• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

আত্মশুদ্ধি : প্রয়োজনীয়তা ও সহজ পন্থা

  মুফতি আবদুল্লাহ আল-মামুন

৩১ অক্টোবর ২০১৯, ১২:৪৫
আত্মশুদ্ধি
ছবি : প্রতীকী

সকাল-সন্ধ্যার জীবনে আমরা দুনিয়ার কাজে ব্যস্ত থাকি। কিন্তু মৃত্যুর পরে কী হবে? আল্লাহর সামনে কীভাবে উপস্থিত হবো? তারপর কি কি অবস্থা সামনে আসবে, কী কী পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে? তার জন্য কী ধরনের প্রস্তুতি প্রয়োজন? সকাল-সন্ধ্যার ব্যস্ততায় এসব চিন্তা খুব কম মানুষেরই মনে উদ্রেগ হয়ে থাকে।

অথচ মাঝে মধ্যে আমাদের এমন মজলিসের ব্যবস্থা করা অত্যন্ত প্রয়োজন, যার মাধ্যমে আমরা প্রত্যেকেই কিছু সময়ের জন্য নিজের ইসলাহ ও আত্মশুদ্ধির ব্যাপারে চিন্তা করবো, নিজের আখিরাতের প্রস্তুতির ব্যাপারে ফিকির করবো। যে নামেই হোক এমন মজলিস অত্যন্ত জরুরি। আর এ উদ্দেশ্যে পারস্পরিক কোন এক স্থানে মিলিত হওয়ার বিষয়টা সাহাবা কিরামের মাঝেও প্রচলন ছিল। আর আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন মজলিসের ব্যাপারে উৎসাহও দিয়েছেন। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে,

كان عبدُ اللهِ بنُ رواحةَ إذا لقِيَ الرجلَ من أصحابِ رسولِ اللهِ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم قال تعالَ نؤمنُ بربِّنا ساعةً فقال ذاتَ يومٍ لرجلٍ فغضب الرجلُ فجاء إلى النبيِّ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم فقال يا رسولَ اللهِ ألا ترَى إلى ابنِ رواحةَ يرغبُ عن إيمانِك إلى إيمانِ ساعةٍ فقال النبيُّ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم يرحمُ اللهُ ابنَ رواحةَ إنه يحبُّ المجالسَ التي تتباهَى بها الملائكةُ.

আবদুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোন সাহাবির সাথে সাক্ষাত করতেন, তখন তিনি তাকে উদ্দেশ্য করে বলতেন, ‘এসো! আমরা কিছু সময় আমাদের রবের প্রতি ঈমান আনি।’ তো একদিন তিনি এক ব্যক্তিকে এটা বললে, সে রাগান্বিত হয়ে গেল এবং আল্লাহ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কি ইবনু রাওয়াহার প্রতি লক্ষ্য করেননি, সে আপনার প্রতি ঈমানের বিষয়টার প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে কিছুসময়ের জন্য ঈমানের প্রতি বেশি গুরুত্বারোপ করছে। একথা শুনে আল্লাহর নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আল্লাহ ইবনু রাওয়াহার প্রতি রহম করুন। প্রকৃতপক্ষে সে এমন মজলিসকে পছন্দ করে, যে মজলিসের ব্যাপারে ফেরশতাকুল গর্ববোধ করেন। [হাইসামি, মাজমাউয যাওয়ায়েদ : ১০/৭৯; আহমাদ, আলমুসনাদ : ১৩৭৯৬; হাসান সনদে বর্ণিত]

অতএব এটাকে বিদআত বলার মত দুঃসাহস না দেখিয়ে বরং নিজেদের ইসলাহ ও আত্মশুদ্ধির চেষ্টায় লিপ্ত হওয়া উচিত। এজন্য এমন ব্যক্তিদেরকে নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বসা- যাদের ঈমানি বিষয়গুলো আপনাকে আকৃষ্ট করে, যাদের সুন্নাহর অনুসরণ আপনাকে অনুপ্রাণিত করে, যাদের দীনের অনুসরণ আপনাকে দীনের উপর অটল থাকতে উদ্বুদ্ধ করে।

তবে এক্ষেত্রে অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় জেনে রাখতে হবে যে, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যে সমস্ত দায়িত্ব দিয়ে পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়েছিল তন্মধ্যে অন্যতম একটা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো ‘আত্মশুদ্ধি’। আত্মশুদ্ধি অর্জন করা ইবাদতেরও অন্তর্ভুক্ত। অতএব ইবাদতের সে গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, যা উলামায়ে কিরাম আলোচনা করেছেন। ইমাম মুহাম্মাদ আমিন আশ-শানকিতি রাহিমাহুল্লাহ বলেন,

الْقَاعِدَةُ الْأُصُولِيَّةُ الْفِقْهِيَّةُ: أَنَّ الْعِبَادَاتِ مَبْنَاهَا عَلَى التَّوْقِيفِ، وَمَا لَمْ يَكُنْ دِينًا وَلَا عِبَادَةً عِنْدَ السَّلَفِ الصَّالِحِ فَلَا حَاجَةَ إِلَيْهِ الْيَوْمَ، كَمَا قَالَ مَالِكٌ رَحِمَهُ اللَّهُ: لَنْ يُصْلِحَ آخِرَ هَذِهِ الْأُمَّةِ إِلَّا مَا أَصْلَحَ أَوَّلَهَا.

উসুলে ফিকহের একটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি হলো, যাবতীয় ইবাদতের ভিত্তি হলো ‘তাওকিফ’ তথা স্থগিতকরণ (শরিয়তের দলিল দ্বারা প্রমাণিত হওয়ার উপর স্থগিত থাকা)। সুতরাং সালাফে সালিহিনের নিকট যে বিষয়টা দীনের অন্তর্ভুক্ত ছিল না, দীনের ক্ষেত্রে আজও সে বিষয়টির কোন প্রয়োজন নেই। আর এক্ষেত্রে ইমাম মালিক রাহিমাহুল্লাহ কত চমৎকার কথা বলেছেন : ‘এই উম্মতের শেষাংশের সংশোধন কেবল সে পদ্ধতিতেই হতে পারে, যে পদ্ধতিতে উম্মতের প্রথম অংশ সংশোধিত হয়েছিল। [তাফসিরে আদওয়াউল বয়ান : ৮/১৫৫]

তাই মনে রাখতে হবে, আত্মশুদ্ধির সহজ ও সঠিক পন্থা হলো, ইত্তিবায়ে সুন্নাহ তথা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহর অনুসরণ করা।

লেখক : খতিব, বাইতুল ফালাহ জামে মসজিদ, খুলনা।

প্রচলিত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ব্যখ্যা, সমাজের কোন অমীমাংসিত বিষয়ে ধর্মতত্ত্ব, হাদিস, কোরআনের আয়াতের তাৎপর্য কিংবা অন্য যেকোন ধর্মের কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সর্বপরি মানব জীবনের সকল দিকে ধর্মের গুরুত্ব নিয়ে লিখুন আপনিও- [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড