মুনশি আমিনুল ইসলাম
ইসলামি ফিকাহ শাস্ত্রের প্রতিটি গ্রন্থের শুরুতেই কিতাবুত তাহারাত বা পবিত্রতা অধ্যায় স্থান পেয়েছে। মুমিনকে যেমন বাহ্যিক অপরিচ্ছন্নতা থেকে পবিত্র হতে হয় অজু বা গোসলের মাধ্যমে, তেমনি অভ্যন্তরীণ অপরিচ্ছন্নতা থেকেও পবিত্র হতে হয়, দেহ-বস্ত্র ও স্থান ইত্যাদি পরিষ্কারের মাধ্যমে। তাছাড়া প্রত্যহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার কথা তো বলাই বাহুল্য। মদিনার নিকটবর্তী কুবা এলাকার লোকজনের প্রশংসা করে মহান আল্লাহ কুরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘সেখানে এমন লোক আছে, যারা উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করতে ভালোবাসে। আর আল্লাহ্ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন। (সুরা আত-তাওবা :১০৮)
অন্যত্র তিনি ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং ভালোবাসেন অধিক পবিত্রতা অর্জনকারীদের।’ (সুরা বাকারা :২২২)
পবিত্র হাদিসেও বিভিন্ন উপায়ে পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং নানাবিধ শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। এমনকি পরিচ্ছন্নতা রক্ষাকে ঈমানের অংশ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। হজরত আবু মালেক আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল সা. বলেন- ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অর্ধেক।’ (সহিহ মুসলিম :২২৩)
ইসলামে ব্যক্তির পরিচ্ছন্নতা, গৃহের পরিচ্ছন্নতা ও পরিপার্শ্বের পরিচ্ছন্নতা— কোনোটাই বাদ যায়নি। ব্যক্তির পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় অন্তত জুমাবারে গোসলের গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এমনকি হাদিসে এ ক্ষেত্রে ওয়াজিব বা অত্যাবশ্যক বলা হয়েছে। হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, জুমার দিন (শুক্রবার) গোসল করা প্রতিটি সাবালক ব্যক্তির জন্য ওয়াজিব।’ (সহিহ বুখারি :৪৭৯)
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুল সা. বলেন- ‘আল্লাহর জন্য প্রতিটি মুসলিমের অবশ্য কর্তব্য হলো (অন্তত) প্রতি সাত দিনের মাথায় তার মাথা ও শরীর ধৌত করা।’ (সহিহ বুখারি :৮৯৭, সহিহ মুসলিম :৮৪৯) কারও ওপর গোসল ফরজ না হলেও শরীরে ঘাম ও ধূলাবালু ইত্যাদি লাগার কারণে দুর্গন্ধ হতে পারে, তাই অন্তত সাতদিনে একবার গোসলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তার মানে সাত দিন পর গোসলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে- তা নয়। অন্যদিকে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ পরিচ্ছন্ন রাখতেও হাদিসে সবিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
দাঁত ও মুখের যত্নের জন্য হাদিসে মিসওয়াকের গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মিসওয়াক ব্যবহারকে গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল সা. বলেন, ‘যদি না আমার উম্মত অথবা (তিনি বলেছেন) মানুষের জন্য কঠিন হতো তবে আমি তাদের প্রত্যেক সালাতের সঙ্গে মিসওয়াকের নির্দেশ (ওয়াজিব ঘোষণা) দিতাম।’ (সহিহ বুখারি :৮৮৭, সহিহ মুসলিম :২৫২)
চুলের পরিচ্ছন্নতা রক্ষায়ও ইসলামে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। জাবির (রা.) বলেন, একদিন রাসুল (সা.) আমাদের ঘরে বেড়াতে এলেন। আসার পর তিনি এলোকেশী এক ব্যক্তিকে দেখতে পেলেন। তার সম্পর্কে তিনি বললেন, ‘এ ব্যক্তি কি এমন কিছু জোটাতে পারেনি, যা দিয়ে সে তার মাথার চুল বিন্যস্ত করবে?’ ময়লা কাপড় পরিহিত আরেকজনকে দেখে তিনি বলেন, ‘এ ব্যক্তি কি এমন কিছুর ব্যবস্থা করতে পারেনি, যা দিয়ে সে তার কাপড় পরিষ্কার করবে?’ (মুসনাদ আহমাদ :১৪৮৫০, বাইহাকি :৫৮১৩)
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড