• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মুরাদুর রহমান ফি তাদাব্বুরে কুরআন

সূরা আল-ফাতিহা- ১, মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ৭, রুকু ১

  মুরাদ বিন আমজাদ

১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৯:৩৭

আল-কুরআনে সূরাটির আল্লাহ প্রদত্ত নাম — وَلَقَدْ آتَيْنَاكَ سَبْعًا مِنَ الْمَثَانِي وَالْقُرْآنَ الْعَظِيمَ যা পুনঃপুন পঠিত/আবৃত্ত এবং দিয়েছি মহান কুরআন। (সুরা হিজর ১৫ঃ৮৭) অর্থাৎ ‘আসসাব উল মাসানি বা নিত্য পাঠনীয় সপ্তবাক্য’— এ সূরাটি আল কুরআনের একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ সূরা। অবতরণের দিক দিয়ে পূর্ণাঙ্গ সূরারূপে এটিই প্রথম নাজিল হয়। এজন্য এ সূরা দিয়েই কুরআনুল কারিম আরম্ভ হয়েছে। এর দ্বারাই সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত সলাত আরম্ভ হয়— হে মুসলিম! জেনে রাখুন, সলাতের প্রাণ অর্থাৎ মূল উদ্দেশ্য এর মধ্যে অন্তরকে আল্লাহ তাআলার প্রতি নিবিষ্ট রাখা। সুতরাং যদি কোনো সলাত উপস্থিত ও নিবিষ্ট অন্তর ব্যতিরেকে আদায় করা হয় তাহলে তা হবে প্রাণহীন দেহের মতো অসার। এর প্রমাণ আল্লাহ তাআলার সাত আয়াত বিশিষ্ট অপর একটি সূরা আল-মাউনে বলা হয়েছে, فَوَيْلٌ لِّلْمُصَلِّينَ -الَّذِينَ هُمْ عَن صَلَاتِهِمْ سَاهُونَ অর্থ—‘সেই সব সলাত আদায়কারীর জন্য ধ্বংস অনিবার্য যারা তাদের সলাত সম্পর্কে উদাসীন।’ (১০৭: ৪,৫) এখানেإِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَّوْقُوتًا (উদাসীনতা) এর ব্যাখ্যায় বলা হয়, নির্ধারিত সময় সলাত আদায় না করা উদাসীনতা (৪:১০৩) সলাতের মধ্যে পালনীয় ওয়াজিব সম্পর্কে উদাসীনতা এবং সলাতের মধ্যে আল্লাহর প্রতি অন্তর হাজির ও নিবিষ্ঠতা করতে উদাসীনতা।

মুসলিমের সহীহ সুন্নাহতে তিনবার করে تلك الصلاة এ জাতীয় সলাতকে মুনাফিকের সলাত বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। অতএব হে মুসলিম ভাই! সঠিকভাবে অনুধাবনের চেষ্ঠা করুন। আর তার সর্বোত্তম সহায়ক হলো সহী মুসলিমে সংকলিত সুন্নাহর ঐ বর্ণনা, যেখানে ফাতিহাকেই সলাত বলে উল্লেখ করা হয়েছে অর্থাৎ ফাতিহার অপর নাম সলাত। নবী (সঃ) বলেন, আল্লাহ তাআলা বলেন—সলাত তথা ফাতিহা আমার ও আমার বান্দার মধ্যে অর্ধেক অর্ধেক ভাগ করে নিয়েছি, আর আমার বান্দা¬ যা চাইবে তা-ই দেওয়া হবে। বান্দা যখন বলে— الحمد لله رب العالمين ‘সকল প্রসংশা আল্লাহ রব্বুল আলামীনের জন্য।’ আল্লাহ তাআলা তখন বলেন, حمدنى عبدى ‘আমার বান্দা আমার প্রসংশা করলো’। যখন বান্দা বলে, الرحمن الرحيم ‘যিনি পরম করুণাময় অতি দয়ালু’; তখন আল্লাহ বলেন, اثنى على عبدى যখন বান্দা বলে, مالك يوم الدين ‘যিনি প্রতিফল দিবসের মালিক’; তখন আল্লাহ বলেন, مجدنى عبدى ‘আমার মর্যাদা বর্ণনা করলো।’ বান্দা যখন বলে, اياك نعبد واياك نستعين ‘আমরা তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই কাছে সাহায্য চাই’; তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, هذا بينى وبين عبدى ما سألএটা আমার ও আমার বান্দার মধ্যে বিভক্ত এবং বান্দার জন্য তা-ই রয়েছে যা সে চাইবে। অতঃপর যখন বান্দা বলে, اهدنا الصراط المستقيم صراط الذين انعمت عليهم غير المغضوب عليهم ولا الضالينআমাদের সরল পথ দেখাও। তাদের পথ যাদের তুমি নিয়ামত দিয়েছ, তাদের পথ নয় যারা গজবপ্রাপ্ত এবং পথভ্রষ্ঠ; তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, هذا العبدى ولعبدى ما سأل ‘এসব তো আমার বান্দার জন্য এবং আমার বান্দা যা চাইবে তার জন্য তাই রয়েছে। (সহীহ মুসলিম হা/৩৯৫) বান্দা যখন এ কথা চিন্তা করবে এবং জানতে পারবে যে, সুরা ফাতিহা দুভাগে বিভক্ত প্রথমভাগ اياك نعبد পর্যন্ত আল্লাহপাকের জন্য, আর দ্বিতীয়ভাগ সূরার শেষ পর্যন্ত যা বলে বান্দা দুআ করে, তার নিজের জন্য এবং এ কথাও যখন সে চিন্তা করবে যে যিনি এই দু‘আ তাকে শিক্ষা দিয়েছেন তিনি হলেন পরম করুনাময় আল্লাহ। তিনি তাকে এই দু‘আ পড়ার এবং প্রতি সলাতে ও রাকাআতে তা পুনর্ব্যক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। (হিজর ১৫:৯) আল্লাহ পাক দয়া ও করুনা বশত এই দু‘আ কবুলের নিশ্চয়তাও দিয়েছেন, যদি বান্দা নিষ্ঠা ও উপস্থিত চিত্তে তা করে থাকে, তখন তার নিকট স্পষ্ট উঠবে যে, অধিকাংশ লোক অবহেলা ও উদাসীনতার তাদাব্বুর না করার ফলে সলাতে নিহিত কত বড় মূল্যবান সম্পদ হারিয়ে থাকে! হে পাঠক! আমরা এই মহান সূরার কিছু মর্মার্থ এখানে পেশ করছি। আশা করি আপনি উপস্থিত চিত্তে সলাত আদায় করবেন এবং মুখে যা ব্যক্ত করবেন তাযেন আপনার অন্তর উপলদ্ধি করে থাকে। কেননা যা মুখে উচ্চারিত হয় তা যদি অন্তর বিশ্বাস না করে তাহলে এটা আমলে সালেহ হিসাবে পরিগনিত হয়না। যেমন আল্লাহ পাক বলেন: يَقُولُونَ بِأَلْسِنَتِهِم مَّا لَيْسَ فِي قُلُوبِهِمْ “তারা মুখে মুখে এমন কথা বলে যা তাদের অন্তরে নেই।” (ফাতহ ৪৮:১১) (নিসা ৪:৪৩) সরণের জন্য সলাত তাহা ২০,১৪, তাই সুন্নাহতে একে ফাতিহাতুল কিতাব বলা হয়েছে। بفاتحة الكتاب (মুত্তাফাকুন আলাইহ) আল-ফাতিহার ফাতহুন শব্দের অর্থ উন্মুক্ত করা। যা দ্বারা কোন বিষয়, কোন কাজ বা কোন গ্রন্থ শুরু করা হয় আরবি ভাষায় তাকে ‘ফাতিহা’ বলা হয়। সুরা ফাতিহা প্রথম নাযিল ও মক্কী-মাদানী হওয়ার ব্যাপারে রেওয়ায়েতগত পার্থক্য থাকলেও আল কুরআনের মতভেদ নিরসনের নীতিমালার আলোকে সমাধান হয়ে যায়। وَمَا اخْتَلَفْتُمْ فِيهِ مِن شَيْءٍ فَحُكْمُهُ إِلَى اللَّهِ “তোমরা যে বিষয়েই মতভেদ কর তার (চূড়ান্ত) ফায়সালা আল্লাহরই নিকট রয়েছে। ذَٰلِكُمُ اللَّهُ رَبِّي عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَإِلَيْهِ أُنِيبُ "ইনিই আল্লাহ, আমার ‘রব’। আমি তাঁরই উপর নির্ভর করি এবং তাঁরই অভিমুখী হই। (সুরা শুরা ৪২ঃ১০) শুরুতেই উল্লিখিত সুরা হিজর (১৫ঃ৮৭) সর্ব সম্মতিক্রমে মক্কায় অবতীর্ণ। এর মধ্যে মহান আল্লাহ বলেছেন, আমি আপনাকে দিয়েছি পুনঃপুন পঠিত সাত আয়াত বিশিষ্ট সুরা অর্থাৎ ফাতিহা। সুতরাং প্রমাণিত হলো এ সুরা ফাতিহা মক্কায় অবতীর্ণ এবং তার আয়াত সংখ্যা ৭টি। فَلِلَّهِالْحَمْدُ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য (জাসিয়া ৪৫ঃ৩৬)। অনেকে অভিমত ব্যক্ত করেছেন, সুরা ফাতিহা ও কুরআন পৃথক বিষয়। এ বিয়ষটিও কুরআন মাজীদের নীতিমালার আলোকে সমাধান হয়ে যায়। বিবাদমান বিষয়ে আল্লাহ তাআলা এবং তাঁর রাসুলের (সঃ) দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। এটাই মুমিন মুসলিমের শান বলে মহান আল্লাহ স্বীয় কিতাবের সুরা নিসা (৪ঃ৫৯) উল্লেখ করেছেন। فَإِن تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ মানুষের চিন্তাধারা ও অভিমতে বিরোধ থাকা স্বাভাবিক।

সম্পূর্ণ লেখাটির পিডিএফ ফাইল ডাউনলোড করতে লিঙ্কটি অনুসরণ করুন- ক্লিক করুন

প্রচলিত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ব্যখ্যা, সমাজের কোন অমীমাংসিত বিষয়ে ধর্মতত্ত্ব, হাদিস, কোরআনের আয়াতের তাৎপর্য কিংবা অন্য যেকোন ধর্মের কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সর্বপরি মানব জীবনের সকল দিকে ধর্মের গুরুত্ব নিয়ে লিখুন আপনিও- [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড