• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

তাবলীগী নিসাবের শিরক মিশ্রিত কাহিনী

  অধিকার ডেস্ক    ০১ মার্চ ২০১৯, ১৫:০৯

শিরক
ছবি : প্রতীকী

তাবলীগী জামাতের লোকেরা তাদের মুরুব্বীদের লেখা শিরক মিশ্রিত ২-৪টা কিতাবের বাইরে সহীহ আকিদাহ জানার জন্য অন্য কোনো কিতাব পড়ে না। এ কারণে বছরের পর বছর ধরে তাদের বই-পুস্তকে লেখা শিরকী কাহিনীগুলো নিজেরা পড়ে, অন্যদেরকে পড়ে শোনায়। এমনই একটি ভ্রান্ত আকিদাহর কাহিনী এবং তার বিশ্লেষণ বর্ণনা করা হলো। আল্লাহ আমাদের সবাইকে বুঝার তৌফিক দান করুন, আমিন।

"ফাজায়েলে সাদাকাত" নামক কিতাবে ২৪ নং শিরোনামে জনাব যাকারিয়া কান্ধলবী সাহেব লিখেছেন- মিশরে একজন নেকবখত লোক ছিলেন। অভাবগ্রস্থ হইয়া লোকজন তাহার নিকট আসিলে তিনি চাঁদা উসুল করিয়া তাহাকে দিয়া দিতেন।

একদা জনৈক ফকীর আসিয়া বলিল- আমার একটা ছেলে হইয়াছে। তাহার এছলাহের ব্যবস্থার জন্য আমার নিকট কিছুই নাই। এই ব্যক্তি উঠিল ও ফকীরকে অনেক লোকের নিকট লইয়া গিয়াও ব্যর্থ হইয়া ফিরিল। অবশেষে নৈরাশ হইয়া একজন দানবীর ব্যক্তির কবরের নিকট গিয়া সমস্ত কথা তাহাকে শুনাইল।

অতঃপর সেখান হইতে ফিরিয়া নিজের পকেট হইতে একটা দীনার বাহির করিয়া উহাকে ভাঙ্গাইয়া অর্ধেক নিজে রাখিল ও বাকি অর্ধেক ফকীরকে কর্জ দিয়া বলিল ইহা দ্বারা প্রয়োজন মিটাও। আবার তোমার হাতে পয়সা আসিলে আমার পয়সা আমাকে দিয়া দিও।

রাত্রি বেলায় সেই লোকটি কবরওয়ালাকে স্বপ্নে দেখিল যে, সে বলিতেছে- আমি তোমার যাবতীয় অভিযোগ শুনিয়াছি কিন্তু বলিবার অনুমতি দেওয়া হয় নাই। তুমি আমার ঘরে গিয়া পরিবারস্থ লোকদিগকে বল ঘরের অমুক অংশে যেখানে চুলা রহিয়াছে, উহার নীচে একটা চীনা বরতনে পাঁচশত আশরাফী রহিয়াছে। তাহারা যেন উহা উঠাইয়া সেই ফকীরকে দিয়া দেয়।

ভোর বেলায় সেই ব্যক্তি কবরওয়ালার বাড়িতে গেল ও তাহাদিগকে তাহার স্বপ্নের কথা শুনাইল। তাহারা বাস্তবিকই সেখান হইতে পাঁচশত আশরাফী উঠাইয়া ফকীরকে দিয়া দিল। লোকটি বলিল, ইহা একটি স্বপ্ন মাত্র। শরীয়ত মতে ইহাতে আমল জরুরি নয়। তোমরা ওয়ারিশ হিসাবে ইহা তোমাদের হক। তাহারা বলিল, বড়ই লজ্জার ব্যাপার, তিনি মৃত হইয়া দান করিতেছেন আর আমরা জীবিত হইয়াও দান করিব না? অতএব সে টাকা লইয়া ফকীরকে দিয়া দিল।

ফকীর সেখান হইতে একটা দীনারের অর্ধেক নিজে রাখিল ও অর্ধেক তাহার ঋণ পরিশোধ করিল, তারপর বলিল আমার জন্য এক দীনারই যথেষ্ট বাকিগুলি দিয়া আমি কী করিব? সে ঐগুলি ফকীরদের মধ্যে বণ্টন করিয়া দিল।

সাহেবে এতহাফ বলেন, এখানে চিন্তা করিবার বিষয় এই যে, সবচেয়ে বড় দাতা হইল কে? কবরওয়ালা না তার ওয়ারিশান? না ফকীর? আমাদের নিকটতো ফকীরই সবচেয়ে বড় দাতা, সে যেহেতু নিজে ভীষণ অভাবগ্রস্থ হওয়া সত্ত্বেও অর্ধেক দীনারের বেশি নিল না। (উৎস - ফাজায়েলে সাদাকাত, ২য় খন্ড, ৩২২ পৃষ্ঠা।) ক্বুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে এই বানোয়াট শিরকি কাহিনীর বিশ্লেষণ করেছেন মুরাদ বিন আমজাদ, তার লিখা "সহীহ আক্বীদার মানদণ্ডে তাবলিগী নিসাব" বইয়ে।

প্রিয় পাঠকবৃন্দ!

চিন্তা করে দেখুন, এ ঘটনাটা কি এই শিক্ষা দেয় না যে, যখন জীবিতদের থেকে নিরাশ হয়ে যাবে আর কোথাও কিছু না পাবে, তখন কোন দানশীলের কবরের নিকট গিয়ে সমস্ত পেরেশানির কথা বর্ণনা করো। কারণ দানশীল ব্যক্তি মৃত্যুর পরেও শুনতে পায় এবং আহ্বানে সাড়া দিতে পারে। অথচ এটা সম্পূর্ণরূপে কুরআন হাদীস পরিপন্থী বিশ্বাস এবং যা শিরকে আকবর।

মহান আল্লাহ বলেন :

﴿إِنَّكَ لَا تُسْمِعُ الْمَوْتَى﴾

অর্থ : হে নবী, আপনি মুর্দাদের কথা শুনাতে পারবেন না। (সূরা নামল : ৮০)

সম্মানিত পাঠক, সমস্ত সংকীর্ণতা দূর করে হৃদয়কে উদার করে স্বীয় জ্ঞান দ্বারা বিবেককে প্রশ্ন করুন, উপরোক্ত ঘটনাগুলো দ্বারা মাজার পূজার সবক শিখানো হচ্ছে না তো? যা প্রকাশ্য শিরক। যাকে বলে زيارة الاستعانة বা কবরবাসীর নিকট সাহায্য কামনার্থে জিয়ারত।

যেমন যুদ্ধ জয়, নির্বাচনে বিজয়লাভ, কোনরূপ সম্পদ লাভ কিংবা বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য তাদের নিকট সাহায্য কামনা করা শিরক। শায়খ হাম্মাদ ইবনু ইয়াহইয়া আন্ নাজমী বলেন, শিরকযুক্ত কবর জিয়ারত হচ্ছে এমন জিয়ারত যাতে কবরস্থ ব্যক্তিকে ডাকা হয়। তার কাছে প্রয়োজন পূরণ, বিপদ দূর করা ও সমস্যা সমাধান করার প্রার্থনা করা হয়। এই ধরনের জিয়ারতকারী ইসলাম থেকে বহিষ্কৃত। (তাওহীদ জিজ্ঞাসা ও জবাব)

এছাড়া এটা زيارة الأموات لدعاء বা সরাসরি কবরবাসীর নিকট কিছু প্রার্থনা করার নিমিত্তে জিয়ারত বুঝায়। অথচ প্রার্থনাও ইবাদাত। যেমন রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,

الدُّعَاءُ هُوَ الْعِبَادَةُ

অর্থ : দুআ হচ্ছে ইবাদাত। (সুনানে আবু দাউদ)

যা শুধু আল্লাহর জন্য নিবেদন করতে হবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য তাবলীগী নিসাবের তালীম দ্বারা অনেক মুসলিম এমন ভ্রান্ত বিশ্বাস করে থাকে যে, তথাকথিত জীবিত বা মৃত গাউস-কুতুব, আবদাল ও মৃত ওলী-আউলিয়াদের বিরাট ক্ষমতা রয়েছে। তারা বিপদ-আপদে হস্তক্ষেপ করতে পারে। এজন্য এদের কবরে বা মাজারে গিয়ে সরাসরি প্রার্থনা জানায়। এটা সরাসরি শিরকে আকবার। মহান আল্লাহ বলেন :

﴿وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّنْ يَدْعُو مِنْ دُونِ اللَّهِ مَنْ لَا يَسْتَجِيبُ لَهُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَهُمْ عَنْ دُعَائِهِمْ غَافِلُونَ﴾

ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক বিভ্রান্ত কে, যে আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুকে ডাকে যা কিয়ামত দিবস পর্যন্তও তার ডাকে সাড়া দিতে পারবে না এবং এগুলো তাদের প্রার্থনা সম্বন্ধে অবহিতও নয়? (সূরা আহকাফ : ৫)

এজন্য আল্লাহ তাআলা মুশরিকদের বাতিল উপাস্যদের লক্ষ্য করে বলেন :

﴿إِنَّ الَّذِينَ تَدْعُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ عِبَادٌ أَمْثَالُكُمْ﴾

আল্লাহকে বাদ দিয়ে তোমরা যাদেরকে ডাকো, তারা সবাই তোমাদের মতোই বান্দা। (সূরা আরাফ : ১৯৪)

আল্লাহ আরও বলেন :

﴿أَمْوَاتٌ غَيْرُ أَحْيَاءٍ وَمَا يَشْعُرُونَ أَيَّانَ يُبْعَثُونَ﴾

তারা মৃত প্রাণহীন এবং কবে পুনরুত্থিত হবে তাও জানে না। (সূরা নাহল : ২১)

মুশরিকরা যে আউলিয়াদের ডাকে তাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন :

﴿وَإِذَا حُشِرَ النَّاسُ كَانُوا لَهُمْ أَعْدَاءً وَكَانُوا بِعِبَادَتِهِمْ كَافِرِينَ﴾

কিয়ামতের দিন যখন মানুষকে একত্রিত করা হবে তখন তারা যাদেরকে ডাকতো (ওদের যারা ডাকতো তাদের) শত্রুতে পরিণত করা হবে। (সূরা আহকাফ : ৬)

﴿وَمَا يُؤْمِنُ أَكْثَرُهُمْ بِاللَّهِ إِلَّا و

লেখক : মুরাদ বিন আমজাদ।

প্রচলিত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ব্যখ্যা, সমাজের কোন অমীমাংসিত বিষয়ে ধর্মতত্ত্ব, হাদিস, কোরআনের আয়াতের তাৎপর্য কিংবা অন্য যেকোন ধর্মের কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সর্বপরি মানব জীবনের সকল দিকে ধর্মের গুরুত্ব নিয়ে লিখুন আপনিও- [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড