• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

জাল হাদিসের খপ্পরে রাসূলুল্লাহ (সা.) (২য় পর্ব)

  অধিকার ডেস্ক    ২৮ নভেম্বর ২০১৮, ১৩:৪১

রাসূল
(ছবি : প্রতীকী)

আরশের গায়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নাম-

উমার বিন খাত্তাব রাঃ. এর সূত্রে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আদম (আঃ.) যখন (নিষিদ্ধ গাছের ফল খেয়ে) ভুল করে ফেলেন, তখন তিনি আল্লাহর কাছে প্রার্থণা করে বললেন, হে প্রভু! আমি মুহাম্মদ এর হক/উসিলা অধিকার দিয়ে আপনার কাছে প্রার্থণা করছি যে, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।

তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, হে আদম! তুমি কিভাবে মুহাম্মদ-কে চিনলে? আমি তো এখনো তাঁকে সৃষ্টিই করিনি? আদম (আঃ) বললেন, হে প্রভু! আপনি যখন আমাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেন এবং আমার মধ্যে আপনার রুহ ফুঁ দিয়ে প্রবেশ করান, তখন আমি মাথা তুলে দেখলাম আরশের খুঁটি সমূহের ওপর লিখা রয়েছে “লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূল্লাহ”।

এতে আমি জানতে পারলাম যে, আপনার সবচেয়ে প্রিয় সৃষ্টি বলেই আপনার নামের সাথে তাঁর নামকে সংযুক্ত করেছেন। তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, হে আদম! তুামি ঠিকই বলেছ, তিনিই আমার সবচেয়ে প্রিয় সৃষ্টি। তুমি আমার কাছে তাঁর হক/উসিলা অধিকার দিয়ে ক্ষমা চাও, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম। মুহাম্মদ (সা.) না হলে আমি তোমাকে সৃষ্টি করতাম না। (মুস্তাদরাক আল হাকিম- ২/৬৭২)

আরও পড়ুন : জাল হাদিসের খপ্পরে রাসূলুল্লাহ (সা.) (১ম পর্ব)

এ হাদিসটির সনদে (সূত্রে) দু’জন বর্ণণাকারী রয়েছেন, আবুল হারিস আব্দুল্লাহ ইবনে মুসলিম আল ফিহরী অপরজন আব্দুর রহমান ইবনে যাইদ ইবনে আসলাম। বর্ণণাকারী আবুল হারিস একজন অত্যন্ত দুর্বল রাবী। আর আব্দুর রহমান ইবনে যাইদ ইবনে আসলাম (১৮২ হিঃ) খুবই দুর্বল ও অত্যন্ত অনির্ভরযোগ্য হাদিস বর্ণনাকারী ছিলেন। মুহাদ্দীসগণ তাঁর বর্ণিত হাদিস গ্রহণ করেননি, কারণ তিনি কোনো হাদিস ঠিকমত বলতে পারতেন না, সব উল্টোপাল্টো বর্ণনা করতেন।

ইমাম হাকিম রাঃ. বলেছেন, আব্দুর বহমান ইবনে যাইদ ইবনে আসলাম তাঁর পিতার সূত্রে কিছু জাল বা মাউযূ হাদিস বর্ণনা করেছেন, (ইমাম হাকিম,আল মাদখাল- ১৫৪ পৃ)

ঈসা আঃ. এর সুসংবাদ-

আব্দুল্লহ ইবনে আব্বাস রাঃ. বলেন, মহান আল্লাহ ঈসা আঃ. এর প্রতি ওহী প্রেরণ করেছেন, তুমি মুহাম্মদের উপর ঈমান আনো এবং তোমার উম্মতের যারা তাকে পাবে তাদেরকে তাঁর প্রতি ঈমান আনার নির্দেশ প্রদান কর। মুহাম্মদ (সা.) না হলে আদমকে সৃষ্টি কারতাম না । মুহাম্মদ (সা.) না হলে জান্নাত ও জাহানানাম সৃষ্টি করতাম না, আমি পানির উপরে আরশ সৃষ্টি করেছিলাম। তখন আরশ কাঁপতে শুরু করে। তখন তার ওপরে লিখলাম “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ”। ফলে তা শান্ত হয়ে যায়। (মুস্তাদরাক আল হাকিম- ২/৬৭১)

ইমাম যাহাবী ও ইমাম ইবনু হাজার আসক্বালানী রঃ. বলেন, এটি আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাঃ. এর নামে বানানো জাল হাদিস। (মীযানুল ই’তিদাল- ৫/২৯৯, লিসানুল মীযান- ৪/৩৫৪)

আমার পরে নবী নেই তবে-

কুরআন কারীমে রাসূলুল্রাহ (সা.) কে শেষ নবী বলে ঘোষণা করা হয়েছে, সকল হাদিস গ্রন্থে বিশুদ্ধ সনদে অসংখ্য সাহাবী থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণিত অগনিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে তিনিই নবীদের শেষ নবী। তাঁর পরে কোন নবী হবে না। কিন্তু দ্বিতীয় হিজরী শতকে মুহাম্মদ ইবনু সাঈদ নামক এক যিনদীক (পাপিষ্ঠ) বলে, তাকে হুমাইদ বলেছেন, তাকে আনাস ইবনু মালিক রাঃ. বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমি শেষ নবী আমার পরে নবী নেই, তবে আল্লাহ যদি চান। (ইবনুল জাওযী, আল-মাউযূআ’ত- ১/২০৬, ইবনু আর-রাক, তানযীহুশ শারীআহ- ১/৩২১, সুয়ূতী আল-লাআ-লী-১/২৬৪) এ যিনদীক ছাড়া কেউই এ অতিরিক্ত বাক্যটি “তবে আল্লাহ যদি চান” বলেননি। কোন হাদিস গ্রন্থেও এ বাক্যটি পাওয়া যায় না।

শুধু এ যিনদীকের জীবনীতে ও মিথ্যা হাদিস গ্রন্থে মিথ্যাচারের উদাহরণ হিসেবে এ মিথ্যা কথাটি উল্লেখ করা হয়।

লেখক : মাওলানা আখতারুজ্জামান খালেদ, ইমাম ও খতীব।

প্রচলিত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ব্যখ্যা, সমাজের কোন অমীমাংসিত বিষয়ে ধর্মতত্ত্ব, হাদিস, কোরআনের আয়াতের তাৎপর্য কিংবা অন্য যেকোন ধর্মের কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সর্বপরি মানব জীবনের সকল দিকে ধর্মের গুরুত্ব নিয়ে লিখুন আপনিও- [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড