মুনীরুল ইসলাম ইবনু যাকির
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ ‘যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি জগতসমূহের রব।’ [আয়াত : ১]
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর জন্য
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, (الْحَمْدُ لِلَّهِ) আলহামদু লিল্লাহ। অর্থাৎ ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।’ এখানে ‘প্রশংসা’কে কোনো সময় বা স্থানের সাথে যুক্ত করা হয়নি। কুরআনের অন্য জায়গায় সেটি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
وَلَهُ الْحَمْدُ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَعَشِيًّا وَحِينَ تُظْهِرُونَ ‘অপরাহ্নে ও মধ্যাহ্নে, নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলে, সমস্ত প্রশংসা তাঁরই।’ [সুরা রুম, ৩০ : ১৮]
وَهُوَ اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ لَهُ الْحَمْدُ فِي الْأُولَى وَالْآخِرَةِ وَلَهُ الْحُكْمُ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ ‘তিনিই আল্লাহ, যিনি ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই। ইহকাল ও পরকালে তাঁরই প্রশংসা। বিধান তাঁরই ক্ষমতাধীন এবং তোমরা তাঁরই কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে। [সুরা কাসাস, ২৮ : ৭০]
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ وَلَهُ الْحَمْدُ فِي الْآخِرَةِ وَهُوَ الْحَكِيمُ الْخَبِيرُ ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি নভোমণ্ডলে যা আছে এবং ভূমণ্ডলে যা আছে সব কিছুর মালিক এবং তাঁরই প্রশংসা পরকালে। তিনি প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ।’ [সুরা সাবা, ৩৪ : ১]
আর সুরা ফাতিহার প্রথম আয়াতে (الْحَمْدُ) শব্দের (ال) হলো (استغراقي), যা কোনো জিনিসের (كل) বা সার্বিকতা বোঝায়। সুতরাং আয়াতের অর্থ দাঁড়াচ্ছে, ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য’।
প্রশংসাবাচক আরও বহু শব্দ আছে আরবি ভাষায়, কিন্তু ‘হামদ’ হলো এমন প্রশংসা, যা চিরসত্য। কেউ স্বীকার করলেও যেমন সত্য, অস্বীকার করলেও তেমনি সত্য। কেউ যখন বলে ‘সূর্য আলো দেয়’ তখন এটা যতটা না প্রশংসা বোঝায়, তার চেয়েও বেশি বোঝায় এক সত্যের সাক্ষ্য। সুতরাং আলহামদুলিল্লাহ মানে আল্লাহই প্রশংসার উপযোগী সত্ত্বা।
আল্লাহর রুবুবিয়্যাত
এরপর আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, (رَبِّ الْعَالَمِينَ) অর্থাৎ, ‘যিনি জগতসমূহের রব।’
এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালার উজুদ বা অস্তিত্বের প্রমাণ পেশ করা হয়েছে এবং তা এমন শক্তিশালী প্রমাণের মাধ্যমে পেশ করা হয়েছে, যা অখণ্ডনীয়। عَالَمِينَ শব্দটি বহু বচন, একবচনে হলো عَالَم। অর্থাৎ জগত। আর মুফাসসিরগণ বলেছেন যে, الْعَالَم শব্দটি উদ্গত হয়েছে علامة শব্দ থেকে, যার অর্থ হলো প্রমাণ, নিদর্শন বা চিহ্ন। কারণ আলম বা জগত হলো এর স্রষ্টার অস্তিত্বের আলামত বা প্রমাণ। আল্লাহ তায়ালা অন্য আয়াতে বলেছেন,
إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ وَاخْتِلاَفِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لآيَاتٍ لِّأُوْلِي الألْبَابِ ‘নিশ্চয় আসমান ও জমিনের সৃষ্টিতে এবং রাত্রি ও দিনের আবর্তনে নিদর্শন রয়েছে বোধসম্পন্ন লোকদের জন্যে।’ [সুরা আলি ইমরান, ৩ : ১৯০]
এজন্যই মুসা আলাইহিস সালাম ও ফেরাউনের প্রশ্নোত্তর কুরআনে উপস্থাপন করা হয়েছে যে,
قَالَ فِرْعَوْنُ وَمَا رَبُّ الْعَالَمِينَ ‘ফেরাউন বলল, বিশ্বজগতের পালনকর্তা আবার কি?’ قَالَ رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا إن كُنتُم مُّوقِنِينَ মুসা বলল, ‘তিনি নভোমণ্ডল, ভূমণ্ডল ও এতদুয়ের মধ্যবর্তী সবকিছুর রব, যদি তোমরা বিশ্বাসী হও।’ [সুরা শুয়ারা, ২৬ : ২৩-২৪]
রব শব্দের অর্থ
রব শব্দটির একাধিক অর্থ আছে। এটি বান্দার ক্ষেত্রে ব্যবহার হলে খুবই সীমিত অর্থে কোনো কিছুর মালিক, পালনকারী, রক্ষণাবেক্ষণকারী ইত্যাদি বোঝায়। আর আল্লাহর ক্ষেত্রে ব্যবহার হলে সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, আইন-বিধাতা ইত্যাদি বোঝায়। ‘রব’ শব্দটির দুটো দিক আছে—তাকবিনি তথা মহাজাগতিক ও তাশরিয়ি তথা আইন-বিধানগত। আবার ফিরে যাই মুসা ও ফেরাউনের ঘটনায়।
قَالَ فَمَن رَّبُّكُمَا يَا مُوسَى সে (ফেরাউন) বলল, ‘তবে হে মুসা, তোমাদের রব কে?’
قَالَ رَبُّنَا الَّذِي أَعْطَى كُلَّ شَيْءٍ خَلْقَهُ ثُمَّ هَدَى ‘তিনি (মুসা) বললেন, ‘আমাদের রব তিনি, যিনি প্রত্যেক বস্তুকে তার যথোপযুক্ত আকৃতি দান করেছেন, এরপর পথপ্রদর্শন করেছেন।’ [সুরা ত্বা-হা, ২০ : ৪৯-৫০]
এ আয়াতে রুবুবিয়্যাতের তাকবিনি ও তাশরিয়ি তথা মহাজাগতিক ও বিধানগত উভয় দিক ফুটে উঠেছে। কারণ সৃষ্টি-প্রতিপালন এসব তাকবিনি গুণ, আর পথপ্রদর্শন হলো তাশরিয়ি বা আইন-কানুনগত ব্যাপার।
ইহুদি-খ্রিস্টানরা তাদের ধর্মগুরুদের আল্লাহর পরিবর্তে ‘রব’ বানিয়ে নিয়েছিল তাশরিয়ি দিক থেকে। যদিও তারা তাদের ধর্মগুরু পন্ডিতদের পূজা-অর্চনা করত না, তাদের সৃষ্টিকর্তা বা রিজিকদাতা মনে করত না, কিন্তু ধর্মগুরুরা আল্লাহর হালালকে হারাম অথবা আল্লাহর হারামকে হালাল ঘোষণা করলে তারা সেটাকে নির্দ্বিধায় গ্রহণ করে নিত। আল্লাহ তায়ালা বলছেন,
اتَّخَذُواْ أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِّن دُونِ اللّهِ ‘তারা আল্লাহর পরিবর্তে তাদের পন্ডিত ও সংসার-বিরাগীদের ‘রব’ হিসেবে গ্রহণ করেছে...।’ [সুরা তাওবা, ৯ : ৩১]
চলবে ইনশাআল্লাহ।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড