আহমাদুল কবির, মালয়েশিয়া প্রতিনিধি
মালয়েশিয়ায় একের পর এক অসামান্য অবদান রেখে চলেছেন বাংলাদেশি অধ্যাপক সাইদুর রহমান। ময়মনসিংহ জেলার কৃতি সন্তান হিসেবে পরিচিত প্রফেসর ড. সাইদুর রহমান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাবেক শিক্ষার্থী।
মালয়েশিয়ায় মেধা ও প্রজ্ঞায় যারা নিজ দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছেন তাদের মধ্যে অধ্যাপক ড. সাইদুর রহমানও একজন। তার গবেষণাপত্র বিশ্বের অন্যান্য গবেষকদের কাছে খুবই সমাদৃত। উদ্ধৃতি (citation) গবেষণা প্রভাব, গবেষণা কর্মক্ষমতা এবং বিশ্বব্যাপী র্যাঙ্কিং একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
গুগল স্কলারের উদ্ধৃতি (citation impact) বিশ্লেষণ অনুসারে তার এইচ-ইনডেক্স-১১৫ সহ মোট উদ্ধৃতি ৫০ হাজারেও অধিক উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে। https://scholar.google.com/citations?hl=en&user=DEy33GsAAAAJ&view_op=list_works&sortby=pubdate ওয়েব অব সাইন্স (Web of Science) ন্যানোফ্লুয়েড গবেষণায় তিনি বিশ্বের গবেষকদের মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
২০১৪ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত গবেষণা ক্ষেত্রে শীর্ষ ১% হওয়ার জন্য তিনি বিশ্ব সেরা গবেষক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। মালয়েশিয়ার উচ্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয় উদ্ধৃতি প্রভাবেও তার ব্যতিক্রমী অবদানের স্বীকৃতি দিয়েছে।
ইউনিভার্সিটি অফ মালয় যা প্রিমিয়ার রিসার্চ ইউনিভার্সিটি তাকে উদ্ধৃতি প্রভাবে অসামান্য অবদানের জন্য ২০১১-২০১৪ এর মধ্যে উদ্ধৃত গবেষকদের সম্মানিত করেছে।
সানওয়ে ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট প্রফেসর সিব্র্যান্ড পপ্পেমা সোশ্যাল মিডিয়ায় উদ্ধৃতি প্রভাবে প্রফেসর সাইদুরের উল্লেখযোগ্য অবদান তুলে ধরেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৫০ হাজারের অধিক ভিউ হয়েছে। প্রেসিডেন্ট তার অসামান্য অবদানের জন্য গবেষণা সম্প্রদায় এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মধ্যে তার জনপ্রিয়তাও তুলে ধরেন।
আরও পড়ুন : ‘অভিবাসী কর্মীর বেতন কাটলেই নিয়োগকর্তার কোটা বাতিল’
পাশাপাশি তার অসামান্য অবদানে মালয়েশিয়ায় অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও প্রবাসীরা আনন্দিত। তারা বলেছেন, অধ্যাপক সাইদুর রহমান আমাদের গর্ব। তিনি বিদেশের মাটিতে নিজগুণে দেশকে পরিচিতি করছেন।
সাইদুর রহমান ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে মালয়েশিয়ার সানওয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবেষণায় পুরস্কারও পেয়েছেন। তিনি ল্যাঙ্কাস্টারের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শক্তি প্রযুক্তি বিভাগ এবং মালয়েশিয়ার সানওয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যানোম্যাটরিয়ালস অ্যান্ড এনার্জি টেকনোলজির অধ্যাপক। ল্যাঙ্কাস্টার জরিপে ২০২০ সালের সেরা চারজন গবেষকের নাম প্রকাশ করা হয়েছে।
সেখানে মালয়েশিয়ার সানওয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যানোমেটেরিয়ালস এবং এনার্জি টেকনোলজির প্রফেসর ড. সাইদুর রহমান সেরা চারে রয়েছেন।
এক সাক্ষাতকারে সাইদুর রহমান বলেন, সঠিক গবেষণা কৌশল এবং গবেষণা সংস্থা এবং তহবিল সংস্থার সমর্থনসহ, গবেষকরা উল্লেখযোগ্য উদ্ধৃতি এবং অন্যান্য গবেষণা প্রভাব তৈরি করতে পারেন।
গবেষক/শিক্ষাবিদদের অত্যাধুনিক গবেষণার সাথে বিশ্বব্যাপী বিশাল চ্যালেঞ্জিং গবেষণার ক্ষেত্রে কাজ করতে হবে, স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের কার্যকর ভাবে তত্ত্বাবধান করতে হবে, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সহযোগিতা (collaboration) করতে হবে, শীর্ষ মানের জার্নালে প্রকাশ করতে হবে, তহবিল খুঁজতে হবে, অত্যাধুনিক সরঞ্জাম সহ গবেষণাগার স্থাপন করতে হবে।
গবেষকদের তাদের যোগাযোগ, দল গঠন, নৈতিকতা, নেতৃত্ব এবং জীবনব্যাপী শেখার (Life long learning) দক্ষতাও উন্নত করতে হবে।
গবেষণা সংস্থাগুলোকে তাদের গবেষকদের অর্থায়ন, গবেষণা প্রণোদনা, পুরষ্কার, পদোন্নতি, প্রেরণা, শিক্ষাদান এবং প্রশাসনিক শিক্ষার optimum লোড দিয়ে সহায়তা করতে হবে।
সাইদুর রহমান বলেছেন, বিশ্বায়নের এই যুগে দেশের খ্যাতি ও সুনামকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার জন্য জোরে শোরে দেশকে ব্রান্ডিং করতে হবে। এই ব্রান্ডিংয়ের মানে হচ্ছে দেশের আলোকিত দিকগুলো বিশ্বের কাছে তুলে ধরা।
তিনি আরও বলেন, ব্রান্ডিংয়ের সুফল হচ্ছে, দেশের ইতিবাচক ব্রান্ডিং খাড়া করতে পারলে সঙ্গে সঙ্গে দেশের জনশক্তি, পর্যটন, দেশে তৈরি পণ্য, বিনিয়োগ ও অন্যান্য সেবা ও মানুষের কাছে বিশ্বাস যোগ্যতা অর্জন করে এবং গ্রহণযোগ্যতা পায়।
সরকার, রাজনৈতিক দল, গণমাধ্যম, দেশ এবং প্রবাসের বাসিন্দা সবাইকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় এক কোটিরও বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন। যারা দেশের ব্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসাবে কাজ করতে পারেন। বিশ্বের জনশক্তির বাজারে শুধু শ্রমিক রফতানির কথা না ভেবে দক্ষ জনশক্তি পাঠানোর উদ্যোগ নিলে বাংলাদেশের ইমেজ বদলে যাবে।
তিনি আরও বলেন, সমস্যা আমাদের আছে ঠিকই, কিন্তু গন্তব্য স্থলে পৌঁছতে হলে নীতিবাচক দিক গুলোকে পিছনে রেখে বিশ্বের কাছে দেশকে নিয়ে একটি সুন্দর বার্তা পৌঁছে দিতে হবে। যা বাংলাদেশকে নিয়ে বিশ্বের দৃষ্টিভঙ্গি পুরোপুরি বদলে দেবে।
প্রফেসর সাইদুর ন্যানোম্যাটেরিয়ালের ক্ষেত্রে প্রধান তদন্তকারী এবং সদস্য হিসাবে ২৫ মিলিয়নেরও অধিক মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত সুরক্ষিত এবং পরিচালনা করেছেন প্রফেসর সাইদুর ন্যানোম্যাটেরিয়ালের উপর গবেষণা করছেন এবং শক্তি সঞ্চয়, তাপ স্থানান্তর, সৌর শক্তি, শক্তি দক্ষতার ক্ষেত্রে তাদের প্রয়োগ করছেন।
আরও পড়ুন : মালয়েশিয়ায় ফোরাম অ্যাসোসিয়েশনের ইদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত
অধ্যাপক সাইদুর বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের সুবিধার জন্য অনলাইন সেমিনার, সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের মাধ্যমে তার ২৫ বছরের গবেষণার অভিজ্ঞতা শেয়ার করছেন। এছাড়াও তিনি অভাবী মানুষ, এতিম, অসুস্থ মানুষ এবং দরিদ্র তরুণ প্রতিভাদের সাহায্য করার সাথে জড়িত। অধ্যাপক সাইদুর ভবিষ্যতে আরও সামাজিক অবদান রাখার ইচ্ছা পোষণ করেন।
ওডি/কেএইচআর
সম্পাদক: মো. তাজবীর হোসাইন
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড