• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মুহাম্মদ (সা.) এর অলৌকিক নিদর্শন বা মোজেজা (২য় পর্ব)

  অধিকার ডেস্ক    ১৩ নভেম্বর ২০১৮, ১২:১৪

রাসূল
ছবি : প্রতীকী

৭। শিশু মুহাম্মদ-

আরবের শহর বাসীদের নিয়ম ছিল যে, তারা তাদের শিশুদেরকে শহরের বিভিন্ন রোগব্যাধি হতে নিরাপদ রাখার উদ্দেশ্যে দুধ পান করানোর জন্য গ্রামের নারীদের কাছে পাঠিয়ে দিতেন। যাতে শিশুদের দেহ মজবুত ও বলবান রূপে গড়ে ওঠে। আরও একটি উদ্দেশ্য এই ছিল যে, শিশুরা ছোটকাল থেকেই যেন বিশুদ্ধ আরবিভাষা শিক্ষা লাভ করতে পারে।

এই রীতি অনুযায়ী আব্দুল মোত্তালিব তাঁর নাতি শিশু মুহাম্মদ (সা.)কে বনু সা’দ গোত্রে হালিমা বিনতে জুয়াইবের কাছে সোপর্দ করেন। দুধ পান করানোর সময় ধাত্রী হালিমা রাসূল (সা.) এর বরকত সংক্রান্ত ঘটনা দেখে হতবাক হয়ে যান।

ধাত্রী হালিমা বলেন, আমি আমার স্বামীর সাথে কোলের শিশুসহ একটি রোগাক্রান্ত গাধার পিঠে চড়ে শিশু লাভের জন্য মক্কায় রওয়ানা হলাম। তখন দুর্ভিক্ষ চলছিল। চতুর্দিকে অভাবের হাহাকার চলছিল। আমাদের কাছে একটি উটনী ছিল। যেমন আমার বুকে দুধ ছিল না তেমনি উটনীর ওলানেও দুধ ছিল না। ক্ষুধার তাড়নায় কোলের শিশুটি ছটফট করছিল আমিও রাত্রে এতটুকু ঘুমাতে পারছিলাম না। তবে আমাদের দুর্ভিক্ষের অবসান ঘটবে এ আশায় আমরা দিন কাটাচ্ছিলাম।

আমরা যথাস্থানে পৌঁছানোর পর আমাদের কাফেলার কাছে শিশু মুহাম্মদ (সা.)কে পেশ করা হইল। কিন্তু এতিম হওয়ার কারণে সকলেই তাঁকে নিতে অস্বীকার করল। পরিশেষে খালি হাতে ফেরার সময় আমার স্বামীকে বললাম, একেবারে শূন্য হাতে ফেরার চেয়ে এতিম শিশুকে নিয়ে যাওয়া ভালো। আমার স্বামী তাতে রাজি হয়ে বলল, তার উছিলায় আল্লাহ আমাদেরকে বরকত দিতে পারেন। অতপর আমি গিয়ে এতিম শিশুকে নিয়ে আসলাম।

ধাত্রী হালিমা বলেন, যখন ঐ শিশুকে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা হলাম, তখন আমার রোগাক্রান্ত দুর্বল গাধাটি সুস্থ সবল হয়ে দ্রুত গতিতে কাফেলার সবার আগে চলতে লাগল, আমার শূন্য স্তন দুধে পরিপূর্ণ হয়ে গেল। বাড়িতে পৌঁছার পর কোলের শিশুটি তৃপ্তি সহকারে দুধ পান করার পর শিশু মুহাম্মদও দুধ পান করে নির্বিঘ্নে ঘুমিয়ে পড়ল।

এ দিকে আমার স্বামী যখন দুধ শূন্য উটনীর ওলানে হাত দিলেন তখন সেই ওলানেও দুধে পরিপূর্ণ হয়ে আছে। তিনি এত বেশি পরিমাণে দুধ দোহালেন যে, আমরা সকলে তৃপ্তি সহকারে দুধ পান করে ঘুমিয়ে পড়লাম এবং খুব আরামে রাত কাটিয়ে দিলাম। সকালে আমার স্বামী বললেন, আল্লাহর কসম! তুমি নিশ্চয়ই একটি বরকতপূর্ণ শিশু লাভ করেছ। আমি বললাম, আমারও তাই মনে হয়। (ইবনে হিশাম- ১/১৬২-৬৪)

আগের পর্ব পড়তে : মুহাম্মদ (সা.) এর অলৌকিক নিদর্শন বা মোজেজা (১ম পর্ব)

৮। সিনা চাক-

আনাস রা. বলেন, দুই বছর বয়সে দুধ পান ছাড়ার পরও বনু সা’দ গোত্রেই অবস্থান করছিলেন। শিশু মুহাম্মদ ৪ বছর বয়সে অন্যান্য শিশুদের সাথে খেলা করছিলেন। হঠাৎ জিবরাঈল আ. তাঁকে ধরে চিত করে শুইয়ে দিলেন এবং তাঁর বুক চিরে হৃৎপিণ্ড (কলব) বাহির করে তার থেকে একটি কালো অংশ পৃথক করে ফেলে দিয়ে জিবরাঈল আ. বলেন, এটি তোমার মধ্যে শয়তানের অংশ ছিল।

অতপর হৃৎপিণ্ডিটি যমযমের পানি দিয়ে ধুয়ে যথাস্থানে প্রতিস্থাপন করে বুককে মিলিয়ে দিলেন। এই দৃশ্য দেখে অন্যান্য শিশুরা ভয়ে দৌড়ে গিয়ে হালিমাকে সংবাদ দিল যে, আমাদের মুহম্মদ (সা.)কে কে যেন মেরে ফেলেছে। একথা শুনে হালিমা দৌড়ে এসে দেখল যে শিশু মুহাম্মদ বিবর্ণ চেহারায় বসে আছেন। (সহীহ মুসলিম)

৯। তরুণ মুহাম্মদ-

ইবনে ইসহাক এর বর্ণনায় জানা যায় যে, হযরত খাদীজা বিনতে খুয়াইলিদ রা. অভিজাত বংশীয় এবং ধনবান বিধবা মহিলা ছিলেন। তিনি বিভিন্ন লোক দ্বারা পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করাতেন। যার একটি লভ্যাংশ নিজে রাখতেন এবং একটি অংশ সেই লোককে দিতেন যে পণ্য বিক্রয় করত। হযরত খাদীজা রা. হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর চারিত্রিক সত্তা এবং অন্যান্য গুণাবলীর কথা শুনে তাঁকে নিজের ব্যবসায় নিয়োগের জন্য প্রস্তাব পাঠান এবং সঙ্গে নিরাপত্তার জন্য তাঁর সাথে তাঁর কৃতদাস মায়সারাকেও সঙ্গী হিসেবে পাঠানোর প্রাস্তাব দেন।

আর অন্যান্য লোকদিগকে যে লভ্যাংশ দেন, তাঁকে তাদের চেয়ে বেশি দেবেন বলেন। হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর প্রস্তাব গ্রহণ করে পণ্য বিক্রয়ের জন্য সিরিয়ার উদ্দেশে রওয়ানা হন। হযরত খাদীজা রা এর ব্যবসায়ীক পণ্যসামগ্রী নিয়ে যখন সিরিয়া থেকে ফিরে আসছিলেন তখন প্রচণ্ড রোদের সময় হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর মাথার উপরে দু’জন ফেরেশতা ছায়া বিস্তার করে চলছিল। এ বিস্ময়কর দৃশ্য দেখে কৃতদাস মায়সারা হতবাক হয়ে পড়েন এবং সফর শেষে হযরত খাদীজা রা. এর কাছে ঘটনা ব্যক্ত করেন। (ইবনে হিশাম- ১/১৮৭-১৮৮)

চলবে...

লেখক : মাওলানা আখতারুজ্জামান খালেদ, সাবেক ইমাম ও খতীব।

প্রচলিত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ব্যখ্যা, সমাজের কোন অমীমাংসিত বিষয়ে ধর্মতত্ত্ব, হাদিস, কোরআনের আয়াতের তাৎপর্য কিংবা অন্য যেকোন ধর্মের কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সর্বপরি মানব জীবনের সকল দিকে ধর্মের গুরুত্ব নিয়ে লিখুন আপনিও- [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড