ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
৪২ বছর পর জন্মদাতা মা-বাবার খোঁজ করতে সুদূর জার্মানি থেকে বাংলাদেশে এসে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে উপস্থিত হয়ে সাংবাদিকদের সহযোগিতা চাইলেন সেলিনা। এ সময় তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
বুধবার (৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে উপস্থিত হয়ে সেলিনা জানান, তার পালক বাবা জন ম্যাকডোনাল্ড ১৯৭৬ সালের জুন বা জুলাই মাসে সরিষাবাড়ীর গাইতিপাড়া গ্রাম থেকে তাকে দত্তক নেন। ম্যাকডোনাল্ড তখন একটি বেসরকারি শিশু সংস্থার প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশে কাজ করতেন।
সেলিনার বয়স যখন ৬ বছর তখন তিনি জানতে পারেন যে, বাবা-মার দরিদ্রতার কারণে মাত্র পাঁচ দিন বয়সে ১৯৭৬ সালের জুন বা জুলাই মাসে জামালপুরের সরিষাবাড়ীর গাইতিপাড়া গ্রামের রাস্তার পাশে ফেলে চলে যান জন্মদাতারা। পরে কয়েকজন গ্রামবাসী তাকে উদ্ধার করে একটি এতিমখানায় দেওয়ার উদ্যোগ নেন। এ সময় বিদেশি এনজিও কর্মী জন ম্যাকডোনাল্ড শিশুটিকে লালন-পালনের জন্য নিতে চাইলে গ্রামের লোকজন তার হাতে তুলে দেন। বাংলাদেশে কাজ শেষে তিনি তাকে জার্মানি নিয়ে যান।সেখানে নেওয়ার পর সেলিনাকে একটি স্কুলে ভর্তি করান। তারপর থেকে সেলিনা জার্মানিতেই বড় হয়েছেন।
সেলিনা জার্মানিতে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন এবং স্টেফান নামে এক জার্মান নাগরিককে বিয়েও করেন। তাদের অ্যাঞ্জেলা (২২) নামে একটি মেয়ে ও ফিন (১৫) নামে একটি ছেলে রয়েছে।
সেলিনা আরও জানান, স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরের কাছে একটি হাসপাতালের চিকিৎসক মার্ক সেয়ারারের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। একই হাসপাতালে তিনিও চাকরি করেন। এক পর্যায়ে তিনি সেয়ারারকে নিয়ে বাংলাদেশে আসার সিদ্ধান্ত নেন। এরই মধ্যে কেটে গেছে ৪২ বছর। কিন্তু এখনো বাবা-মাকে ভুলতে পারেননি তিনি। গত ৪ অক্টোবর তিনি প্রথমবারের মতো সেয়ারারকে নিয়ে ঢাকায় আসেন। এক জার্মান প্রবাসী বাংলাদেশির সহায়তায় এখানে এক হোটেলে ওঠেন। ওই বাংলাদেশি ময়মনসিংহে বসবাসরত অপর এক জার্মান প্রবাসী দেলোয়ার হোসেনকে অনুরোধ করেন সেলিনাকে সহায়তা করার জন্য। পরে গত ৭ অক্টোবর ময়মনসিংহে আসেন এবং দেলোয়ারের সহায়তায় জামালপুরের গাইতিপাড়া গ্রামে যান।
দেলোয়ার জানান, মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে প্রায় ৪ ঘণ্টা খোঁজাখুঁজির পর সেলিনার জন্মস্থান গাইতিপাড়া গ্রামের সন্ধান পাওয়া যায়। কিন্তু সেলিনার ছোটবেলার ছবি দেখিয়ে এবং বিভিন্ন পরিচয় দিয়েও তার বাবা-মায়ের সন্ধান পাওয়া যায়নি। সেলিনা বিভিন্ন বয়সের মানুষের সঙ্গে কথা বলেন এবং আবেগজড়িত কণ্ঠে তার বাবা-মায়ের খোঁজ করেন। বাবা-মাকে খুঁজে না পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া সেলিনা।
সকলের সহযোগিতা চেয়ে সেলিনা আরও জানান, জন্মস্থানের প্রতি মায়ার কারণে তিনি বাংলাদেশে আসেন এবং বাবা-মায়ের খোঁজ করেন। এবার আক্ষেপ নিয়ে ফিরে গেলেও আবারও তিনি বাংলাদেশে আসবেন। আরও দুই সপ্তাহ বাংলাদেশে থাকবেন বলেও জানান তিনি।
ওডি/এএসএল
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড