মুনশি আমিনুল ইসলাম
সুরা ফাতিহার মাধ্যমেই সূচনা পবিত্র কুরআনের। সুরাটিকে আল কুরআনের সার সংক্ষেপও বলা হয়। এ সুরা নাজিল হয়েছে মানুষের সার্বিক কল্যাণ, মুক্তি ও পথপ্রদর্শক হিসেবে। সুরাটি ফজিলত ও বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে অন্য সব সুরার আলাদা। সুরা ফাতিহার ফজিলত অপরিসীম। এর ফজিলত সম্পর্কে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। কয়েকটি উল্লেখ করা হলো:
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা সুরা ফাতিহা পড়। কোনো বান্দা যখন বলে, ‘আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন’ তখন মহান আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে। যখন বলে, ‘আর-রহমা-নির রহিম’ তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার গুণ বর্ণনা করেছে। বান্দা যখন বলে, ‘মালিকি ইয়াউমিদ্দীন’। আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার মর্যাদা বর্ণনা করছে। বান্দা যখন বলে, ‘ইয়্যাকানা’বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাস্তাঈন’ আল্লাহ বলেন, এ হচ্ছে আমার ও আমার বান্দার মাঝের কথা। আমার বান্দার জন্য তাই রয়েছে, যা সে চায়। বান্দা যখন বলে, ‘ইহদিনাস সিরাতাল মুস্তাকিম..’। তখন আল্লাহ বলেন, এসব হচ্ছে আমার বান্দার জন্য। আমার বান্দার জন্য তাই রয়েছে, যা সে চায়। (সহিহ মুসলিম :৩৯৫)
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে জিবরাঈল (আ.) উপস্থিত ছিলেন। হঠাৎ জিবরাঈল (আ.) ওপর দিকে এক শব্দ শুনতে পেলেন এবং চক্ষু আকাশের দিকে করে বললেন, এ হচ্ছে আকাশের একটি দরজা যা পূর্বে কোনোদিন খোলা হয়নি। সে দরজা দিয়ে একজন ফেরেশতা অবতীর্ণ হলেন এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, ‘আপনি দুটি নূরের সুসংবাদ গ্রহণ করুন। যা আপনাকে প্রদান করা হয়েছে; আপনার পূর্বে কোনো নবিকে প্রদান করা হয়নি। তা হচ্ছে- সুরা ফাতিহা এবং সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত। (সহিহ মুসলিম :৮০৬)
উবাই ইবনু কাব (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ উম্মুল কুরআনের মতো তাওরাত ও ইঞ্জিলে কিছু নাজিল করেননি। এটিকেই বলা হয়, ‘আস-সাবউল মাছানি’ (বারবার পঠিত সাতটি আয়াত), যাকে আমার ও আমার বান্দার মধ্যে বণ্টন করা হয়েছে। আর আমার বান্দার জন্য তাই রয়েছে, সে যা চাইবে’। (নাসাঈ :৩১৯)
সুরা ফাতিহার অনন্য বৈশিষ্ট্য
যে ব্যক্তি নামাজে সুরা ফাতিহা পাঠ করল না, তার নামাজ অপূর্ণাঙ্গ। রাসুলুল্লাহ (সা.) কথাটি তিনবার বললেন। (মিশকাত :৮২৩)
এই সুরা কুরআনের সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ সুরা। তাওরাত, যাবুর, ইঞ্জিল ও কুরআন কোনো কিতাবে এই সুরার তুলনীয় কোনো সুরা নেই। (সহিহ বুখারি, মিশকাত :২১৪২)
এই সুরা এবং সুরায়ে বাকারার শেষ তিন আয়াত হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত বিশেষ নূর, যা অন্য কোনো নবিকে দেয়া হয়নি। (সহিহ মুসলিম :৮০৬)
সুরা ফাতিহার বিশেষ মর্যাদা হলো, দয়াময় আল্লাহ এটিকে নিজের ও বান্দার মধ্যে ভাগ করে নিয়েছেন। একে বাদ দিয়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা সম্ভব নয়। সেজন্যই এর নাম দেয়া হয়েছে ‘উম্মুল কুরআন’। পবিত্র কুরআন মূলত তিনটি বিষয়ে বিন্যস্ত: তাওহিদ, আহকাম ও নসিহত। সুরা ইখলাসে ‘তাওহিদ’ পূর্ণাঙ্গভাবে থাকার কারণে তা কুরআনের এক তৃতীয়াংশের মর্যাদা পেয়েছে। কিন্তু সুরা ফাতিহায় তিনটি বিষয় একত্রে থাকার কারণে তা ‘উম্মুল কুরআন’ হওয়ার মহত্তম মর্যাদা লাভে ধন্য হয়েছে। (তাফসিরে কুরতুবি :১৪৮)
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড