• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

উমরী কাযা কাফফারা এস্কাত

  অধিকার ডেস্ক    ১৪ আগস্ট ২০১৮, ০৮:৫২

নামাজ মুমিনের জীবনে এমন ইবাদত যার কোন বিকল্প নেই বা কাফফারা নেই। যতক্ষণ হুঁশ বা চেতনা আছে বা থাকবে নামাজ আদায় করতে হবে। দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে, দৌড়িয়ে, হেঁটে, ইশারায় বা যেভাবে সম্ভব নামাজ আদায় করতে হবে। হুঁশ বা চেতনা রহিত হলে নামাজ মাফ হয়ে যাবে, কোনো বিশেষ কারণে একান্ত বাধ্য হয়ে দুই এক ওয়াক্ত নামাজ ছুটে গেলে কাযা করতে হবে।

রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন নামাজ পড়তে ভুলে যায় অথবা ঘুমিয়ে পড়ে, তাহলে তার কাফফারা হলো স্বরণ হওয়া মাত্রই তা আদায় করে নেওয়া। অন্য হাদীসে আছে কাযা নামাজ আদায় করে নেওয়া ছাড়া তার আর কোন কাফফারা বা প্রায়শ্চিত্ত নেই। (বুখারী, হা- ৫৯৭, মুসলিম, হা- ৬৮৪, নামায়ী, হা- ৬১৩, মিশকাত, হা- ৬০৩)

ইচ্ছাকৃতভাবে অনেক ওয়াক্তের নামাযের কাযা করার কোনরূপ বিধান হাদীস শরীফে নেই, তবে অনিচ্ছাকৃতভাবে বা কোনরূপ বিপর্যয়ের সময়ে একাধিক নামাজ কাযা হলে তা যথাযথভাবে আদায়ের সময়ে একাধিক নামাজ কাযা হলে তা যথাযথভাবে আদায়ের বিধান রয়েছে। যেমন খন্দক বা পরিক্ষা খনন যুদ্ধের সময় মহানবী (সা.) ও সাহাবাগণ (রাঃ) এর চার ওয়াক্তের নামাজ কাযা বা ছুটে গেলে রাতে নবী (সা.) বিল্লাল (রাঃ) কে আযান দিতে নির্দেশ দেন, অতপর প্রত্যেক নামাযের পূর্বে ইকামত দিতে বলেন, এইভাবে প্রথমে জোহর, অতপর আসর, অতপর মাগরিব ও ইশায় নামাজ পরপর কাযা পড়েন। (সহীহ মুসলিম, হা- ৬৮১)

সর্বাবস্থায় সকলেই একমত যে, ইবচ্ছাকৃতভাবে দীর্ঘ সময়ে নামাজ পরিত্যাগ করলে পরে সে নামাজ কাযা করার বিষয়ে হাদীসে কোনরূপ বিধান দেওয়া হয়নি, তবে জালিয়াতগন এ বিষয়ে কিছু জাল হাদীস তৈরি করেছে। এছাড়া সমাজে কিছু প্রচলিত ভিত্তিহীন কথাবর্তাও এবিষয়ে প্রচলিত আছে। দু’টি ক্ষেত্রে তা ঘটেছে।

উমরী কাযা এ বিষয়ে জালিয়াতদের বানানো একটি হাদীস-

এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি নামাজ পরিত্যাগ করেছি। তিনি বললেন, তুমি যা পরিত্যাগ করেছো তা কাযা কর। লোকটি বলল, আমি কিভাবে তা কাযা করব? তিনি বললেন, প্রত্যেক ওয়াক্তের নামাযের সাথে অনুরূপ নামাজ আদায় কর। সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আগে না পরে? তিনি বললেন, বরং আগে, (ইমাম জুযকানী, আল আবাতীল- ২/৫০, ইমাম ইবনুল জাওযী, আল-মাওযুআত- ২/২৬, ইমাম সুয়ূতী, আল-লাআলী-২/২৪, ইবনু আর-রাক, তানযীহ- ২/৮০, ইমাম শাওকানী, আল-ফাওয়াঈদ-১/৩৫)

মুহাদ্দীস বা হাদীস বিশারদগণ একমত যে, এ হাদিসটি জাল, ভিত্তিহীন ও বাতিল। কারণ কোনো মুসলিম নামাজ পরিত্যাগ করতে পারে এরূপ চিন্তা রাসূল (সা.) ও সাহাবাদের যুগে ছিল না। সাহাবীগণ বলেন, একজন মুসলিম অনেক পাপ করতে পারে, কিন্তু কখনো নামাজ ত্যাগকরতে পারে না। কেননা রাসূল (সা.) বলেছেন কিয়ামতের দিন মানুষকে সর্বপ্রথম নামাজ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। যদি তার নামাজ গ্রহনযোগ্য হয় তাহলে সমস্ত আমল গ্রহণীয় হবে, আর যদি নামাযের হিসাব গ্রহনযোগ্য না হয়, তাহলে সমস্ত আমলই বাতিল হবে, (সিলসিলা সহীহ হা- ৫৯৮) পরবর্তী ফকীহগণ ঐ জাল হাদীসের ভিত্তিতে উমরী কাযা নামক নামাযের প্রচলন করেন। যা কোন হাদীসে ইহার পক্ষে প্রমাণ নেই।

কাফফারা বা এস্কাত-

ইসলামে সিয়াম বা রোজার কাফফারার বিধান রয়েছে। কোনো মুসলমান অপরাগতার কারণে রোজা পালন করতে না পারলে এবং কাযার ক্ষমতাও না থাকলে তিনি তার প্রতিটি ফরয রোজার পরিবর্তে একজন দরিদ্রকে খাদ্য প্রদান করবেন। কিন্তু নামাযের জন্য এরূপ কোন কাফফারার বিধান হাদীসে নেই। কারণ রোজার ক্ষেত্রে যে অপরাগতার সম্ভাবনা রয়েছে, নামাযের ক্ষেত্রে তা নেই। যতক্ষণ চেতনা আছে, ততক্ষণ ইশারা ইঙ্গিতে যেভাবে পারবেন সেভাবেই তার সাধ্যানুসারে নামাজ আদায় করবেন, আর দীর্ঘ স্থায়ীভাবে চেতনা রহিত হলে নামাজ ও রহিত হবে।

তবুও পরবর্তী যুগের ফকীহগণ সাবধানতামূলকভাবে নামাযের জন্যও নিয়মিত নামাজ আদায়কারী কোন মুমিন যদি মৃত্যুর আগে অসুস্থতার কারণে কিছু নামাজ আদায় করতে না পারলে মৃত্যুর পর একটি করে ফিতরা প্রদানের বিধান দিয়েছেন, এ বিধানও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। কেউ কেউ এ বিধানকে ইচ্ছাকৃতভাবে বা আজীবন নামাজ পরিত্যাগকারী ও নামাজকে অবজ্ঞা ও উপহাসকারীর জন্য প্রয়োগ করছেন।

নামাযের কাফফারা প্রদানের এক উদ্ভট বিধান দিয়েছেন যে, কাফফারা বা এস্কাত করিবার নিয়ম এই যে প্রথমত মুর্দার বয়স হিসাব করিবে। তন্মধ্য হইতে পুরুষের বার বছর ও স্ত্রী লোকের বার বছর বয়স বাদ দিয়া বাকী বয়সের প্রত্যেক বৎসর ৮০ তোলা সেরের ওজনের ১০ মন ও ১০ সের ময়দার মূল্য ধরিয়া ঐ মূল্যের পরিবর্তে নিজে এক জেলদ কোরআন শরীফ সকলের সম্মুখে কোনো গরীব মিছকিনের নিকট হাদীয়া করিয়া দিবে এবং সকলের মোকাবিলা বলিবে যে, অমুকের উপরোক্ত হুকুকের জন্য খোদায়ী পাওনা এত হাজার এত শত এত মন ময়দার পরিবর্তে এই কালামুল্লাহ (কোরআন) তোমার নিকট হাদিয়া দিলাম। ঐ গরীব বা মিছকীন দুইজন সাক্ষীর মোকাবিলা উহা কবুল করিলাম বললে ঐ কালামুল্লাহ তাহারই হইয়া গেল এবং ময়দা আদায় করা তাহার উপর ওয়াজিব হইয়া গেল। (মাওঃ গোলাম রহমান, মকছুদোল মোমেনীন-১৮১পৃঃ)

এই উদ্ভট নিয়মটি শুধু বানোয়াটই নয় বরং আল্লাহর দ্বীনের সাথে চরম উপহাস! এর চেয়ে বড় উপহাস আর কি হতে পারে? আজীবন নামাজ অজ্ঞা করে অবমাননা করে, নামাজকে নিয়ে উপহাস করার পরে এক জিলদ “কুরআন” ফকীরকে দিয়েই মাফ!

লেখক : মাওলানা আখতারুজ্জামান খালেদ, সাবেক ইমাম ও খতীব, দুপ্তারা কুমার পাড়া জামে মসজিদ, আড়াই হাজার, নারায়ণগঞ্জ।

প্রচলিত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ব্যখ্যা, সমাজের কোন অমীমাংসিত বিষয়ে ধর্মতত্ত্ব, হাদিস, কোরআনের আয়াতের তাৎপর্য কিংবা অন্য যেকোন ধর্মের কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সর্বপরি মানব জীবনের সকল দিকে ধর্মের গুরুত্ব নিয়ে লিখুন আপনিও- [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড