অধিকার ডেস্ক ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮, ১১:১৯
৯/ স্বচ্ছলতা প্রদান করা-
সন্তানদের অর্থনৈতিক শক্তি স্বচ্ছলতার বিষয় রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “তাদেরকে (সন্তানদেরকে) মানুষের দয়ার মুখাপেক্ষী রেখে যাওয়ার চেয়ে তুমি তোমার উত্তরাধিকারীদের স্বচ্ছল রেখে যাবে সেটাই উত্তম। (সহহি বুখারী- ১/৪৩৫, সহহি মুসলিম- ৩/১২৫১)
উল্লেখ্য যে, মনই মানুষের নিয়ন্ত্রক। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো আত্মিক ও মানসিক দিক থেকে সন্তানদের শক্তিশালী রূপে গড়ে তোলা। দৈহিক শক্তির সাথে সাথে মানসিক শক্তি ও স্থিতি আরও বেশি প্রয়োজনীয়। তাই মুসলিম সমাজের পিতা-মাতাদেরকে নিজ সন্তানদের মানসিক বিকাশের দিকে লক্ষ্য রাখা জরুরী।
১০/ বন্ধু মনোভাবাপন্ন হওয়া-
অধিকাংশ ক্ষেত্রে পিতা-মাতা নিজেদের কর্ম, বন্ধুত্ব ও সামাজিকতা নিয়ে এত ব্যস্ত থাকেন যে, সন্তানদেরকে সময় দিতে পারেন না, অথচ পিতা-মাতার সময় ও বন্ধুত্বের সবচেয়ে বেশি অধিকারী সন্তানগণ। প্রতিদিন তাদের কিছু সময় দেওয়া, তাদের মনের কথা ও সমস্যাগুলো জানা ও সমাধান দেওয়া, তাদের সাথে নিয়মিত কিছু সময় ইসলামসম্মত চিত্ত বিনোদন ও খেলাধুলায় সময় কাটানো পিতা-মাতার দায়িত্ব।
রাসূলুল্লাহ (সা.) আয়েশা রা. কে বলেন, হে আয়েশা! তুমি কোমল হও, বন্ধুভাবাপন্ন হও। কারণ আল্লাহ যদি কোনো পরিবারের কল্যাণ চান তাহলে তাদেরকে কোমলতা ও বন্ধুভাবাপন্নতা দান করেন। (সহীহুত তারগীব- ৩/১১, মুসনাদে আহমদ- ৬/১০৪, ১১২)
বারাআ রা. বলেন, আমি নবী (সা.) কে দেখেছি যে, হাসান রা. তাঁর কাঁধে বসা অবস্থায় তিনি বলেছেন, “হে আল্লাহ! আমি একে ভালবাসি। অতএব তুমিও তাঁকে ভালবাসো।” (আল আদাবুল সুফরাদ- ৪৬/৮৫)
নুমাইর ইবনে আওস রহ. বলেন, প্রবীণ সাহাবীগণ বলতেন, সততা ও যোগ্যতা আল্লাহর দান এবং শিষ্টাচার পিতৃপুরুষের দান। (আল আদাবুল মুফরাদ- ৫১/৯১)
১১/ মুখমন্ডলে আঘাত না করা-
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, “তোমাদের কেউ তার খাদেমকে শাসন করলে সে যেন তার মুখমন্ডলে আঘাত না করে।” (আল আদাবুল মুফরাদ- ৯২/১৭৩)
অতএব যেমনিভাবে খাদেমদেরকে শাসনকালে মুখমন্ডলে আঘাত করতে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে, তেমনি নিজ সন্তানদেরকেও শাসনকালে তাদের মুখমন্ডলে কোনো অবস্থাতে আঘাত (চড়, থাপ্পর মারা) করা নিষেধ।
আগের পর্ব পড়তে : ইসলামে সন্তানের অধিকার (২য় পর্ব)
আনাস রা. বলেন, সন্তান-সন্ততি ও পরিবারের সদস্যদের প্রতি স্নেহ, দয়া ও মমতা করার ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর চেয়ে বেশি কাউকে আমি দেখিনি। (সহীহ মুসলিম- ৪/১৮০৮)
১২/ বিবাহ কার্য সম্পাদন করা-
বর্তমানে আমাদের সমাজে বয়ঃপ্রাপ্ত সন্তানদেরকে সমাজের উঁচু অবস্থানে পৌঁছানোর অযুহাত দেখিয়ে অভিভাবকগণ তাদের নিজ সন্তানদের বিবাহ কার্য সম্পাদন করান না। কিন্তু এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সা.) কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন।
আবু সাঈদ ও ইবনু আব্বাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তির কোনো সন্তান (ছেলে বা মেয়ে) জন্মগ্রহণ করে, সে যেন তার উত্তম নাম রাখে, আর উত্তম আচার-আচরণ শিক্ষা দেয় এবং যখন সেই সন্তান বয়ঃপ্রাপ্ত হয় তখন যেন বিয়ে দেয়। বয়ঃপ্রপ্তির পর যদি বিয়ে না দেয় এবং ঐ সন্তান যদি কোনো পাপ করে (ব্যাভিচারের মত পাপ করে) তবে ঐ পাপের বোঝা পিতার উপর বর্তাবে। (মিশকাত- ১৩/৩১৩৮)
অতএব সন্তানদেরকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার প্রচেষ্টার সাথে সাথে যথা সময়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করানোর প্রতি মনোনিবেশ করা ফরজে আইন বা সার্বজনীন ফরজ।
১৩/ মমতা বজায় রাখা-
স্নেহ-মমতা, উপহার, উপঢৌকন ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে সকল সন্তানের মধ্যে সমতা বজায় রাখতে হবে। কোনো সন্তানকে অন্যান্য সন্তান থেকে পৃথকভাবে অতিরিক্ত স্নেহ করা বা পুত্রদের বেশি স্নেহ আর কন্যাদের কম স্নেহ করা ইসলামে কঠিনভাবে নিষেধ করা হয়েছে।
নো’মান ইবনু বাশীর রা. বলেন, তার পিতা তাকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছে এসে বলেন, আমি আমার ছেলেকে একটি খাদেম দান করেছি। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমার সকল সন্তানকেই কি তুমি এরুপ দান করেছো? তিনি বলেন, না। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, এটি ফিরিয়ে নাও। (সহীহ মুসলিম- ৩/১২৪১-৪২)
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “তোমাদের সন্তানদের মধ্যে সমতা বজায় রাখবে।” (সুনানে আবু দাউদ- ৩/২৯৩)
আল্লাহ আমাদেরকে সন্তান-সন্তানাদিদের সাথে ইসলামী অনুশাসন অনুযায়ী শিষ্টাচার পালন করার তওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : মাওলানা আখতারুজ্জামান খালেদ, ইমাম ও খতীব
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড