শায়খ ড. আলী বিন আবদুর রহমান
আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করা মুসলিম ব্যক্তির জন্য ইবাদত। এসব সৃষ্টি থেকে শিক্ষা নিলে ঈমান বৃদ্ধি পায়। বিশ্বাসে আসে আরও দৃঢ়তা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে মুমিনদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।’ (সুরা জাছিয়া :৩) আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা সন্দেহ পোষণকারীকে মজবুত রাখে। হৃদয়কে উজ্জীবিত করে। দৃষ্টিকে করে আলোকিত। আচরণকে করে সংহত। শিক্ষা গ্রহণ ও চিন্তা থেকে বিমুখ হলে তা অন্তরকে পাষাণ করে দেয়। উদাসীনতা সৃষ্টি করে। অনুশোচনার দিকে নিয়ে যায়। পাপে নিমজ্জিত করে। আর উদাসীনতা শয়তানের একটি দ্বার।
অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা তাকওয়ার অধিকারী হয় তাদের শয়তান যখন কুমন্ত্রণা দেয় তখন তারা আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তাদের চোখ খুলে যায়। তাদের সঙ্গীরা তাদের ভ্রান্তির দিকে টেনে নেয় এবং এ বিষয়ে তারা ত্রুটি করে না।’ (সুরা আরাফ :২০০-২০১) হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবি করিম (সা.) মিরাজের বর্ণনায় বলেন, ‘আমি যখন নিচের আসমানে নামলাম তখন হঠাৎ আমার নিচের দিকে তাকিয়ে দেখি অনেক বাতাস, শব্দ ও ধোঁয়া। আমি বললাম, হে জিবরাইল, এগুলো কী? তিনি বললেন, এরা শয়তান, মানুষের চোখে তারা এসব জ্বালিয়ে দিচ্ছে, যাতে তারা আকাশমণ্ডলী ও ভূমণ্ডলীর ঊর্ধ্বলোক নিয়ে চিন্তা করতে না পারে। এটা না থাকলে তারা বিস্ময় দেখতে পেত।’ (আহমাদ)
শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণ করা আলোকপ্রাপ্ত বিবেক ও বুদ্ধির কাজ। তা অভিজ্ঞতা ও দূরদর্শিতার বিষয়। এটি ধ্বংসাত্মক পথ থেকে ফিরিয়ে সফলতা ও মুক্তির রাস্তা দেখায়। ব্যক্তিকে সৎকর্মের সুযোগ করে দেয়। ফলে সে সৎ ও ভালো লোকদের পথের দিশা পায়। তার গন্তব্য হয় কল্যাণের দিকে। পক্ষান্তরে শিক্ষা গ্রহণের শক্তি থেকে যে বঞ্চিত, উপদেশ তার কাজে আসে না। সে ধ্বংসের মুখে পতিত হয়। প্রবৃত্তির অনুসরণ করে। দুর্বৃত্তদের পথে গিয়ে অনুতাপকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়।
শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণের মানে হলো শাস্তি ও দুর্ভোগের কারণগুলো পরিহার করে শাস্তি এবং দুর্ভোগকবলিত প্রত্যক্ষ অথবা অতীত পরিস্থিতি থেকে উত্তম পরিস্থিতির দিকে ফিরে আসা। সৎ লোকদের আল্লাহ যেসব মহৎ জিনিস দিয়ে সম্মানিত করেছেন সেগুলোর অনুসরণ করে সৎকাজে নিয়োজিত হওয়া। সৃষ্টির প্রকৃতি, রহস্য ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে চিন্তা করে স্রষ্টার ইবাদতে মগ্ন হওয়া। তাঁর একত্ব ও আনুগত্য স্বীকার করে নেওয়া।
আল্লাহ সমগ্র বিশ্ব সৃষ্টি করে তার জন্য একটি নীতি ও বিধান তৈরি করে দিয়েছেন। সে নীতিটি হলো, তাঁর আনুগত্যকে তিনি ইহকাল ও পরকালের যাবতীয় কল্যাণের উপায় বানিয়েছেন। অবাধ্যতাকে দুনিয়া ও আখেরাতের সব অনিষ্টের কারণ আখ্যায়িত করেছেন। আল্লাহর আনুগত্য করে কেউ কি হতভাগা হয়েছে? আল্লাহর অবাধ্যতা করে কি কেউ সফলকাম হয়েছে? আল্লাহ তাঁর কিতাবে আমাদের জন্য নবি-রাসুল ও মুমিনদের বিভিন্ন ঘটনা, বৃত্তান্ত ও পরিস্থিতি বর্ণনা করেছেন। সেখানে আছে পরবর্তীদের জন্য শিক্ষা, উপদেশ ও আদর্শ। শাস্তি থেকে মুক্তি। আছে সফলতা, কল্যাণ, সর্বোত্তম পরিণতি ও মর্যাদা বৃদ্ধির উপায়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তাদের বৃত্তান্তে বোধশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য আছে শিক্ষা।’ (সুরা ইউসুফ :১১১)
সুরা শুআরায় আল্লাহ অনেক নবি ও মুমিনের মুক্তির ঘটনা বর্ণনা করে সবগুলোর শেষে এ কথাটি বলেছেন, ‘এতে অবশ্যই রয়েছে নিদর্শন; কিন্তু তাদের অধিকাংশই মুমিন নয়। আর তোমার প্রতিপালক, তিনি তো পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু।’ (সুরা শুআরা :১৯০-১৯১)
ইতিহাসের এসব ঘটনা, পরিস্থিতি ও প্রজ্ঞাপূর্ণ বর্ণনা দ্বারা শুধু তারাই উপকৃত হতে পারে, যারা চিন্তাশীল সচেতন শিক্ষা গ্রহণকারী। যারা সৎ ও সঠিক আদর্শের অনুসারীদের পথে চলে। ভ্রান্তি ও অন্যায়ের পথ অবলম্বনকারীদের বর্জন করে। আর যে উপদেশ ও শিক্ষা গ্রহণ করে না, নিজের জবাবদিহিতা করে না, পরকালের জন্য আমল করে না, ধর্ম বা বিবেক যাকে পাপ ও পঙ্কিলতা থেকে বাধা দেয় না, সে তো পশুর মতো। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি কি মনে কর তাদের অধিকাংশ শোনে ও বুঝে? তারা তো পশুর মতোই; বরং তারা অধিক পথভ্রষ্ট।’ (সুরা ফুরকান :৪৪)
শেষ নবি মুহাম্মদ (সা.)-সহ অন্য নবি-রাসুলের জীবনচরিত আল্লাহ শুধু এজন্যই উল্লেখ করেছেন যেন আমরা তাদের ইতিহাস থেকে শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণ করি। তাদের নির্দেশনা ও চরিত্রের অনুসরণ করি। তাদের পথে চলি। আল্লাহ তাঁর নবি মুহাম্মদ (সা.) কে তাদের অনুসরণের নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘তাদেরই আল্লাহ সৎপথে পরিচালিত করেছেন, সুতরাং তুমি তাদের পথের অনুসরণ করো।’ (সুরা আনআম :৯০) রাসুলের (সা.) জীবনাদর্শ গ্রহণ করলে আল্লাহ দুনিয়া ও আখেরাতের পবিত্র জীবনের নিশ্চয়তা দিয়ে রেখেছেন। ‘যে আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্য করবে সে তাদের সঙ্গে থাকবে যাদের ওপর আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন।’ (সুরা নিসা :৬৯)
অনুসরণের লক্ষ্যে আল্লাহ যেমন নবি-রাসুল ও মুমিনদের ঘটনা বর্ণনা করেছেন ঠিক তেমনি অবিশ্বাসী অবাধ্য অহংকারী লোকদের কাহিনিও বর্ণনা করেছেন যেন আমরা সতর্ক হয়ে তাদের পথ পরিহার করি। নাদির গোত্রের শোচনীয় ঘটনা সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘সুতরাং হে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তিরা! তোমরা উপদেশ গ্রহণ করো।’ (সুরা হাশর :২)
১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪১ হিজরি মসজিদে নববির জুমার খুতবার সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড