• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৫ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ভারতীয় এক্টিভিস্ট গুল আফসানের লেখায় ভারতের পরিস্থিতি

  ধর্ম ও জীবন ডেস্ক

২৩ ডিসেম্বর ২০১৯, ১১:৪৭
এনআরসি
ছবি : ইন্ডিয়া টুডে

এনআরসিকে কেন্দ্র করে ভারতে চলমান উত্তপ্ত পরিস্থিতির কথা কারও অজানা নয়। কিন্তু আসলে সেখানে কী হচ্ছে, কী হতে যাচ্ছে, তা এক প্রকার অজানাই। ভারতীয় নারী এক্টিভিস্ট গুল আফসানের লেখায় ফুটে ওঠেছে সেই চিত্র। তিনি লিখেছেন—

ভারতের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে এটি আমার চতুর্থ আপডেট।

এখনও আমার শহরে ইন্টারনেট সংযোগ নেই, তাই এই লেখাটাও বাহিরের কোনো স্থান থেকেই লিখছি। কয়েকদিন ধরে ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা চলছে বেশ। একারণে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্নই থাকবে সামনের ক’টা দিন। ভ্রমণ করার মতো অবস্থায় আমি এই মুহূর্তে নেই, সে কারণে হয়তো পরবর্তী আপডেটগুলো আমি আপনাদের সামনে হয়তো তুলে নাও ধরতে পারি (তবে নিজের দিক থেকে চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখবো না)।

এখন আমি মূলত আরও কিছু তথ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাই। এর মাধ্যমে আমি চাইছি কিছু সত্য উদঘাটন হোক।

পুলিশ যেই ১০ জনকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে বলে আপনারা সংবাদ মাধ্যমে শুনেছেন, তাদের কেউই জামিয়া মিল্লিয়ার ছাত্র নয়, একজনও নয়। এরা সকলেই বহিরাগত। এই দুষ্কৃতিকারীদের এসব অপকর্ম করতে এখানে কারা পাঠিয়েছে, তা হয়তো আপনাদের বলে না দিলেও বুঝতে পারছেন।

প্রথম দিন, দিল্লি পুলিশ তো পুরোপুরি অস্বীকার করেই বসলো যে তারা শিক্ষার্থীদের উপর বন্দুক চালিয়েছে। দ্বিতীয় দিন কী হলো? তারা একটি নাটক সাজিয়ে ফেললো। পুলিশ বললো যে, শিক্ষার্থীরা টিয়ার গ্যাস শেলকে বন্দুকের বুলেট ভেবে ভ্রান্তিতে পড়ে গিয়েছে। আজ (গতকাল) মেডিকেল রিপোর্টে যখন বলা হলো আঘাত মূলত বুলেট থেকেই হয়েছে তখন পুলিশ যথারীতি তা অস্বীকার করে বসলো এবং দাবি করলো সেই রিপোর্টটি ভুয়া। তবে দিনশেষে তারা সত্যটাই স্বীকার যেতে বাধ্য হলো। এবার তারা নতুন ষড়যন্ত্রের প্লট সাজালো। বললো, বাহিরের কিছু দুর্বৃত্ত এসে ‘অনিবন্ধিত দেশী বন্দুক’ দিয়ে এই কাজ করেছে। যার মানে দাঁড়ালো পুলিশ নিজেদের বন্দুক ব্যবহার করে নি। এভাবে নির্জলা এক সত্যকে তারা অস্বীকার-ই করে বসলো!

জামিয়ার ছাত্রী হোস্টেলে যখন পুলিশেরা দল বেঁধে প্রবেশ করছিলো সে সময় তারা সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো বন্ধ করে নিয়েছিলো, যাতে তাদের কুকর্মের কোনো সাক্ষী না থাকে; সেখানকার ছাত্রীদের অভিযোগ অমনটাই। অন্ধকারের নির্জনতায় তারা সাধারণ ছাত্রীদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে। কিছু মেয়ে নিজেদের এই অযাচিত অবস্থা থেকে বাঁচাতে বাথ-রুমে গিয়ে আশ্রয় নিলো, পুলিশ সেখানেও দরজা ভেঙ্গে ঢুকে পড়লো, প্রত্যেককে টেনে হিঁচড়ে বের করে নিয়ে আসলো। কিছু ভিডিওতে সাহায্যের জন্যে অসহায় মেয়েদের চিৎকারের শব্দ শোনা যাচ্ছিলো।

ভাঙা হাত নিয়েই একজন নির্যাতিত ছাত্রের ইন্টারভিউ অনেকের নজরে এসেছে হয়তো। পুলিশ তাকে সেই সময় বলছিলো যেনো সে শেষবারের মতো আল্লাহকে স্মরণ করে নেয়, কারণ তারা কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে খুন করতে যাচ্ছে; ছাত্রটি যোগ করলো।

পুলিশ তাকে পেটাচ্ছিলো আর জিজ্ঞাসা করছিলো সে কেনো মোদী এবং অমিত শাহ (ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, যিনি এই সিএএ তথা সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের মূল উদ্যোক্তা)-কে অমান্য করছে। তারা তাকে সেই জায়গাতেই ফেলে রাখলো, যতক্ষণ না সে জ্ঞান হারাল। যখন তার জ্ঞান ফিরে আসলো, সে নিজেকে আবিষ্কার করল হাসপাতালের বিছানায়। কর্তৃপক্ষকে আকুতি জানাল যেনো তার হাতের চিকিৎসা করায়। এতে তারা রেগে গেলো, চিকিৎসাও দিলো না; বরং পুনরায় পুলিশের হেফাজতে সোপর্দ করলো।

সে গরিব এক কৃষক বাবার সন্তান। ১৫ দিন পরেই তার একটি পরীক্ষা আছে। খুব একটা আর্থিক সামর্থ্যও তার নেই। একটা ল্যাপটপ আছে, তাও বৃত্তি হিসেবে পুরস্কারস্বরূপ পেয়েছিলো। ল্যাপটপটা হারিয়ে গেছে, সাথে হারিয়ে গেছে এর ভেতরে থাকা পরীক্ষার জন্যে যাবতীয় নোট এবং লেকচারগুলো। পরীক্ষার জন্যে যা প্রস্তুতি ছিলো সব যেনো এক নিমেষেই ভন্ডুল হয়ে গেলো, দুই হাতে অসংখ্য স্থানে ভেঙে গেছে, পুরো শরীরেই ক্ষতের দাগ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে আরেকজন ভাই যিনি নিজের প্রাণ রক্ষার্থে একটি ওয়াশরুমে আত্মগোপন করেছিলেন, তিনি হারিয়েছেন তার বাম চোখ। ডান চোখের ব্যাপারে ডাক্তার আজ তাকে আরো কষ্টের খবর দিলো—এই চোখের দৃষ্টিশক্তিও ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যাচ্ছে। সারাজীবনের জন্যে তাকে অন্ধ হয়েই থাকতে হবে। তিনিও উঠে এসেছেন দরিদ্র এক পরিবার থেকে, যেখানে তিনিই ছিলেন একমাত্র আয় উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।

প্রতিনিয়ত আরো কষ্টদায়ক এবং গা শিউরে ওঠা সংবাদ আমরা পাচ্ছি। সব কিছু এখানে লিখার শক্তি আমার নেই। আহত শরীরের ছবিগুলো দূর থেকে আমাদের চোখে ভেসে আসছে। এরা রাতের বেলা তাদের নিজেদের শহরে এবং বাড়িতে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলো। নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে তাদের বাবা-মায়েরা সন্তানদের অন্যদের সাথে যোগাযোগ করতে দিতে দিচ্ছেন না। ভয়ের কারণে অনেক ছেলেমেয়ে নিজেদের উপর কী গিয়েছে, তা নিয়ে কথাও বলতে চাচ্ছে না।

পুলিশ এবং মিডিয়া পুরো ঘটনাটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে এনে একে নিয়ে প্রহসন সাজিয়ে চলছে। আমরা অনেক কিছুই হারিয়েছি, প্রতি মুহূর্তেই হারাচ্ছি। আজ এখানেই শেষ করছি। শেষ করার আগে একজন বোনের কথা বলে যাচ্ছি যিনি কিছুক্ষণ পর পর কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন আমাদের সাথে কথা বলতে গিয়ে। তিনি একজন আইনের ছাত্রী। দেশের ‘সংবিধান’ নিয়ে সামনে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এর মধ্যেই তাকে পুলিশ আক্রমণ করে বসলো। এভাবেই বুঝি ‘সংবিধানের প্রতি আস্থার’ প্রতিদান দেওয়া হয়? এভাবেই সেই বিশ্বাসের উত্তর দিতে হলো লাঠি, গ্যাস শেল, বুলেট আর শারীরিক লাঞ্ছনা দিয়ে!

এবার তবে আপনারাই বলুন, এরপরেও মানুষ কীভাবে আশা করে ভারতের মুসলিমরা এই তথাকথিত সেকুলারিজমের উপর আস্থা রাখবে?

অনুবাদ : মিসবাহ মাহিন।

প্রচলিত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ব্যখ্যা, সমাজের কোন অমীমাংসিত বিষয়ে ধর্মতত্ত্ব, হাদিস, কোরআনের আয়াতের তাৎপর্য কিংবা অন্য যেকোন ধর্মের কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সর্বপরি মানব জীবনের সকল দিকে ধর্মের গুরুত্ব নিয়ে লিখুন আপনিও- [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড