অধিকার ডেস্ক ১১ আগস্ট ২০১৮, ১০:৪২
হে মু’মিনগণ! তোমরা তোমাদের ওয়াদাগুলো পূর্ণ কর। তোমাদের জন্য চতুস্পদ জন্তু হালাল করা হয়েছে, যা তোমাদের কাছে বিবৃত হবে তা ব্যতীত, কিন্তু ইহরাম বাঁধা অবস্থায় তোমাদের শিকার করা হালাল নয়; নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী হুকুম করে থাকেন। (সূরা মায়িদা আয়াত নং- ১)
হজ বা ওমরা পালনের উদ্দেশ্যে হারাম শরীফে প্রবেশ করার পূর্বে নির্ধারিত মিকাত থেকে বিশেষ নিয়মে নিয়ত করার নাম ইহরাম। ইহরাম অবস্থায় কতক বৈধ কাজও অবৈধ হয়ে যায়। ইবনু আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, মুহরিম ব্যক্তি ফুলের ঘ্রাণ নিতে পারবে। আয়নায় চেহারা দেখতে পারবে এবং তৈল ও ঘি জাতীয় খাদ্যদ্রব্য দিয়ে চিকিৎসা করতে পারবে।
আত্বা (রহ.) বলেন, আংটি পরতে পারবে, (কোমরে) থলে বাঁধতে পারবে। ইবনু ‘উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু ইহরাম বাঁধা অবস্থায় পেটের ওপর কাপড় কষে তাওয়াফ করেছেন। অন্তর্বাস পরার ব্যাপারে ‘আয়িশাহ্ রাযিয়াল্লাহু আনহা–এর আপত্তি ছিল না। এ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে যারা তার উটের পিঠে হাওদা বাঁধতো (কারণ সে সময় লজ্জাস্থান প্রদর্শিত হওয়ার আশঙ্কা থাকত)। (আ.প্র.হা- ১৪৩৭ বুখারী।)
নবী সহধর্মিণী আয়িশাহ্ রাযিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘ইহরাম বাঁধার সময় আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর গায়ে সুগন্ধি মেখে দিতাম এবং বায়তুল্লাহ্ তাওয়াফের পূর্বে ইহরাম খুলে ফেলার সময়ও। (আ.প্র.হা-১৪৩৮ বুখারী)
ইহরামের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণকালে যে ব্যক্তি ইহরাম বাঁধতে যাচ্ছেন তাকে নিজের হাত-পায়ের নখ,গোঁফ, বগলের লোম ও নাভির নীচের লোম পরিষ্কার করার প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। কেননা ইহরাম বাঁধার পর অবাঞ্চিত লোম কাটা হারাম। এছাড়া গোসল করা ও সুগন্ধি মাখার নিয়মগুলি পালন করতে হবে।
ইহরামের কাপড় পরিধানের পর সুগন্ধি মাখা চলবে না। ইহরামের নিয়ত করার পূর্বে মাখা সুগন্ধি মুহরিমের চেহারায় দৃশ্যমান হতে পারে বা তা থেকে সুগন্ধ আসতে পারে। ইহরাম থেকে মুক্ত হওয়ার পর সুগন্ধি ব্যবহার করা চলবে। ইহরাম অবস্থায় ঔষাধ সেবন করা ও চিকিৎসা নেওয়া যাবে।
আয়িশা রাযিয়াল্লাহু আনহা ইহরাম অবস্থায় কুসুমীর রঙ্গে রঞ্জিত কাপড় পরেন এবং তিনি বলেন, নারীগণ ঠোট মুখমন্ডল আবৃত করবে না। ওয়ারস ও জাফরান রঙে রঞ্জিত কাপড়ও পরবে না। জাবির রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি উসফরী (কুসমী) রঙকে সুগন্ধি মনে করি না। আয়িশা রাযিয়াল্লাহু আনহা (ইহরাম অবস্থায়) নারীদের জন্য অলঙ্কার পরিধান করা এং কালো ও গোলাপী রং- এর কাপড় ও মোজা পরা দূষণীয় মনে করেননি।
ইবরাহীম (নাখয়ী) (রহ.) বলেন, (ইহরাম অবস্থায়) পরনের কাপড় পরিবর্তন করায় কোন দোষ নেই। (সহীহ বুখারী অধ্যয় ২৫/২৩)
কাগজ-কলম, শীতের কাপড়, প্রয়োজনীয় ঔষুধপত্র, চশমা, বাংলাদেশী টাকা, নারীদের জন্য বোরকা, মোবাইল ও মালপত্র নেওয়ার জন্য ব্যাগ। এছাড়াও আপনার প্রয়জনবোধে খুর-কেঁচি আরো অন্যান্য জিনিস নিয়ে সওয়ারীতে আরোহণ করবেন। মালপত্র হালকা রাখুন, কারণ নিজের মালপত্র নিজেকেই বহন করতে হবে।
ইহরাম বাঁধার নিয়ম-
মিকাত মোট পাঁচটি যথা- ১. জুল হুলাইফা ২. ইয়ালামলাম ৩.আল জুহফা ৪. কারনুল মানাযিল ৫. জাতু ইরক। উপরোল্লিখিত মীকাতসমূহ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উল্লেখিত এলাকাবাসীদের জন্য নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন এবং ঐ এলাকাবাসী ছাড়া অন্যান্য স্থানের লোক যারা হজ ও ওমরার উদ্দেশ্যে ঐ মীকাত দিয়ে অতিক্রম করবেন তাঁদের জন্যও তা নির্ধারণ করেছেন। সুতরাং হজ যাত্রী উল্লেখিত পাঁচটি মিকাত বা ইহরাম বাঁধার নির্দিষ্ট স্থানের যে কোনো স্থানে পৌঁছে সর্বপ্রথম গোসল করবেন। অতপর পুরুষগণ- সেলাইবিহীন লুঙ্গী ও চাদর পরিধান করবে, আমরা লুঙ্গী যেভাবে পরিধান করি অনুরূপভাবে ইহরামের লুঙ্গী পেঁচিয়ে কোষে গিটু দিয়ে পরা যাবে। আর চাদর ইজতিবা না করে শুধু শরীর ঢেকে পরিধান করতে হবে। লুঙ্গী ও চাদর উভয়ই সাদা এবং পরিষ্কার হওয়া আবশ্যক।
এ সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর বাণী, ‘তোমাদের মধ্যে প্রত্যেকেই হজ অথবা ওমরার জন্য ইহরাম বাঁধার সময় যেন একটি লুঙ্গী ও চাদর এবং এক জোড়া জুতা পরিধান করে। ইমাম আহমাদ (রহঃ) তা উদ্ধৃত করেছেন। আর মহিলাদের বেলায় যে কোনো রংয়ের কাপড় পরিধান পূর্বক ইহরাম বাঁধা বৈধ। তবে কোনো মহিলার পোশাক যেন পুরুষদের পোশাকের মত না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকবেন। আর যদি কারও বাসস্থান মিকাতের অভ্যন্তরে হয় তাহলে সে নিজ বাসস্থান হতেই ইহরাম বাঁধতে পারে, যা মীকাত হতে মক্কার অধিক নিকটবর্তী।
গোসলের পর ইহরামের কাপড় পরিধান করে ইহরামের দু’রাকাত সালাত আদায় করবেন। অতপর হজ বা উমরাহ– এই দুই ইবাদাতের যেটি সে আদায় করতে চায় তার সংকল্প হৃদয়ে পোষণ করবেন, যদি সে উমরার জন্য নিয়ত করে তাহলে মুখে স্বশব্দে বলবে- আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা উমরাতান। আর হজ্বের নিয়্যাত করলে আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা হাজ্বান। বলে তার বাহনে আরোহণ করবেন। বাহনটি ঘোড়া, উট বা অন্য কোনো পশু হোক অথবা মোটরগাড়ি, জাহাজ বা বিমান হোক তার উপর সওয়ারী হয়ে যখন সফরের উদ্দেশে চলা শুরু করবেন তখন তালবিয়া পাঠ করতে হবে।
কেননা নবীয়ে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরূপ করেছেন। তিনি যখন স্বীয় সওয়ারী-উটের উপর উপবেশন করলেন এবং উট মীকাত হতে সফরের উদ্দেশে তাঁকে নিয়ে চলার জন্য খাড়া হল, তখনই তিনি তালবিয়া-লাব্বাইকা উচ্চারণ করেছেন। সুতরাং আপনিও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ন্যায় এভাবে তালবিয়া পাঠ করতে থাকবেন-
উচ্চারণ- লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা, লাব্বাইকা লা-শারীকা লাকা লাব্বাইকা, ইন্নাল হামদা ওয়ান্ নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলকা লা-শারীকা লাকা।
এই হলো হজ ও ওমরার ইহরাম বাঁধার নিয়ম।
লেখক : শাইখ শফিকুল ইসলাম, ইসলামিক লেখক ও গবেষক, সাবেক প্রিন্সিপাল মারকাজ আবু বাকর সিদ্দীক (রাঃ) কিশোরগঞ্জ।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড