• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

জমিন বুসি বা কদম বুসি সম্পর্কে ইসলাম যা বলে (শেষ পর্ব)

  অধিকার ডেস্ক    ১৩ মার্চ ২০১৯, ১৩:০১

কদম বুসি
ছবি : প্রতীকী

কুরআন নয়, হাদীস নয়, রাসূল নয়, রাসূলের গড়া সমাজ নয়, কিন্তু এই কদম বুসি কোথা থেকে এলো? কে কদম বুসি করতে বলেছে? কে তা ইসলামী সমাজে চালু করেছে? কোনো কোনো পীরের অনুমোদনক্রমে প্রকাশিত তাসাউফ (সুফিবাদ) সংক্রান্ত কদম বুসি করা জায়েয বলে ফতোয়া দেওয়া হয়েছে। এই ফতোয়ার দলীল হিসেবে দুটি হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে। ১ম হাদীস= উম্মে আবান বিনতু ওয়াযি ইবনু যারি র. থেকে তার দাদার সূত্রে বর্ণিত। তিনি (দাদা) আব্দুল কাইসের প্রতিনিধি দলের একজন সাথী ছিলেন। তিনি বলেন, আমরা মদীনায় পৌঁছে আমাদের আরোহী থেকে দ্রুত নেমে এসে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর হাতে ও পায়ে চুমু দিলাম। হাদীসটি হাসান ইমাম আবু দাউদ র. বলেন, তবে “পায়ে চুমু খাওয়া” কথাটি বাদ দিয়ে হাদীসটি হাসান। (সুনানে আবু দাউদ- ৫২২৫)

অর্থাৎ হাদীসের শেষাংশ “পায়ে চুমু দিলাম” কথাটি অতিরিক্ত সংযোজন করা হয়েছে, তাই এটির দ্বারা কদম বুসি করার পক্ষে দলীল প্রদান করা জায়েয নয়।

২য় হাদীস= সাফওয়ান ইবনু আসসাল রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ইহুদী তার এক সঙ্গীকে নিয়ে বলল, ‘আস, আমরা এই নবীর নিকট যাই।’ তার বন্ধু বলল, নবী বলো না, তিনি যদি শুনে ফেলেন তাহলে খুশিতে তার চার চোখ হয়ে যাবে। অতঃপর তারা দুজন রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নিকটে এসে নয়টি সুস্পষ্ট নিদর্শন সম্পর্কে প্রশ্ন করল। তিনি তাদের নয়টি সুস্পষ্ট নিদর্শন সম্পর্কে বললেন। সাফওয়ান ইবনু আসসাল রা. বলেন, এ সুস্পষ্ট নয়টি নিদর্শনের কথা শুনে তারা তাঁর হাতে পায়ে চুমু দিয়ে বলল, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি নবী। আমরা আশঙ্কা করছি যে, আমরা যদি আপনার অনুসরণ করি তাহলে ইহুদীগণ আমাদেরকে হত্যা করে ফেলবে। (সুনানে তিরমিযী- ২৭৩৩, যঈফ)

অর্থাৎ প্রথমত হাদীসটি যঈফ। দ্বিতীয়ত পায়ে চুম্বনকারী লোক দুজন ইহুদী ছিল। যারা সুস্পষ্ট নিদর্শনগুলো জানার পরও মুসলমান হয়নি। তাই ঐ দুটি হাদিস দ্বারা কদম বুসি করার পক্ষে জায়েযের ফতোওয়া কোনভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়।

আগের পর্ব পড়তে : জমিন বুসি বা কদম বুসি সম্পর্কে ইসলাম যা বলে (১ম পর্ব)

কদম বুসি সম্পর্কে আর একটি কথা হলো এর রীতি এই পাক-ভারতের আলিম, পীরের দরবারে এবং পরিবারেই দেখা যায়। অন্যান্য মুসলিম সমাজে এর নাম-নিশানাও নেই। এ কারণে একথা অনায়াসেই বলা যেতে পারে যে, কদম বুসির এ কাজটি এ দেশীয় হিন্দু সমাজ থেকে মুসলিম সমাজে এসে তা মুসলমানী রূপ গ্রহণ করেছে।

মুসলিম সমাজের কদম বুসি আসলে ছিল ব্রাক্ষ্মণের “পদপ্রান্তে প্রনিপাত”। সাধারণ কোন হিন্দু ব্রাক্ষ্মণের সামনে আসলেই ব্রাক্ষ্মণ তার বাঁ পায়ের বুড়ো আঙুল উঁচু করে ধরে রাখতো, আর সেই হিন্দু তার কপাল সেই আঙুলের মাথায় ঠেকাতো। আর ব্রাক্ষ্মণ যখন সেই বুড়ো আঙুল টেনে নিতো তখনই সেই হিন্দু তার কপাল তুলে নিতে পারতো। ব্রাক্ষ্মণ ধর্মে এই রীতি আদিম।

পরবর্তীকালে এদেশের হিন্দুরা মুসলমান হলে এই হিন্দুয়ানী ব্রাক্ষ্মণ্য প্রথা “পদপ্রান্তে প্রণিপাতকে” ই মুসলমানদের জন্য কদম বুসিতে পরিণত করে দিয়েছে। এক কথায় সম্পূর্ণ হিন্দুয়ানী প্রথাকে জাল যঈফ হাদীসের মাধ্যমে পীর সাহেবান, আলিম-উস্তাদ সাহেবানের দরবার থেকে মুসলিম পরিবারে নেকির কাজ হিসেবে চালু করে দিয়েছে। সব চেয়ে বড় কথা কদম বুসি করার যে রূপটি, তা সিজদার মতোই।

আল্লামা শামী রা. তাঁর সময়কার অবস্থা অনুযায়ী এ ধরণের কাজকে “সিজদা” বলেই অভিহিত করেছেন। তিনি লিখেছেন, এমনিভাবে লোকেরা পীর, আলিম, উস্তাদ ও বড় লোকদের কদম বুসি করে। এ কাজ সম্পুর্ণ হারাম। আর যে এ কাজ করে এবং যে তাতে রাজি-খুশি হয় উভয়ে গুনাহগার। কেননা এ কাজ ঠিক মূর্তিপূজা সাদৃশ্য। (দুররে মুখতার)

মুজাদ্দিদে আলফে সানী রা. লিখেছেন- কারও সামনে মাথা নোয়ানো কুফরীর কাছাকাছি। (মাকতুবাতে ইমাম রাব্বানী। দফতর- ১-৭৭ পৃ)

বস্তুত কদম বুসির বর্তমান রীতি রাসূলের সুন্নতের বিপরীত। মানবতার পক্ষে চরম অপমাননাকর। তাই এই প্রথা বন্ধ হওয়া বাঞ্চনীয়।

লেখক : শাইখ আখতারুজ্জামান খালেদ, ইমাম ও খতীব।

প্রচলিত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ব্যখ্যা, সমাজের কোন অমীমাংসিত বিষয়ে ধর্মতত্ত্ব, হাদিস, কোরআনের আয়াতের তাৎপর্য কিংবা অন্য যেকোন ধর্মের কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সর্বপরি মানব জীবনের সকল দিকে ধর্মের গুরুত্ব নিয়ে লিখুন আপনিও- [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড