• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

জুমা’র খুতবাহ : কাযা নামাজ

  অধিকার ডেস্ক    ১৭ আগস্ট ২০১৮, ১০:০০

কেউ যথা সময়ে নামাজ পড়তে ভুলে গেলে অথবা ঘুমিয়ে গেলে এবং তার নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হয়ে গেলে, পরে যখনই তার চেতন হবে অথবা মনে পড়বে তখনই ঐ ফরজ নামাজ কাযা পড়া জরুরী।

রাসূল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি কোনো নামাজ পড়তে ভুলে যায় অথবা ঘুমিয়ে পড়ে, তাহলে তার কাফফারা হলো স্মরণ হওয়া মাত্র তা আদায় করে নেওয়া। অন্য হাদীসে আছে, ঐ নামাজ আদায় করে নেওয়া ছাড়া তার কোন কাফফারা বা প্রায়শ্চিত্ত নেই। (সহীহ বুখারী, হা- ৫৯৭, সহীহ মুসলিম, হা- ৬৮৪, নাসায়ী, হা- ৬১৩, মিশকাত, হা- ৬০৩)

রাসূল (সা.) বলেছেন, ঘুমিয়ে থাকার কারণে নামাজ আদায় করতে না পারলে কোন দোষ নেই। দোষ হল জেগে থেকেও নামাজ আদায় না করা। সুতরাং তোমাদের কেউ নামাজ আদায় করতে ভুলে গেলে অথবা নামাজের সময় ঘুমিয়ে থাকলে, যে সময়েই নামাজের কথা স্মরণ হবে সেই সময়েই নামাজ আদায় করে নেবে। কারণ আল্লাহ তাআলা বলেছেন, আমার স্মরণে তোমরা নামাজ আদায় কর। ( সূরা ত্বোহা -১৪, সহীহ মুসলিম, হা- ৬৮১, মিশকাত হা- ৬০৪)।

অতএব কাযা নামাজ পড়ার জন্য কোন নিদিষ্ট সময় নেই। দিন রাতের যে কোনো সময় চেতন হলেই বা মনে করলেই ওঠে সবার আগে নামাজ পড়ে নেওয়া জরুরী। বিনা কারনে নামাজ ছেড়ে দিলে বা সুযোগ ও সময় থাকা সত্ত্বেও না পড়ে অন্য ওয়াক্ত এসে গেলে পাপ তো হবেই পরন্ত সেই নামাজের আর কাযা নেই।

১। কাযা নামাজের জন্য আজান ও ইকামাত-

এক সফরে আল্লাহর রাসূল (সা.) ও সাহাবাগণ ঘুমিয়ে পড়লে ফজরের নামাজ ছুটে যায়। সূর্য ওঠার পর তাঁদের চেতন হয়। অতপর একটু দূরে সরে গিয়ে তাঁরা অজু করেন। রাসূল (সা.) বিলাল রাঃ কে আজান দিতে নির্দেশ দিলেন, বিলাল রাঃ আজান দেওয়ার পর সুন্নাত কাযা পড়ে ইকামত দিলে নবী (সা.) ফজরের ফরজ নামাজ পড়ালেন। (সহীহ মুসলিম,হাঃ-৬৮০,৬৮১)

ফজরের কাযা সূর্য ওঠার পর দিনে আজান দিতে হলেও ‘‘আসসলাতু খাইরুম মিনান নাউম” বলতে হবে। কারণ ফজরের ঐ কাযা নামাজে নবী (সা.) ফজরে যা করেন দিনেও তাই করে ফজরের কাযা নামাজ আদায় করেছেন। (সহীহ মুসলিম, হাঃ-৬৮১)

২। কাযা নামাজের শৃঙ্খলা বজায় রাখা-

খন্দকের যুদ্ধের সময় মহানবী (সা.) ও সাহাবাগণ চার ওয়াক্তের নামাজ ছুটে গেলে রাতে নবী (সা.) বিলাল রাঃ -কে আজান দিতে আদেশ করেন। অতপর প্রত্যেক নামাজের পূর্বে ইকামত দিতে বলেন, এইভাবে প্রথমে যোহর, অতপর আসর, মাগরিব ও এশার নামাজ পর পর কাযা পড়েন। (নাসায়ী, হা- ৬৬৩) যে নামাজ যে অবস্থায় কাযা হয় সেই নামাজকে সেই অবস্থায় ও আকারে পড়া জরুরী। সুতরাং রাতের নামাজ দিনে কাযা পড়ার সুযোগ হলে রাতের মতোই করে জোরে কিরাআত করে পড়তে হবে। কারণ নবী (সা.) যখন ফজরের নামাজ দিনে কাযা পড়েছিলেন তখন ঠিক সেই রূপেই পড়েছিলেন যেই রূপে ফজরের ওয়াক্তে পড়তেন। তদ্রুপ ছুটে যাওয়া দিনের কাযা নামাজ রাতে পড়ার সুযোগ হলে দিনের মতই চুপেচুপে কিরাআত করে পড়তে হবে। (সহীহ মুসলিম, হা- ৬৮১, নায়ল্লুল আওতার- ২/২৭)

৩। কাযা নামাজে বর্তমান নামাজ–

(ক) কেউ যদি যোহরের নামাজ কাযা রেখে আসরের ওয়াক্তে মসজিদে আসে, তাহলে সময় থাকলে প্রথমে যোহরের কাযা নামাজ পড়ে নিবে। অতপর আসরের নামাজ পড়বে। কিন্তু কেউ যদি এমন সময় মসজিদে আসে যে আসরের জামাআত চলছে, তা হলে সে একাকি নামাজ পড়তে পারবে না। কারণ বর্তমান জামাআত চলাকালে একই স্থানে দ্বিতীয় জামাআত বা পৃথক একাকি জামাআতি নামাজ হয় না। কেননা নবী (সা.) বলেছেন, নামাজের ইকামত দেওয়া হলে তখন (ঐ ফরজ নামাজ ব্যতিত) অন্য কোন নামাজ পড়ার অনুমতি নেই। (সহীহ মুসলিম, হাঃ- ৭১০, মিশকাত,হাঃ- ১০৫৮)

(খ) আবার কাযা নামাজ রেখে আসরের নামাজ জামাআতে পড়লে যোহরের পূর্বে আসর পড়া হয়। আর তাহলে নামাজের শৃঙ্খলা ও অনুক্রমের পরিপন্থি হয়ে যায় । সুতরাং শৃঙ্খলা ও অনুক্রম অনুযায়ী যোহরের কাযা আদায়ের নিয়তে আসরের জামাআতে শামিল হবে এবং তারপর একাকী আসর পড়ে নিবে । (তুফাতুল ইখওয়ান-৬৬ পৃঃ)

এক্ষেত্রে ইমামের নিয়ত ভিন্ন হলেও উক্ত মুক্তাদীর নামাজের কোন ক্ষতি হবে না। কারণ ইমাম-মুক্তাদীর নিয়ত পৃথক পৃথক হলেও উভরের নামাজ যে শুদ্ধ হবে তার প্রমান সুন্নাহতে মজুদ আছে।

(ক) একদিন নবী (সা.) নামাজের সালাম ফিরে দেখলেন, মসজিদের এক কোণে বসা দু‘জন লোক জামাতে নামাজ পড়েনি। নবী (সা.) তাদেরকে কারণ জিজ্ঞাসা করলে তারা কাঁপতে কাঁপতে বলল, আমরা এই নামাজ বাসায় পড়ে নিয়েছি। তিনি বললেন, আর এরকম করো না। বরং যখন তোমাদের কেউ নিজ বাসায় নামাজ পড়ে নেয় অতপর মসজিদে এসে দেখে যে, ইমাম নামাজ পড়া শেষ করেনি তখন সে যেন দ্বিতীয়বার তাঁর সাথে নামাজ পড়ে। আর এ নামাজ তার জন্য নফল হবে। (নাসায়ী, হা- ৮৫৭, আবু দাউদ, হা- ৫৭৫)

(খ) অনুরূপ মুআয বিন জাবাল রাঃ নবী (সা.)- এর সাথে নামাজ পড়তেন। অতপর নিজ গোত্রে ফিরে এসে ঐ নামাজেরই ইমামতি করতেন। (সহীহ মুসলিম, হা- ৪৬৫, মিশকাত, হা- ১১৫০)

অতএব, উক্ত হাদীসদ্বয়ের দ্বারা বুঝা গেল যে, এক ওয়াক্ত নামাজের সাথে অন্য ওয়াক্তের নামাজ পড়া দোষণীয় ও অশুদ্ধ নয়।

লেখক : মাওলানা আখতারুজ্জামান খালেদ, সাবেক ইমাম ও খতীব, দুপ্তারা, কুমারপাড়া, আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ।

প্রচলিত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ব্যখ্যা, সমাজের কোন অমীমাংসিত বিষয়ে ধর্মতত্ত্ব, হাদিস, কোরআনের আয়াতের তাৎপর্য কিংবা অন্য যেকোন ধর্মের কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সর্বপরি মানব জীবনের সকল দিকে ধর্মের গুরুত্ব নিয়ে লিখুন আপনিও- [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড