অধিকার ডেস্ক ১৯ আগস্ট ২০১৮, ১৬:৪৫
কুরবানি দ্বিতীয় হিজরীতে সংবিধিবদ্ধ হয়েছে। (আল মাযাহীবিহীবিল আরবাআ- ৪০০ পৃঃ) নিঃসন্দেহে কুরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, আপনি আপনার প্রতিপালকের জন্য সালাত আদায় করুন এবং কুরবানি করুন। (সূরা কাওছার- ২)
১। কুরবানির ফজিলত-
নিঃসন্দেহে কুরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। আল্লাহ তাআলা বলেন, প্রত্যেক জাতির জন্য আমি কুরবানির নিয়ম করে দিয়েছি, যাতে তারা আল্লাহর নাম স্বরণ করতে পারে, যে সমস্ত পশু তিনি রিযিক হিসেবে দিয়েছেন তার উপর। (সূরা হজ- ৩৪)
রাসূল (সা.) বলেছেন, কুরবানি দেওয়ার সামর্থ থাকার পরও যে ব্যক্তি কুরবানি না দেয়, সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটবর্তী না হয়। (ইবনে মাজাহ, হা- ৩১১৪/২৫৩২)
রাসূল (সা.) বলেন, হে লোক সকল! প্রত্যেক বাড়িওয়ালার যিম্মায় প্রত্যেক বছর কুরবানি রয়েছে। (আবু দাউদ, হাঃ - ২৭৭১)
২। ক) কুরবানি করার বিধান-
রাসূল (সা.) বলেছেন, যদি তোমাদের মধ্যে কেউ কুরবানি করার নিয়ত করে তবে জিলহজ মাসের নতুন চাঁদ দেখার পর সে যেন কুরবানি না দেওয়া পর্যন্ত তার চুল ও নখ না কাটে। (সহীহ মুসলিম, হাঃ- ৩/১৫৬৫-১৫৬৬)
খ) কুরবানির পশুর বয়স-
রাসূল (সা.) বলেন, তোমরা দুধের দাঁত ভেঙে নতুন দাঁত ওঠা (মুসিমন্নাহ) পশু ব্যতিত যবেহ করো না। (সহীহ মুসলিম, হাঃ ৩৬৩১)
উটের বয়স পূর্ণ পাঁচ বছর, গরুর বয়স পূর্ণ দুই বছর, ছাগলের বয়স পূর্ণ এক বছর হতে হবে। ( তাওজিহুল ফিকহি ফিদ্দীন- ১১৮ পৃাঃ)
৩। যে সব দোষযুক্ত পশু দ্বারা কুরবানি করা অবৈধ-
রাসূল (সা.) বলেন, চার প্রকার দোষযুক্ত পশু কুরবানির ক্ষেত্রে অবৈধ। ১- কানা, যার কানা হওয়া স্পষ্ট। ২- যার রুগ্নতা প্রকট। ৩- যার খোড়া হওয়া সন্দেহাতীত। ৪- মেদ শূন্য, গুদাহীন ভগ্ন অঙ্গ বিশিষ্ট। (আবু দাউদ, হাঃ- ২৪২০)
৪। শিংবিহীন পশু-
হুজ্জিয়া বিন আদী হতে বর্ণিত, তিনি আলী রাঃ হতে বর্ণনা করেন, আলী রাঃ কে জিজ্ঞাসা করা হল গরু সম্পর্কে, ওটা ভাগে কুরবানি করা যায় কিনা? তিনি বললেন, সাত জনের পক্ষ থেকে কুরবানি দেওয়া যাবে। লোকটি বলল, শিং ভাঙ্গা গরু কি কুরবানি দেওয়া যাবে? তিনি বললেন, ওটা তোমার কোন ক্ষতি করবে না।
৫। কুরবানির মুস্তাহাব-
ইমাম নাওয়াভী রঃ কুরবানি পূর্ণাঙ্গকারী ভাল গুণ সমূহকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন।
ক) মোটাতাজা-
আল্লাহ তাআলা বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর নিদর্শনকে বড় করে দেখবে সেটা বাস্তবিকই অন্তরের পরহেজগারিতা। ( সূরা হজ- ৩২)
এ আয়াত দ্বারা ইমাম শাফিয়ী রঃ কুরবানির পশুকে বড় করা ও মোটাতাজা করার দলিল দিয়েছেন। (ফিকহুল উযহিয্যা-৭৮ পৃঃ)
খ) সর্বোত্তম পশু-
নবী (সা.) বলেন, জুমআর দিনে সর্বপ্রথম আগমণকারী উট কুরবানিকারীর সমতুল্য, তৎপরে আগমণকারী গরু কুরবানিকারীর সমতুল্য, তৎপরে আগমণকারী ছাগল/মেষ কুরবানিরকারীর সমতুল্য নেকী লাভ করল। (সহীহ মুসলিম. হাঃ- ৮৫০)
অর্থাৎ সর্বোত্তম পশু হলো যথাক্রমে উট, গরু, ছাগল/মেষ।
গ) রং এর দিক থেকে-
নবী (সা.) দুটি সাদা কালো রং মিশ্রিত সাদা রং এর ভেড়া কুরবানি করেছিলেন। ( তিরমিযী, হা- ১৪১৬)
৬। একটি গোটা পশু একটি পরিবারের জন্য যথেষ্ট-
নবী (সা.) একটি ছাগল দ্বারা তার পরিবারের পক্ষ থেকে কুরবানি করতেন। (সহীহ বুখারী, হা-৭২১০)
৭। শরিক কুরবানি-
জাবির বিন আবদুল্লাহ রাঃ হতে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, গরুতে সাত জনের পক্ষ হতে উটেও সাত জনের পক্ষ থেকে কুরবানি যথেষ্ট। (আবু দাউদ, হাঃ- ২৪২৫/২৮০৮)
নবী (সা.) তাঁর স্ত্রীদের পক্ষ হতে গরু কুরবানি করেছিলেন। (সহীহ বুখারী, হা- ৫৫৪৮,৫৫৫৯) শা’বী হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি ইবনু উমার রাঃ কে প্রশ্ন করলাম, উট ও গরুতে কি সাত জনের পক্ষ হতে কুরবানি দেওয়া যায়? তিনি বললেন, হে শা‘বী! তার কি সাতটি আত্মা আছে? শা‘বী বলেন, আমি বললাম, মুহাম্মদ (সা.) এর অন্যন্যা সাহাবীগনতো বলেন যে, রাসূল (সা.) উটকে সাত জনের পক্ষ থেকে এবং গরুকেও সাত জনের পক্ষ থেকে কুরবানি দেওয়া সুন্নত করেছেন। এটা শুনে ইবনু উমার রাঃ এক ব্যক্তিকে বললেন এ রকমই কি তারা বলেন হে অমুক! লোকটি বলল, জি হ্যাঁ। ইবনু উমার রাঃ তখন বলেন, এটা তবে আমি অনুধাবন করতে পারিনি। (ফাতহুল বারী-৩/৬২৫, মাজমাউয যাওয়ায়িদ-৩/২২৬)
৮। কতদিন পযর্ন্ত কুরবানি কর বৈধ-
নবী (সা.) বলেন, আইয়ামে তাশরীকের প্রত্যেক দিনে (১০,১১,১২,১৩ তারিখে) কুরবানি করা সুন্নত। (সিলসিলাতুল আহাদীস সহীহাহ, হা- ২৪৭৬)
৯। কুরবানি করা পযর্ন্ত অনাহার থাকা-
নবী (সা.) কুরবানির দিন ঈদগাহ থেকে ফিরে না আসা পর্যন্ত আহার করতেন না। ( ইবনু মাজাহ, হা- ১৭৪৬/১৭৫৬)
নবী (সা.) বলেন, যে কুরবানি করে সে যেন তার কুরবানিকৃত পশুর মাংস দ্বারা আহার করে। (সিলসিলাতুল আহাদীস সহীহাহ, হা- ৩৫৬৩)
আল্লামা আহামদ শাকির রঃ বলেন, অত্র হাদীস প্রমাণ করে যে, কুরবানিদাতার জন্য আপন কুরবানির পশুর মাংস খাওয়া মুস্তাহাব। (মুসনাদে আহামদ- ২/৩১৯)
১০। কুরবানির মাংস বন্টন-
১- নবী (সা.) বলেন, তোমরা কুরবানির মাংস খাও, জমা রাখো এবং সদাকাহ কর। (মুসলিম, হা- ১৯৭১, আবু দাউদ, হা- ২৮১২)
২- নবী (সা.) বলেন, তোমরা কুরবানির মাংস খাও, অন্যকে খাওয়াও এবং জমা রাখো। (সহীহ বুখারী হা- ৫৫৬৯)
নবী (সা.) বলেন, তোমরা কুরবানির গোস্ত খাও, পাথেয়ও হিসেবে গ্রহণ কর এবং জমা রাখ। (সহীহ মুসলিম, হা-১৯৭২)
১১। তিন দিনের বেশি কুরবানির গোস্ত জমা রাখা-
নবী (সা.) বলেন, আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম এখন তোমরা তার যিয়ারত কর। তোমাদেরকে তিনদিনের উর্ধ্বে কুরবানির গোস্ত জমা করে রাখতে ও খেতে নিষেধ করেছিলাম এখন তোমাদের যতদিন ইচ্ছা তা খাও এবং জমা করে রাখো। (সহীহ মুসলিম, হা-১৯৭৭)।
১২। কুরবানির চামড়া ও ঝুল প্রভৃতির বিধান-
আলী বিন আবু তালিব রাঃ হতে বর্ণিত, নবী (সা.) তাঁকে এই মর্মে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, তিনি যেন তার উটগুলির দায়িত্ব ভার নেন এবং তার কুরবানিকৃত উটের মাংস, চামড়া এবং তার ঝুল প্রভৃতি ফকির মিসকিনদের মাঝে বন্টন করে দেন এবং উহার মাংস প্রস্তুত বাবদ কসাইকে যেন কিছুই না দেন। ( সহীহ বুখারী, হা-১৬০২, সহীহ মুসলিম, হাঃ- ২৩২১)। তবে সে যদি ফকির মিসকিন হয় তাহলে তাকে সে হিসেবে মাংস দেওয়া যাবে, মজুরী হিসেবে নয়। (সহীহ মুসলিম, হা- ২৩২০)
লেখক : মাওলানা আখতারুজ্জামান খালেদ, সাবেক ইমাম ও খতীব, দুপ্তারা, কুমারপাড়া, আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড