মুনশি আমিনুল ইসলাম
সুদ মানবতাকে ধ্বংস করার হাতিয়ার হচ্ছে সুদ। সুদখোর সর্বাবস্থায় আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সঙ্গে যুদ্ধাবস্থায় থাকে। এটি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের দৃষ্টিতে অত্যন্ত জঘন্য অপরাধ। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বিভিন্ন আয়াতে মুমিনদের সুদ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যদি সুদ পরিহার না করো, তাহলে আল্লাহর তরফ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা শুনে নাও।’ (সুরা বাকারা :২৭৯) আর সুদের কারণে আল্লাহ বান্দার রিজিক কমিয়ে দেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ সুদকে হ্রাস করেন এবং সদকাকে বর্ধিত করেন। আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান খয়রাতকে বর্ধিত করেন। আল্লাহ পছন্দ করেন না কোন অবিশ্বাসী পাপীকে।’ (সুরা বাকারা :২৭৬)
রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে জাতির মধ্যে সুদ প্রসারিত হয় তারা অবশ্যই দুর্ভিক্ষে নিপতিত হয়।’ (মুসনাদে আহমাদ) এই দুর্ভিক্ষ অনেক ধরনেরই হতে পারে। যেমন, আগে দুর্ভিক্ষ ছিল খাবারের অভাব। আর এখন দুর্ভিক্ষ হচ্ছে নির্ভেজাল খাবারের অভাব। মানুষের কাছে টাকার নোট বাড়লেও সংসারে শান্তি নেই। শরীরে সুস্থতা নেই। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) অভিশাপ করেছেন সুদদাতা, সুদগ্রহীতা, সুদের সাক্ষী ও সুদের লেখকের ওপর।’ (সহিহ মুসলিম :১৫৯৮, সুনানে আবু দাউদ :৩৩৩৩)
উদাসীনতা আল্লাহর জিকির থেকে উদাসীনতা মানুষের রিজিকের বরকত উঠিয়ে নেয়। কেননা, যে ধরনের মানুষ দুনিয়ার মোহে পড়ে যায় তাদের অন্তরে শয়তান বাসা বাঁধে। ফলে তারা সব অশ্লীল ও অহেতুক কাজে আত্মনিয়োগ করতে থাকে। এতে তাদের মন থেকে স্থিরতা দূর হয়ে যায়। একের পর এক অহেতুক বাসনা তাদের সর্বস্বান্ত করে দেয়। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন- ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদের আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন না করে। আর যারা এরূপ করে তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত।’ (সুরা মুনাফিকুন :৯)
তাই সন্তান-সন্ততি ও ধন-সম্পদের মোহে পড়ে আল্লাহকে ভুলে গেলে চলবে না। বরং আল্লাহর দেখানো পথেই এগুলোর পরিচালনা করতে হবে।
অকৃতজ্ঞতা রিজিক কমে যাওয়ার অন্যতম আরেকটি কারণ- অকৃতজ্ঞতা। আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া না করা। আর মহান আল্লাহ অকৃতজ্ঞদের পছন্দ করেন না। পবিত্র কুরআন ইরশাদ হয়েছে, যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় করো, তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেবো। আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও তবে মনে রেখো, আমার শাস্তি বড়ই কঠোর।’ (সুরা ইবরাহিম :৭)
আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া যেমন ইবাদতের মাধ্যমে করা হয়, তেমনি তার দেয়া নিয়ামতকে তার দেয়া বিধান মোতাবেক পরিচালনার মাধ্যমেও করা যেতে পারে। আল্লাহর নিয়ামত শুধু টাকা-পয়সা, বাড়ি-গাড়ি নয়; বরং মানুষ নিজেই আল্লাহর নিয়ামত। দুনিয়ার বুকে যা কিছু আছে, সবই আল্লাহর নিয়ামত। তাই ব্যক্তিজীবন থেকে নিয়ে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সর্বদা আল্লাহর দরবারে নত হয়ে থাকা উচিত।
গুনাহ রিজিকে বরকত আসার জন্য আল্লাহর ওপর ঈমান ও তাকওয়া অবলম্বন অত্যন্ত জরুরি। যে এই দুটি জিনিস অর্জন করতে পারে না, তার রিজিকে সংকীর্ণতা নেমে আসবে। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর যদি সে জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং পরহেজগারী অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের প্রতি আসমানি ও পার্থিব নিয়ামতসমূহ উন্মুক্ত করে দিতাম। কিন্তু তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। সুতরাং আমি তাদেরকে পাকড়াও করেছি তাদের কৃতকর্মের বদলাতে। (সুরা আরাফ :৯৬)
এ পর্যায়ে প্রশ্ন জাগতে পারে, তাহলে যারা আল্লাহর ওপর ঈমান আনেনি তাদের এত সম্পদ কোথা থেকে এলো? জবাব হল, রিজিকে বরকত আসার উদ্দেশ্য শুধু টাকার পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া নয়, রিজিকের বরকত কখনো উভয় জাহানের হতে পারে। একজন ঈমানদার বাহ্যিকভাবে যতই দরিদ্র হোক, প্রকৃতপক্ষে সে দরিদ্র নয়। তার আমলনামায় দৈনিক জমা হচ্ছে হাজার হাজার নেকি। এর বিপরীতে যারা ঈমান আনেনি তারা যা কিছু অর্জন করছে তা কিছুই নয়।
সবচে বড় কথা, গুনাহ ঈমানকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফলে এটিও রিজিকের বরকত কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। কখনো কখনো মুমিন বান্দার দুনিয়াতেই এর শাস্তি ভোগ করে। ফলে তার ওপর বড় বিপদাপদ, অভাব-অনটন, অসুস্থতা ইত্যাদি চেপে বসতে পারে। হজরত সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সৎকর্ম ছাড়া অন্য কিছু আয়ুষ্কাল বাড়াতে পারে না এবং দোয়া ছাড়া অন্য কিছুতে তাকদির রোধ হয় না। মানুষ তার পাপ কাজের দরুন প্রাপ্য রিজিক থেকে বঞ্চিত হয়। (ইবনে মাজাহ :৪০২২)
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড