• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন ভাষার বৈচিত্র্য

  মুনশি আমিনুল ইসলাম

২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১২:৫৪
ইসলাম
ছবি: প্রতীকী

মহান আল্লাহ মানুষকে যত ক্ষমতা দিয়েছেন সেগুলোর অন্যতম হলো মানুষের কথা বলার ক্ষমতা। এ ক্ষমতাই মানুষকে অন্য সকল প্রাণী থেকে পৃথক ও বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করেছে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন—‘দয়াময় আল্লাহ, তিনি শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন, সৃষ্টি করেছেন মানুষ, তিনি তাকে দিয়েছেন ভাব প্রকাশের ক্ষমতা বা কথা বলার ক্ষমতা।’ (সুরা আর-রাহমান :১-৪) মাতৃভাষার গুরুত্ব সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন—‘স্বজাতির ভাষা বা মাতৃভাষা ছাড়া আমি কোনো রাসুলই প্রেরণ করিনি।’ (সুরা ইবরাহীম :৪)

পৃথিবীর সকল মানুষ যেমন মহান আল্লাহর প্রিয় সৃষ্টি, তেমনি সকল ভাষাও আল্লাহর প্রিয় সৃষ্টি। সুতরাং কোনো ভাষাকে অন্য ভাষা থেকে আল্লাহর কাছে অধিক মর্যাদাময়, প্রিয় বা ঘৃণ্য ভাষা বলে মনে করার কোনো অবকাশ নেই। প্রত্যেক মানুষের কাছে নিজের পিতা-মাতা ও দেশের যেমন মর্যাদা ও গুরুত্ব, তেমনি গুরুত্ব ও মর্যাদা তার মাতৃভাষার। ভাষার এই বৈচিত্র্য মহান আল্লাহর বিস্ময়কর নিদর্শন ও বিশেষ নিয়ামত। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তার নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে মহাকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য।’ (সুরা রুম :২২) তাইতো পৃথিবীর মানুষ, প্রকৃতি ও অন্যান্য সকল সৃষ্টির বৈচিত্র্যের ন্যায় ভাষার বৈচিত্র্যও আল্লাহর কুদরতের মহানিদর্শন।

বর্তমান বিশ্বে প্রায় সাত হাজারের বেশি ভাষা রয়েছে। শুধু এশিয়ায় প্রচলন আছে দুই হাজার ২০০ ভাষার। বিশ্বে এমনও কিছু মানুষ আছে, যারা পাখির ভাষায় কথা বলে! কথ্য বা লেখ্য ভাষার সাংকেতিক সংস্করণ হিসেবে শিস দিয়ে যোগাযোগ করে। এই শিস ভাষা আবার শুধু বিচ্ছিন্ন কিছু আওয়াজ নয়, বরং বেশ কাঠামোবদ্ধ ও ব্যাকরণসম্মত। পৃথিবীতে প্রায় ৭০টি স্বীকৃত শিস ভাষা নথিভুক্ত আছে, যাদের বেশিরভাগই বিলুপ্ত বা বিলুপ্তির পথে। কম্পাঙ্কের তীক্ষ্ণতার দরুন শিসের আওয়াজ সহজেই আমাদের শ্রবণেন্দ্রিয় ধরতে পারে। এমনকি চার কিলোমিটার অবধি পৌঁছাতে পারে এই আওয়াজ। তাই বিস্তীর্ণ ক্ষেতসমৃদ্ধ কৃষিজীবী জনপদের আন্তঃযোগাযোগে (Intra-communication) এ ভাষা বেশি প্রচলিত। মরক্কোর অ্যাটলাস বা হিমালয়ের পার্বত্য জনপদ, লাওসের মালভূমি, ব্রাজিলের আমাজন, এমনকি খরাবিদীর্ণ ইথিওপিয়ায়ও মানুষ শিসের সাহায্যে যোগাযোগ করত। গ্রিক পরিব্রাজক হেরোডটাস স্বয়ং ইথিওপিয়ান শিস ভাষার সাক্ষী। তার কাছে এ ভাষা ছিল ‘বাদুড়ের কিচিরমিচির’-এর মতো। তুরস্ক, স্পেন, গ্রিসের প্রত্যন্ত কিছু অঞ্চলে আজও কালের সাক্ষী হয়ে টিকে আছে পাখির ভাষা।

ভাষা আল্লাহপ্রদত্ত মহা নেয়ামত। ব্যক্তি বা জাতীয় জীবনে কোনো নেয়ামত অর্জনে যাদের অবদান রয়েছে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ, আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের অংশ; যা ইসলামের নির্দেশ। কৃতজ্ঞতা প্রকাশের অন্যতম দিক হলো ভাষার জন্য যারা জীবন দিয়েছেন তাদের কথা স্মরণ করা, স্বীকৃতি দেওয়া, আলোচনা ও প্রশংসা করা। বিভিন্ন হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কেউ তোমাদের কোনো উপকার বা কল্যাণ করলে তার প্রতিদান দেবে এবং তার জন্য দোয়া করবে।’ (সহিহ বুখারি, খণ্ড-৬, পৃ. ২৬৩১)

অন্য হাদিসে এসেছে- ‘যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞ নয় সে আল্লাহর প্রতিও অকৃতজ্ঞ। সে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি সবচেয়ে বেশি কৃতজ্ঞ যে মানুষের প্রতি সবচেয়ে বেশি কৃতজ্ঞ।’ (আহমদ, আল-মুসনাদ, খণ্ড-৫, পৃ. ২১২)

তাই কাউকে কিছু প্রদান করলে সে তাকে এর প্রতিদান দেবে। যদি প্রতিদান দিতে না পারে তবে সে তার গুণকীর্তন ও প্রশংসা করবে। যে ব্যক্তি উপকারীর গুণকীর্তন ও প্রশংসা করল সে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল। আর যে উপকারীর উপকারের কথা গোপন করল সে অকৃতজ্ঞ। ইসলামের ইতিহাসে দেখা যায়, কোনো অমুসলিম কাফিরও কোনো কল্যাণ করলে রাসুলুল্লাহ (সা.) তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও প্রশংসা করতেন এবং তাকে যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে স্মরণ করতেন।

প্রচলিত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ব্যখ্যা, সমাজের কোন অমীমাংসিত বিষয়ে ধর্মতত্ত্ব, হাদিস, কোরআনের আয়াতের তাৎপর্য কিংবা অন্য যেকোন ধর্মের কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সর্বপরি মানব জীবনের সকল দিকে ধর্মের গুরুত্ব নিয়ে লিখুন আপনিও- [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড