এর সঙ্গে এমন সময়ে সেহরি করেছি, আল্লাহর কসম করে বলছি সে সময়টা ছিল দিন, কিন্তু কেবলমাত্র ছিল সূর্য উঠাটা বাকি। (ফতহুল বারী ৪/১৩৬)
এখন বলুন রাসুল (সা.) আমল ছেড়ে সমাজে চলছে কি? কি বলেন মাযহাবী আর কি বলেন লা-মাযহাবী সকল মাকতবায়ে ফিকরের আছে সামান্য ব্যাবধানের ক্যালেন্ডার! আর সেই সূত্রে মাসজিদের মাইক। আওয়াজ আসছে সেহেরির সময় শেষ কেউ পানাহার করবেন না! কোনটা মানবো কোনটা ছাড়ব! জাতি এখন কিংকর্তব্যবিমূঢ় واللہ مستعان
অন্য দিকে সৌদিসহ প্রায় দেশে মুসলিমরা এক দিন আগে আসর বাদ কদর সন্ধানে ইতিকাফের জন্য মসজিদে অথচ আমার দেশে মুতাকিফরা ইতিকাফের জন্য মসজিদে ঢুকবে পরদিন আসর বাদ! কদর তো হারাবে ওদিকে ঈদের হারাম দিনে সিয়াম রাখবে।
মোটকথা পুরো শাহরুর রমজান বিভ্রান্তিতে ভরা! واللہ اعلم
আমার লেখার ভুলের ভার সম্পূর্ণটা আমার। সঠিক কিছু থাকলে তা আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে।
লেখক : মুরাদ বিন আমজাদ, প্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশ মুসলিম উম্মা ফাউন্ডেশন।
ওডি/এনএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড