কামরুজ্জামান হেলাল, যুক্তরাষ্ট্র
নদী দখল প্রতিরোধে ৭ দফা সুপারিশ দিয়েছে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন পবা ও সাদাকাহ ফাউন্ডেশন ইউএসএ। গত শুক্রবার (৩ সেপ্টেম্বর) ‘নদী দখলমুক্ত করণ প্রক্রিয়ার বর্তমান অবস্থা ও করণীয়’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনায় সুপারিশগুলো তুলে ধরেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান আবু নাসের খান।
৭ দফা সুপারিশে বলা হয়- অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদীর জায়গা নদীকে ফিরিয়ে দিতে হবে, খাদ্য উৎপাদন টিকিয়ে রাখার জন্য নদীর নাব্যতা রক্ষায় সোচ্চার হতে হবে, নদীর জায়গায় কোনো স্থাপনা গড়ে তোলা যাবে না, কঠোর আইনের মাধ্যমে নদীর পানি প্রবাহ সুনিশ্চিত করতে হবে, সড়ক পথের পাশাপাশি নৌপথের উন্নয়নে জোর দিতে হবে যাতে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়, স্বল্প উচ্চতার ব্রিজ চিহ্নিত করে এগুলোর উচ্চতা বাড়াতে হবে, নদীতে টানেল করে তার সক্ষমতাও বাড়াতে হবে এবং নদীর সীমানা চিহ্নিত করে অবৈধ দখল গুলো উচ্ছেদ করতে হবে পাশাপাশি সীমানা চিহ্নিত করতে প্রযুক্তির সহায়তা নিতে হবে।
পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, আমাদের অর্থনীতি, ইকোসিস্টেম, ডেভেলপমেন্ট পুরোটাই নদীর উপর নির্ভরশীল। সে সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই ধারণা নেই। বর্ষা, বন্যা এগুলোর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আমরা অনুধাবন করি না। এসব বিষয়াদি না বুঝলে, না জানলে আমরা বাঁচতে পারব না। তাই অবিলম্বে নদীর সীমানা চিহ্নিত করে, সেগুলো দখল মুক্ত করা জরুরি।
আমন্ত্রিত প্রধান অতিথি হিসেবে নদী কমিশনের সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান ডক্টর মুজিবর রহমান হাওলাদার বলেছেন, ক্ষমতাসীন দলের লোকজনের পৃষ্ঠপোষকতায় সরকারি অনেক অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজসে চলে এই নদী দখল। নদী কমিশন ২০১৮-১৯ সালে সারা দেশের দখল হওয়া নদীর এলাকা ও দখলদার চিহ্নিত করে দিয়েছে। এখন ধারাবাহিকভাবে সেসব দখলদারদের উচ্ছেদ করতে হবে স্থানীয় প্রশাসনকে। এ বিষয়ে কারো সাথে কোনো আপোষ করা যাবে না।
আরও পড়ুন : বিশ্বকে আফগানিস্তানের সঙ্গে থাকতে বলছেন ইমরান খান
ডক্টর মুজিবর রহমান হাওলাদার আরও বলেন, নদী হচ্ছে দেশের উন্নয়নের প্রাণ শক্তি, নদীকে বাঁচিয়ে রাখতে না পারলে দেশের উন্নয়ন ব্যাহত হবে। তাই সংশোধীত নদী কমিশন আইন ২০২০ এর খসড়া বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
অনুষ্ঠানে পবার সাধারণ সম্পাদক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুস সোবহান বলেন, পরিবেশ রক্ষা ও নদী দখল বন্ধে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি অত্যন্ত জরুরি। কারণ সরকার দলীয় কিছু অসাধু লোকের কারণে এ ধরনে সংকট চলে আসছে বছরের পর পর। তাই নদীর প্রবাহ রোধ করে নদী দখলের মতো ঘৃন্যকাজ বন্ধের বিষয়ে রাজনৈতিকভাবেও জনগণকে সচেতন করা এখন সময়ের দাবি।
সাদাকাহ ফাউন্ডেশন ইউএসএর প্রধান নির্বাহী মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নদী ও জলাশয় দখল, তাই দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী নদী ও জলাশয়কে দখলমুক্ত রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নয়তো জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে বাংলাদেশ ভয়াবহ সংকটে পড়ে যাবে, যা থেকে সৃষ্ট দুর্যোগ কাটিয়ে ওঠা বাংলাদেশের জন্য অনেকটাই কষ্ট সাধ্য হবে।
এ সময় তিনি সম্প্রতি আমেরিকার নিউইয়র্কে মাত্র ১ ঘণ্টার বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় পৃথিবীর এমন উন্নত দেশেও প্রায় ১৮-১৯ জনের মৃত্যুর ঘটনা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের জন্য ভাবনার অনুষঙ্গ বলে মন্তব্য করেন। বিদেশে থেকেও দেশের জন্য প্রবাসীরা কাজ করছেন উল্লেখ করে মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, প্রয়োজনে পরিবেশ রক্ষায় দেশের তৃণমূল পর্যায়েও তারা আরও কাজ করবেন।
আরও পড়ুন : প্রবাসীদের কল্যাণে কাজ করবে মালয়েশিয়া বিডি প্রেসক্লাব
কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ইকবাল হোসেন বলেছেন, নদী দখল এখনো বন্ধ করতে না পারলে নতুন প্রজন্মকে এক সময় নদীর শুধু গল্পই শোনাতে হবে। আর কঠিন বিপর্যয়ে পড়বে দেশ। সাংবাদিক সিকদার নজরুল ইসলাম বলেছেন, উন্নয়নের প্রয়োজনে খাল নদীর ওপর বিভিন্ন অবকাঠামো ব্রিজ কালভার্ট সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু সেখানে অবশ্যই দেখতে হবে পরিবেশ রক্ষা করতে, নদী রক্ষা করতে বিকল্প কিছু করা যেত কি-না। মূলকথা হলে নদীর দখল বন্ধ করতে সোচ্চার হতে হবে সবাইকে। ওয়েবিনারে এম এম বাদশাহর সঞ্চালনায় কী নোট উপস্থাপন করেন মোহসীন কবির।
ওডি/কেএইচআর
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড