• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বৈদিক ধর্ম ও হজরত মুহাম্মদ (সা.) (তৃতীয় পর্ব)

  অধিকার ডেস্ক    ০২ জানুয়ারি ২০১৯, ১৪:২০

রাসূল
ছবি : প্রতীকী

অথর্ববেদে হজরত মুহাম্মদ (সা.) :

অথর্ববেদকে তার গুরুত্বের জন্য ব্রক্ষ্মবেদও বলা হয়। এ বেদের বিশ নম্বর অধ্যায়ে “কুন্তপ সুক্ত” নামে চৌদ্দটি শ্লোক রয়েছে। উচ্চ মর্যাদার অধিকারী এ শ্লোকগুলো হিন্দু ধর্মের বৃহৎ ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পাঠ করা হয় । “কুন্তপ” একটি সংস্কৃত শব্দ। “কুহ” ও “টপ” নিয়ে ইহা পঠিত। “কুহ” শব্দের অর্থ দুঃখ, এবং “টপ” শব্দের অর্থ খেয়ে ফেলা।

মাও. আব্দুল হক বিদ্যার্থী “কুন্তপ” অর্থে দুঃখ দুর্দশা নাশকারী বস্তুকে বুঝিয়েছেন। লাহোরে অবিস্থিত ডিএভি কলেজের অধ্যাপক বৈদিক (হিন্দু) পন্ডিত রাজারাম “কুন্তপ শ্লোক” সম্পর্কে বলেন, এ দশটি সুক্তকে “কুন্তপ” বলা হয়। “কুন্তপ” হচ্ছে পেটের ভেতরের গোপন অন্ত্র। এ সুক্তগুলো বিভিন্ন বিষয় নির্দেশ করে। এর বিষয় বস্তু ও অর্থ অস্পষ্ট। তবে বিংশ শতাব্দীতে “কুন্তপ সুক্তে”র অর্থ প্রকাশ হওয়া শুরু হয়েছে। (শ্রী বিজন বিহারী গোস্বামী- অর্থবেদ সংহিতা- ৩৯৬ পৃ)

অথর্ববেদের (২০/৯/৩১/১-১৪) কুন্তপ সুক্তটি নিচে উদ্ধৃত করা হলো-

১-ইদংজন্য উপশ্রুত নরাশংস স্তবিশ্যতে ষস্টিং সহস্রা নবতিং চ কৌরম আরশমেধু দন্মহে

অর্থ- ওহে নরগণ, তোমরা কর শ্রবণ প্রশংসার্হ ব্যক্তি (নরাশংস) সদা প্রশংসিত হন।

কুন্তপ সুক্তের প্রথম শ্লোকে “নরাশংস” নামে এক ঋষির উল্লেখ করা হয়েছে যিনি ষাট হাজার শত্রুর মধ্যে জন্মগ্রহণ করেন। সংস্কৃত “নরাশংস” শব্দের অর্থ প্রশংসিত। আরবীতে যার প্রতিশব্দ “মুহাম্মদ”। ইতিহাস থেকে জানা যায়, হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জন্মের সময় মক্কার লোক সংখ্যা ছিল ষাট হাজার। তিনি ইসলাম ধর্ম প্রচার করলে মক্কার এ ষাট হজার পৌত্তলিক লোকেরা নবীর একেশ্বরবাদী আদর্শের বিরোধিতা করতে থাকেন।

এ শ্লোকে “কৌরম” নামে এক ঋষির কথা বলা হয়েছে। সংস্কৃত “কৌরম” শব্দের অর্থ হলো দেশত্যাগী বা হিজরতকারী। এ শব্দের আরেকটি অর্থ হলো শান্তি স্থাপনকারী। মক্কার লোকদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে মহানবী (সা.) মক্কা ত্যাগ করে মদীনায় হিজরত করেন।

আগের পর্ব পড়তে : বৈদিক ধর্মে হজরত মুহাম্মদ (সা.) (২য় পর্ব)

মদীনা শহরে বসবাসকারী সকল গোত্রকে নিয়ে সমাজে শান্তি স্থাপন করেন। তাই এ শ্লোকে “নরাশংস ও কৌরম” বলতে হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে বুঝানো হয়েছে।

২-উষ্ট্রা যস্য প্রবাহনো বধুমস্তো দ্বিদর্শ বর্ষ্মা রথস্য নি জিহীড়তে দিব ঈস্রম না উপল্পৃস্যঃ

অর্থ- বিংশতি উষ্টধটানে শকট যাহার, স্ত্রীগণও থাকেন সঙ্গেতে তাহার। ঐ রথচুড়া স্বর্গ স্পর্শ না করে সদাই থাকে হে উহা অবনত করে।

এ শ্লোকে বলা হয়েছে এ ঋষির বাহন হবে উট। কাজেই যে যুগে ও যে দেশে উট বাহনরূপে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় সে যুগে ও সে দেশে কল্কি অবতারের আগমণ ঘটবে। ইহা সর্বজনবিদিত যে, আরব ভূমি উটের জন্য বিখ্যাত এবং মরুভূমির বাহন হিসেবে উট আরব দেশে ব্যবহৃত হয়। এ জন্য কল্কি অবতারের আগমন ঘটবে আরব দেশে।

হজরত মুহাম্মদ (সা.) সেই ব্যক্তি যিনি আরবদেশে জন্ম গ্রহণ করেছেন, উটের উপর আরোহণ করে যুদ্ধ করেছেন এবং বিভিন্ন স্থানে গমন করেছেন। এ সময় তাঁর স্ত্রীগণ ও উটের আরোহী হিসেবে তাঁর সাথে বিভিন্ন স্থানে গমন করেছেন।

এ ছাড়াও এ শ্লোকে শবে মেরাজের রাত্রে হজরত মুহাম্মদ (সা.) সপ্তাকাশের উপরে “সিদরাতুল মুন্তাহা”র পার্শ্বে আরশে মুহাল্লায় আল্লাহর সাথে কথোপকথনের বর্ণনা রয়েছে।

৩- এবা ইষায় মামহে শর্ত নিষ্কান্নদশ স্রজঃ ত্রীণি শতান্য বর্তাং সহস্রাদশ গোনাম।

অর্থ- মামহ ঋষিকে তিনি স্বর্ণা মুদ্রাশত, দশ স্বর্ণ শিরোমালা অশ্ব তিনশত। দশ সহস্র গাভী করেছিলেন দান, অতীব তেজস্বী হয় অশ্বগণ।

তৃতীয় শ্লোকে দশটি স্বর্ণের হার, একশত স্বর্ণমুদ্রা, তিনশত অশ্ব ও দশ হাজার গাভীর উল্লেখ আছে। এ শ্লোকে স্বর্ণের হার, স্বর্ণমুদ্রা, অশ্ব ও গাভী দিয়ে পার্থিব কোনো বস্তুকে বুঝানো হয়নি। রুপক অর্থে এগুলো ববহৃত হয়েছে। ঋষিরা পার্থিব বা জাগতিক বস্তুর প্রতি লালায়িত নন। একশত স্বর্ণ মুদ্রা বলতে একশত জন সাহাবীকে বুঝানো হয়েছে। যাঁরা মক্কায় শত বাধা ও নানাবিধ অত্যাচার সহ্য করে নবী (সা.) এর সহচর্য্য ত্যাগ করেননি। এ সকল সাহাবীগণ ছিলেন স্বর্ণের চেয়েও খাঁটি। এ সকল সাহাবী মদীনায় প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্রের ভিত্তি মজবুত করতে বিশেষ অবদান রেখেছিলেন। দশটি স্বর্ণের হার বলতে নবী (সা.) এর ঐ দশজন সাহাবীকে বুঝানো হয়েছে, যারা জান্নাতের সু-সংবাদ প্রাপ্ত বা “আশারায়ে মুবাশশারা” নামে পরিচিত ছিলেন। তিনশ অশ্ব বলতে নবী (সা.) বদর প্রান্তে মক্কার এক হাজার কাফের মুশরিক কুরাইশ বাহিনীর বিপরীতে তিনশত তেরজন সাহাবীর মরনপণ বদর যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে।

দশ হাজার গাভী বলতে নবী (সা.) এর নেতৃত্বে দশ হাজার সাহাবীর সমন্বয়ে ৮ম হিজরীতে মক্কা বিজয়ের ঘটনাকে বুঝানো হয়েছে। বিনা রক্তপাতে মক্কা বিজয় তৎকালিন বিশ্বের আশ্চর্য ঘটনা। এ দশ হাজার সাহাবীকে কুন্তুপ সুক্তের দশ হাজার গাভী হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। (বৈদিক ধর্ম ও হজরত মুহাম্মাদ (সা.), ৩৪৪-৩৪৫ পৃ)

লেখক : মাওলানা আখতারুজ্জামান খালেদ, ইমাম ও খতীব

প্রচলিত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ব্যখ্যা, সমাজের কোন অমীমাংসিত বিষয়ে ধর্মতত্ত্ব, হাদিস, কোরআনের আয়াতের তাৎপর্য কিংবা অন্য যেকোন ধর্মের কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সর্বপরি মানব জীবনের সকল দিকে ধর্মের গুরুত্ব নিয়ে লিখুন আপনিও- [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড