• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩১ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মুহাম্মদ (সা.) এর অলৌকিক নিদর্শন বা মোজেজা (৪র্থ পর্ব)

  অধিকার ডেস্ক    ২২ নভেম্বর ২০১৮, ১৩:৩৮

রাসূল
ছবি : প্রতীকী

মহান আল্লাহ তাআলার দরবারে মানব জাতির সৃষ্টির শুরুতে যার মর্যাদা কথা লিপিবদ্ধ হয়েছিল, সেই নবী (সা.) এর জন্ম ও জীবনীর সামান্য কিছু আলোকপাত করা হচ্ছে।

মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, (ইব্রাহীম ও ইসমাঈল আ. দুআ করেছিলেন) হে আমাদের রব! আপনি আমাদের দুজনকে আপনার নিকট আত্মসমর্পনকারী (মুসলিম) ও আমাদের বংশ থেকে আপনার নিকট আত্মসমর্পনকারী (মুসলিম) একটি উম্মত বানান। (সূরা বাকারা- ১২৮)

মহান আল্লাহ তাআলা অন্যত্রে বলেন, আর যখন মারইয়াম পুত্র ঈসা বলেছিল, হে বনি ইসরাঈল! আমি তোমাদের প্রতি পাঠানো আল্লাহর রাসূল, আমার পূর্বে তোমাদেরকে যে তাওরাত দেওয়া হয়েছে আমি এর সত্যায়নকারী এবং এমন এক রাসূলের সু-সংবাদদাতা, যিনি আমার পরে আসাবেন, যার নাম হবে আহমদ। (সূরা আসস্বফ- ০৬)

সাহাবী ইরবাদ ইবনে সারিয়া রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি, যখন আদম তাঁর কাদার মধ্যে লুটিয়ে রয়েছেন, (তাঁর দেহ তৈরি করা হয়েছে কিন্তু রূহ প্রদান করা হয়নি) সেই অবস্থাতেই আমি আল্লাহর নিকট উম্মুল কিতাবে (কুরআনে) খাতামুন্নাবিইয়ীন বা শেষ নবী রূপে লিখিত। আমি তোমাদেরকে এর ব্যাখ্যা সম্পর্কে জানাব, তা হলো আমার পিতা ইব্রাহীমের দুআ, ঈসার সু-সংবাদ, এবং আমার আম্মার দর্শন।

তিনি যখন আমাকে জন্ম দান করেন, তখন দেখেন যে, তার মধ্যে থেকে একটি নূর বা আলো বের হলো, যার আলোর জন্য সিরিয়ার প্রাসাদগুলো আলোকিত হয়ে গেল। (সহীহ ইবনে হিব্বান- ১৪/৩১৩)

অর্থাৎ জাহিলিয়াতের ঘোর তমাসায় আচ্ছন্ন অর্ধ শতাব্দী কালের আবর্তিত অন্ধকারকে দূরীভূত করে গোটা বিশ্বকে যিনি নবুওয়্যাতের আলোকছটায় উদ্ভাসিত করবেন। কুল মাখলুকাতের নয়নের মনি আমেনার দুলাল দুনিয়ায় পদার্পনের সাথে সাথে এটি ছিল তাঁর বিস্ময়কর পূর্বাভাস। আবু হুরায়রা রা. বলেন, সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! (সা.) কখন আপনার জন্য নবুওয়াত অবধারিত হয়েছে? তিনি বললেন, যখন আদম দেহ ও রুহের মধ্যে ছিলেন। (সুনানে তিরমিযী, হা- ১/৩৬০৯)

আবু কাতাদা রা. বলেন, রাসূল (সা.) কে সোমবার দিন রোযা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়। তিনি বললেন, এই দিনে (সোমবার) আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং এই দিনে নবুওয়াত লাভ করেছি। (সহীহ মুসলিম- ২/৮১৯)

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসূল (সা.) সোমবারে হাজরে আসওয়াদ উত্তোলন করেন, সোমবারে নবুওয়াত লাভ করেন, সোমবারে মক্কা থেকে হিজরত (দেশ ত্যাগ) করে মদীনার পথে রওনা করেন, সোমবারে মাদীনা পৌঁছান এবং সোমবারে মৃত্যুবরণ করেন। (মুসনাদে আহমাদ, হা- ২৫০৬-১৪/১৭২-১৭৩)

কায়েস ইবনু মাখরামা রা. বলেন, আমি ও আল্লাহর রাসূল দুজনেই “হাতির বছরে” জন্মগ্রহণ করেছি। উসমান ইবনু আফফান রা. কুবাইস ইবনু আশইয়াম রা.কে প্রশ্ন করেন, রাসূল (সা.) বড় না আপনি বড়? তিনি উত্তরে বলেন, রাসূল (সা.) আমার বড়, আমি তাঁর পরে জন্মগ্রহণ করেছি। রাসূল (সা.) “হাতির বছরে” জন্মগ্রহণ করেছেন। (সুনানে তিরমিযী, হাঃ-২/৩৬১৯)

আগের পর্ব পড়তে : মুহাম্মদ (সা.) এর অলৌকিক নিদর্শন বা মোজেজা (৩য় পর্ব)

অর্থাৎ যে বছর আবরাহা হাতি নিয়ে কাবা ঘর ধ্বংসের জন্য মক্কা আক্রমণ করেছিল সেই বছরকে “হাতির বছর” বলা হয়। ঐতিহাসিকদের মতে সে বছর ৫৭০ বা ৫৭১ খ্রিস্টাব্দ ছিল। রাসূল (সা.) কোন মাসের কত তারিখে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, সে সম্পর্কে হাদীস গ্রন্থ থেকে কিছুই জানা যায় না।

সাহাবীগণের মাঝেও এ বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট মত প্রচলিত ছিল না। এ কারণে পরবর্তী যুগে আলেম ও ঐতিহাসিকগণ তাঁর জন্ম তারিখ সম্পর্কে অনেক মতভেদ করেছেন। ঐতিহাসিক ও সীরাত (জীবনী) লেখকগণ এ বিষয়ে বারটিরও বেশি মতামত উল্লেখ করেছেন। জন্ম মাসের বিষয়েও আটটি মতামত পাওয়া যায়। প্রত্যেক মতের পক্ষে কোনো কোনো সাহাবী বা তাবিয়ী থেকে মতামত বর্ণনা করা হয়েছে।

তাঁর মাতা তাঁর নাম রাখেন আহমাদ। তাঁর দাদা আব্দুল মুত্তালিব তাঁর নাম রাখেন মুহাম্মাদ। রাসূল (সা.) এর জন্ম নিঃসন্দেহে উম্মতের জন্য মহা আনন্দের বিষয়। তবে এ আনন্দ প্রকাশ যদি রাসূল (সা.) ও তাঁর সাহাবীগণের সুন্নত অনুসারে হয় তাহলে তাতে নেকী লাভ হবে। অর্থাৎ রাসূল (সা.) তাঁর জন্মগ্রহণের দিনে রোজা রেখেছেন।

অতএব আমরা যে কোনো “জায়েয” পদ্ধতিতে “জায়েয” খাবার খেতে পারি, তাতে খাবারের মজা, পুষ্টি ও আনন্দ লাভ করব। তবে “সুন্নত” পদ্ধতিতে “সুন্নত” খাবার খেলে মজা, পুষ্টি, আনন্দ ও অতিরিক্ত নেকী লাভ করব। অনুরূপভাবে রাসূল (সা.) এর “মিলাদ” বা জন্মগ্রহণ রাসূল (সা.) ও সাহাবীগণের সুন্নত অনুসারে করতে পারলে আমরা এতে আনন্দ এবং অফুরন্ত নেকি ও বরকত লাভ করতে পারব।

নবী (সা.) এর জন্ম সোমবারে। আমরা সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখতে পারি। এতে আমাদের ঐ দিনের আমল রোজারত অবস্থায় আল্লাহর দরবারে পেশ করা হবে, আর রাসূল (সা.) এর “মিলাদ” বা জন্মগ্রহণের দিনও পালন করা হবে। তাতে নেকি আর বরকত দুটোই লাভ হবে।

যেমন রাসূল (সা.) বলেছেন, সোমবার ও বৃহস্পতিবার বান্দার আমলসমূহ আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়। অতএব আমি চাই যে, আমার আমল রোজারত অবস্থায় পেশ করা হোক। (সুনানে তিরমিযী, হা- ৭৪৭)

রাসূল (সা.) ও সাহাবীগণের সুন্নত ব্যাতিরেকে যে কোনো নিয়মে নেকির আশায় করা সকল প্রকার ইবাদত-বন্দেগি বিদআত পরিত্যাজ্য।

লেখক : মাওলানা আখতারুজ্জামান খালেদ, ইমাম ও খতীব।

প্রচলিত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ব্যখ্যা, সমাজের কোন অমীমাংসিত বিষয়ে ধর্মতত্ত্ব, হাদিস, কোরআনের আয়াতের তাৎপর্য কিংবা অন্য যেকোন ধর্মের কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সর্বপরি মানব জীবনের সকল দিকে ধর্মের গুরুত্ব নিয়ে লিখুন আপনিও- [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড