• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

সন্ত্রাসবাদের সাথে সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর (শেষ পর্ব)

  ধর্ম ডেস্ক

০৩ মে ২০১৯, ০৯:৫০
মুসলিম
ছবি : প্রতীকী

(আরবী থেকে ভাষান্তর করা)

উত্তর প্রদানে : বর্তমান যুগের শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান বিন ‘আব্দুল্লাহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ)।

প্রশ্ন : কাফেরদের জন্য বদ-দুআর ব্যাপারে বাড়াবাড়ি, যেমন প্রত্যেক কাফেরের ধংস কামনা করা অথবা তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাক, এরকমটা চাওয়া- এগুলো সম্পর্কে ইসলাম কি বলে?

উত্তর : দুআর ব্যাপারে যে বিধান দেওয়া আছে তা হল কাফেরদের মধ্য থেকে সীমা লঙ্ঘনকারীদের জন্য বদ-দোআ করা। এটা এজন্যই যে, রাসুলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই সালাতে দুআ করতেন, তখনই তিনি বাছাই করে শুধুমাত্র কাফেরদের মধ্যেকার সীমা লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধেই দুআ করতেন।

তিনি ঢালাওভাবে তাদের সবার বিরুদ্ধে দুআ করতেন না। বরং তিনি বলতেন, (উদাহরণস্বরূপ) “ও আল্লাহ্‌! অমুক ব্যক্তি এবং অমুক গোত্রকে আপনি ধংস করুন”। কাফেরদের সকলকে তিনি তার অভিশাপের অন্তর্ভুক্ত করতেন না।

গৃহীত- [আল-দাওয়াহ (সংখ্যা ১৮৬৯, রামাদান ১৪২৩ হিজরাহ) ম্যাগাজিন থেকে]

প্রশ্ন : আজকাল কোনো কোনো সংবাদপত্রে এরকম লেখা থাকতে দেখা যায় যে তারা সকল আমেরিকান পণ্য বয়কট করতে বলছে, আমেরিকান পণ্য ক্রয় বিক্রয় না করার আহ্বান জানাচ্ছে। এমনকি আজকে এক পত্রিকায় এমনটাও লেখা ছিল যে মুসলিম আলেমরা নিজেরাই এই বয়কটের ডাক দিচ্ছেন এবং এরকমটা করা প্রত্যেক মুসলিমের উপর ওয়াজিব।

বলা হচ্ছে যে এসব পণ্যের যেকোনোটা ক্রয় করা হচ্ছে কবিরা গুনাহ এবং এ হচ্ছে ইহুদিদেরকে মুসলিম নিধনে সহায়তা করা। আমরা আশা করছি আপনি এই বিষয়টা খোলসা করবেন যেহেতু এই বিষয়ে ব্যাখ্যার খুব জরুরী প্রয়োজন রয়েছে। তাছাড়া, এই বয়কট করার মাধ্যমে কি একজন পুরস্কৃত হবে?

উত্তর : প্রথমত, আমি অনুরোধ করব ঐ পত্রিকার একটা কপি অথবা কাটিং আমাকে দিতে, যাতে এই ধরণের কথার উল্লেখ রয়েছে যেমনটা প্রশ্নকারী বললেন।

দ্বিতীয়ত, এটা ভুল কথা। আলেমরা কখনোই এরকম ফাতওয়া দেননি যে আমেরিকান পণ্য ক্রয় করা হারাম। এসব আমেরিকান পণ্য এখনও আমদানি করা হচ্ছে এবং মুসলিমদের মার্কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। আর তাছাড়াও, আমেরিকার বিন্দুমাত্র ক্ষতি হবে না যদি আপনি নিজে তাদের পণ্য না কিনেন। কোনো পণ্য বয়কট করা যাবে না যতক্ষণ না সরকার, ন্যায়সঙ্গত শাসক, কোনো দেশের বিরুদ্ধে কোনো নিষেধাজ্ঞা বা বয়কট ঘোষণা করবেন।

আগের পর্ব পড়তে : সন্ত্রাসবাদের সাথে সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর (পর্ব- ১)

সেই ক্ষেত্রে, ঐ বয়কট হবে আইনসিদ্ধ এবং বাধ্যতামূলক। আর শুধুমাত্র গুটিকয়েক লোক যদি এমনটা করতে চায় আর এর সমর্থনে তারা তাদের নিজস্ব ফাতওয়া জারি করে, তাহলে তা হবে এমন কিছুকে হারাম করা যা আল্লাহ্ হালাল করেছেন এবং এমনটা করার অনুমতি নেই।

গৃহীত- [ফাতাওয়া আল-উলামা ফি আল-জিহাদ ওয়া আল-আমালিয়্যাত আল-ইন্তিহারিয়্যাহ” ক্যাসেট থেকে]

প্রশ্ন : মাননীয় শায়খ, কোনো কোনো যুবক এই ব্যাপারে মাঝেমধ্যে প্রশ্ন করে যে, আমি যদি দেখি যে কেউ একজন এসব (খাওয়ারিজ, সন্ত্রাসী ইত্যাদি) লোকদের পক্ষ নিয়ে কথা বলছে এবং তাদের চক্রান্তসমূহের পক্ষে বলছে, আমার কি কতৃপক্ষকে সতর্ক করে তাদের ধরিয়ে দেয়া উচিৎ হবে? অনেকে এটাকে কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে একধরণের বিশ্বাসঘাতকতা মনে করে থাকে, এবং বলে যে এমনটা করার অনুমতি নেই। আমরা আশা করছি যে আপনি এই ব্যাপারে বিস্তারিত বলবেন।

উত্তর : রাসূলুল্লাহ ﷺ- বলেছেন,

"‏ الدِّينُ النَّصِيحَةُ ‏"‏ قُلْنَا لِمَنْ قَالَ ‏"‏ لِلَّهِ وَلِكِتَابِهِ وَلِرَسُولِهِ وَلأَئِمَّةِ الْمُسْلِمِينَ وَعَامَّتِهِمْ."

“সদুপদেশ দেয়াই দ্বীন। সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন, কার জন্য উপদেশ ? রাসূলুল্লাহ ﷺ- বললেন, আল্লাহ্ ও তাঁর কিতাবের, তাঁর রসূলের, মুসলিম শাসক এবং মুসলিম জনগণের জন্য।” [সহীই মুসলিম, কিতা-বুল ঈমা-ন, হা/৫৫]

সুতরাং যে কেউই এই বিষয়গুলোতে পতিত হোক না কেন, তাকে আন্তরিকভাব উপদেশ দিতে হবে এবং এই বিষয়গুলির বাস্তবতা তাকে বুঝিয়ে বলতে হবে। যদি সে বিরত হয়, তাহলে ধন্যবাদ আল্লাহর জন্য। সে যদি বিরত না হয় কিন্তু সে চুপ থাকে এবং সত্যিকার অর্থে কিছু না করে, তাহলে তাকে ছেড়ে দিন- তার গুনাহ তার উপরেই বর্তাবে।

কিন্তু সে যদি বাস্তবিকভাবে এবং প্রকাশ্যে এমন কিছু করে যা অপর মুসলিমদেরকে প্রতারিত করবে অথবা সে যদি সারাক্ষণ এটা নিয়ে কথা বলে, যদি সে এই নোংরা আদর্শ ছড়িয়ে বেড়ায়, তাহলে তাকে ধরিয়ে দেয়া আবশ্যক। এ হচ্ছে আল্লাহর প্রতি, তার কিতাবের প্রতি, তার রাসুলের প্রতি, মুসলিম শাসকদের প্রতি, এবং সাধারণ মানুষদের প্রতি আন্তরিক থাকার অন্তর্ভুক্ত।

তথ্যসূত্র : আল ফাতাওয়া আশ শার'ইয়িয়্যাহ ফীল ক্বাদায়া আল 'ঝসরিয়্যাহ।

লেখক : মুরাদ বিন আমজাদ, প্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশ মুসলিম উম্মা ফাউন্ডেশন।

ওডি/এনএম

প্রচলিত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ব্যখ্যা, সমাজের কোন অমীমাংসিত বিষয়ে ধর্মতত্ত্ব, হাদিস, কোরআনের আয়াতের তাৎপর্য কিংবা অন্য যেকোন ধর্মের কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সর্বপরি মানব জীবনের সকল দিকে ধর্মের গুরুত্ব নিয়ে লিখুন আপনিও- [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড