• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

সফর ছাড়া ভাগে কোরবানী করা যাবে কি ও কোরবানি সম্পর্কে চলমান কিছু ভুল

  অধিকার ডেস্ক    ১১ আগস্ট ২০১৮, ০৮:৩৬

কোরবানির পশু

عن جابر بن عبدالله قال نحرنا مع رسول الله صلى الله عليه وسلم عام الحديبية البدنة عن سبعة والبقرة عن سبعة

জাবের বিন আব্দুল্লাহ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমরা হুদায়বিয়ার সনে উট সাতজনের পক্ষ থেকে এবং গরুও সাত জনের পক্ষ থেকে কোরবানী করেছিলাম। (সহীই মুসলিম হা- ২৩২২, আবুদাউদ হা- ২৮০৯, তিরমিযী হা- ১৪২২, ইবনু মাজাহ হা- ৩১৩২)

বর্তমানে আমাদের দেশে কেউ কেউ এজাতীয় বিশুদ্ধ হাদিস ও আসারকে তাদের মতের পক্ষে না হওয়ার কারণে ব্যাখ্যাবিহীন হাদিস বলে উড়িয়ে দিতে চান! আমরা বলতে চাই হাদিসইতো ব্যাখ্যা তার আবার ব্যাখ্যা কিসের?

তাছাড়া হাদীস বিশারদ মুহাদ্দিসগণ ও সাড়ে চৌদ্দ শত বছরের কোনো সালাফগণ ভাগা কুরবানীর সাথে সফরকে খাস করেছেন বলে আমরা জানতে পারি নাই। যেমন- ইমাম লাইস শরীকে কোরবানীকে সফরের সাথে খাস গণ্য করার প্রতিবাদে ইবনু হাযম বলেন, এই খাসকরণ একেবারেই অনর্থক। (আল-মোহাল্লা ৭/৩৮৫)

এবিষয়ে কিছু লেখার ইচ্ছা ছিল না কারণ এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করা মানে গৌন বিষয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি বৈ কিছুই না। তথাপি কিছু ভাইয়ের অনুরোধে এতটুকু লিখলাম।

কোরবানির কিছু ভুল যা সমাজে চলমান-

কোরবানিসহ সকল ইবাদাতের লক্ষ্য মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি তথা তাকওয়া। (হজ ২২ / ৩৭)

এক্ষেত্রে গোশত খাওয়া এবং গলায় ফুলের মালা দিয়ে লৌকিকতা প্রদর্শন করা যেন উদ্দেশ্য না হয়। মনে রাখতে হবে প্রদর্শন ইচ্ছা এক প্রকার রিয়া তথা শিরক। তবে পশুর রক্ত মাংস আল্লাহ্ পাকের নিকট পৌঁছে না। ওটা আমরাই খাব।

তিঁনি বলেন- ১) নিজেরা খাবে, ২) আত্মীয়দেরকে ও অন্যান্যদের এবং ৩) দুস্থ অভাবীদেরকে খাওয়াবে। (২২/২৮)

তবে খাওয়া আর ফ্রিজিং করে করে রাখাটাই যেন লক্ষ্য না হয়! লক্ষ্য শুধুমাত্র তাকওয়া তথা আল্লাহ ভীতি ও ইখলাস ।

কোরবানির ক্ষেত্রে একটি চরম ভুল সমাজে প্রতিষ্ঠিত। তা হল নাম নিয়ে পিড়াপিড়ি। কেউ বাপের নামে, কেউ বলে মার নামে, ভাগের ক্ষেত্রে মৌলভীর কাছে সাত নাম লিখে দেওয়া হয়। কেউ খাজা বাবার নামে, কেউ দয়াল বাবার নামে কোরবানি দিয়ে থাকে। মনে রাখতে হবে কোরবানি হলো উৎসর্গ আর তা ইবাদত কারো নামে কারো উদ্দেশ্য হবে না! শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলার নামে তাঁর উদ্দেশ্য নিবেদন করতে হবে। (২২/৩৪ ,৬/১৬২)

আর একটি লক্ষণীয় দিক হলো কোরবানিসহ সকল প্রকার ইবাদাতের শর্ত হলো মুসলিম হওয়া। যেমন কোরবানি সম্পর্কে বিশেষ ভাবে মুসলিম জাতির পিতা ইব্রাহীম ও তাঁর পুত্র উভয়ের ক্ষেত্রে জবেহর সময় বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেন فلما اسلما وتله للجبينযখন তারা ( পিতা পুত্র ) দুজন মুসলিম তথা আত্মসমর্পণ করল।(৩৭/১০৩)

অতএব ইসলাম বিনষ্টকারি বিষয়সমুহের বিষয়ে জ্ঞাত হওয়া। যেমন- সলাত ত্যাগ, তগুতে বিশ্বাস, গয়রুল্লার নামে পশু উৎসর্গ, ইত্যাদি। সর্বশেষ যে বিষয়টি সম্পর্কে বলতে চাই, যেটা নিয়ে খুব কম লোকই বলে ভেবে থাকে। ইসলাম কোরবানির বিষয় যেভাবে মর্যাদা দিয়েছে, তেমনি আরো কিছু বিষয়ও এক্ষেত্রে বিধিত করেছে। একটি আনজাম দিতে গিয়ে আরেকটি বিসর্জন দেয়া ইবাদাতের নিদর্শন নয়।

আর তা হল পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার বিধান। এবিষয়ে সকলেই জ্ঞাত প্রসিদ্ধ আছে তা ঈমানের অঙ্গ। নবী (সা.) বলেন তোমরা ঘরের আঙ্গিনা পরিচ্ছন্ন রাখ। (সুনানে তিরমিযী ২৪২৩)

মানুষের চলাচলের রাস্তা নোংরা না করতেও রসূল (সা.) নির্দেশ দিয়েছেন। রাস্তায় পড়ে থাকা মায়লা আবর্জনা এবং কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেওয়াকে ঈমানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলে ঘোষণা করেছেন। (সহীহ মুসলিম হা- ৫৫)

এক্ষেত্রে আমাদের সরকারের প্রচেষ্টা থাকলেও জনগণের মধ্যে প্রচেষ্টা কম লক্ষ্য করা যায়। এক্ষেত্রে প্রত্যেকের সিটি কর্পোরেশন সথে নিয়ম বিধি পালনে সহযোগিতা করা একান্তভাবে কাম্য। এমনিভাবে গ্রামে ভালো করে গর্ত করে রক্ত দাফন করা উচিত যেন পরিবেশ দুর্গন্ধ ও দুষিত না হয়।

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন।

امين يارب العالمين

লেখক : মুরাদ বিন আমজাদ, চেয়ারম্যান বাংলাদেশ মুসলিম উম্মা ফাউন্ডেশন

প্রচলিত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ব্যখ্যা, সমাজের কোন অমীমাংসিত বিষয়ে ধর্মতত্ত্ব, হাদিস, কোরআনের আয়াতের তাৎপর্য কিংবা অন্য যেকোন ধর্মের কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সর্বপরি মানব জীবনের সকল দিকে ধর্মের গুরুত্ব নিয়ে লিখুন আপনিও- [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড