মুনীরুল ইসলাম ইবনু যাকির
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ ‘তাদের পথ, যাদেরকে তুমি নিয়ামত দান করেছ।’ [সুরা ফাতিহা, ১ : ৬]
ব্যাখ্যা :
এ আয়াতটি হলো পূর্বোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা। এখানে ‘সিরাতুম মুসতাকিম’ তথা সঠিক পথের পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। আর তা হলো আল্লাহর নিয়ামতপ্রাপ্ত বান্দাদের পথ। সেই নিয়ামতপ্রাপ্ত বান্দা কারা, তাদের পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে ভিন্ন আয়াতে :
وَمَن يُطِعِ اللَّهَ وَالرَّسُولَ فَأُولَٰئِكَ مَعَ الَّذِينَ أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِم مِّنَ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِينَ ۚ وَحَسُنَ أُولَٰئِكَ رَفِيقًا
‘আর যে কেউ আল্লাহর হুকুম এবং তাঁর রাসুলের হুকুম মান্য করবে, তাহলে যাঁদের প্রতি আল্লাহ নিয়ামত দান করেছেন, সে তাঁদের সঙ্গী হবে। তাঁরা হলেন নবি, সিদ্দিক, শহিদ ও সৎকর্মশীল ব্যক্তিবর্গ। আর তাদের সান্নিধ্যই তো উত্তম।’ [সুরা নিসা, ৪ : ৬৯]
যারা দুনিয়াতে এসমস্ত ব্যক্তিবর্গের অনুগামী হবে, পরকালেও তারা তাদের সঙ্গী হবে। আর যারা নবি, সাহাবি ও সৎকর্মশীল মুমিনদের এ পথ পরিত্যাগ করবে আল্লাহ তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।
وَمَن يُشَاقِقِ الرَّسُولَ مِن بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَىٰ وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيلِ الْمُؤْمِنِينَ نُوَلِّهِ مَا تَوَلَّىٰ وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ ۖ وَسَاءَتْ مَصِيرًا
‘আর যে কেউ রাসুলের বিরুদ্ধাচারণ করে, তার কাছে সরল পথ প্রকাশিত হওয়ার পর এবং মুমিনদের (অনুসৃত, সর্বসম্মত) পথের বিপরীতে চলে, আমি তাকে ঐ দিকেই ফেরাব যে দিক সে অবলম্বন করেছে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর তা নিকৃষ্টতর গন্তব্যস্থান।’ [সুরা নিসা, ৪ : ১১৫]
‘মুমিনদের পথ’ বলতে প্রচলিত নির্দিষ্ট কোনো দল-মতকে বোঝানো হয়নি। বরং নবিযুগ থেকে মুসলিম উম্মাহ অবিচ্ছিন্ন ধারা পরম্পরায় যে বিশুদ্ধ আকিদাহ, ফিকহ ও মানহাজ লাভ করেছে, সেটাই উদ্দেশ্য। দীনকে বুঝতে হবে উম্মাহর মহীরুহ সাহাবিদের বুঝের আলোকে। কুরআন-সুন্নাহ বোঝার জন্য শুধুমাত্র শাব্দিক অর্থ, ব্যাকরণগত অর্থ, কিছু উসুল আর কাওয়াইদের বিদ্যা অর্জনই যথেষ্ট নয়। বরং তা সঠিক অর্থে বোঝা ও জানার জন্য অবশ্যই সাহাবাগণের দ্বারস্থ হতে হবে। কেননা তারা প্রত্যক্ষরূপে কুরআনের অবতরণ অবলোকন করেছেন। তাদের উপর আল্লাহ সন্তুষ্ট, তারাও আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট। আর তাদের সেই ‘বুঝ’কেই উম্মাহর প্রজন্ম পরম্পরায় অক্লান্তভাবে পৌঁছে দিয়েছেন উম্মাহর মহীরুহ সালাফরা।
আর সহজ কথায় সেই অবিচ্ছিন্ন ধারাটাকে বলা হয় ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াহ’। তথা নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ এবং তাঁর সাহাবিদের বুঝের আলোকে যে দীন প্রত্যেক প্রজন্মের মাঝে বিকশিত হয়েছে, সেটাই হলো মুক্তির পথ, সিরাতুম মুসতাকিম। আর এটাই হলো হকের একমাত্র মানদন্ড। এর বাইরে নবোদ্ভাবিত কোনো দল, মত, পথ, পন্থা, ইজম, ক্রেসি হকের মানদন্ড নয়, মুক্তির পথ নয়, সিরাতুম মুসতাকিম নয়।
সুতরাং সত্যানুসন্ধানী প্রতিটি মানুষকে যাচাই করতে হবে যে, আমাদের প্রতিটি আকিদাহ, প্রতিটি চিন্তা-চেতনা, প্রতিটি আমল-ইবাদত, চলন-বলন, আচার-আচরণ, কৃষ্টি-কালচার এককথায় গোটা জীবনধারা হিদায়াতের নিয়ামতপ্রাপ্ত বান্দা তথা নবি, সাহাবি, শহিদ ও সালিহিনের সাথে মিলে কিনা। যদি মিলে তাহলে আমরা হিদায়াতপ্রাপ্ত, নিয়ামতপ্রাপ্ত; আর যদি না মিলে তাহলে হিদায়াতের পথ থেকে বিচ্যুত, পথহারা, গোমরাহ।
চলবে ইনশাআল্লাহ।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড