চীন প্রতিনিধি
বাংলাদেশ, সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান, ইয়েমেন, মিশর, আমেরিকাসহ বিশ্বের ২০টিরও বেশি দেশের অংশগ্রহণে ১৭তম চীন-আসিয়ান এক্সপো এবং চীন-আসিয়ান ব্যবসায় ও বিনিয়োগ শীর্ষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। চীনের গুয়াংশি ঝুয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের রাজধানী নাননিংয়ে চার দিনব্যাপী এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং। এবারের চীন-আসিয়ান এক্সপোর থিম ছিল বেল্ট অ্যান্ড রোড নির্মাণ এবং ডিজিটাল অর্থনীতি সহযোগিতার প্রচার।
নাননিং শহরে অবস্থিত নাননিং আন্তর্জাতিক সম্মেলন এবং প্রদর্শনী কেন্দ্রে ২৭ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এক্সপোটি যৌথভাবে স্পন্সর করে চীনের গুয়াংশি ঝুয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের সরকারে সহযোগিতায় দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ১০ আসিয়ান সরকারের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য বিভাগ এবং আসিয়ান সেক্রেটারিয়েট। মহামারি সম্পর্কে উদ্বেগের কারণে এই বছর অনলাইন এবং অফলাইন উভয় প্রদর্শনীর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল।
সিপিসি কেন্দ্রীয় কমিটির পলিটিকাল ব্যুরোর সদস্য এবং কেন্দ্রীয় বিদেশ বিষয়ক কমিশনের কার্যালয়ের পরিচালক ইয়াং চিয়েছি এই এক্সপোতে অংশগ্রহণ করতে নাননিং সফর করেছিলেন। তিনি উদ্বোধনী সভায় সভাপতিত্ব করেন এবং উদ্বোধনের ঘোষণা দেন। এছাড়া আসিয়ান মহাসচিব লিন ইউহুই ভিডিও কনফারেন্স মাধ্যমে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা রাখেন। আসিয়ান দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতরা এবং চীনের পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
উদ্বোধনী সম্মেলনে চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং একটি ভিডিও বক্তৃতায় সাম্প্রতিক বছরগুলিতে চীন-আসিয়ান সহযোগিতার ফলপ্রসূ সাফল্যের ওপর পর্যালোচনা করেন। রাষ্ট্রপতি শি বলেন, চীন-আসিয়ান এর মধ্যে গভীর সম্পর্কের কারণে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক সহযোগিতার সবচেয়ে সফল এবং গতিশীল মডেল হয়ে উঠেছে।
রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ নিয়ে চীন-আসিয়ান সম্প্রদায়ের মধ্যে আরেও গভীর সম্পর্ক গঠনের জন্য চারটি প্রস্তাব রাখেন। এগুলো হলো- কৌশলগত পারস্পরিক বিশ্বাস বৃদ্ধি এবং উন্নয়ন পরিকল্পনার গভীরতকরণ; অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং আঞ্চলিক অর্থনীতির সামগ্রিক পুনরুদ্ধার ত্বরান্বিত; প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন বৃদ্ধি এবং ডিজিটাল অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও গভীর করা; মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহযোগিতা বাড়ানো, জনস্বাস্থ্যের সক্ষমতা বাড়ানো শক্তিশালী করা।
ইইউ বুইউ এক্সিবিশন সার্ভিস (এমি ফেয়ার) কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার এমি জং বলেন, আমাদের কোম্পানি চারদিন ব্যাপী ১৭তম চীন আসিয়ান এক্সপোতে বিদেশি ক্রেতাদের অংশগ্রহণ করার জন্য সার্বিক সহযোগিতা করছে। এই প্রদর্শনীটি প্রতি বছরই অনুষ্ঠিত হয়। আশা কারি আগামী বছর আরেও বেশি-বিদেশি ক্রেতার সমাগম হবে। এমি ফেয়ার প্রতি বছর চল্লিশটির বেশি এক্সিবিশন আয়োজন করে থাকে।
এ সময় তিনি বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের চীনে বিজনেস এক্সিবিশনে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানান। একই সাথে তিনি এক্সিবিশনে অংশগ্রহণের জন্য এমি ফেয়ার সার্বিক সহযোগিতা করবে বলেও আশ্বাস দেন।
আরও পড়ুন : বিশাল বহরে ভাসানচরের পথে রোহিঙ্গারা
মেলায় অংশ নেওয়া বাংলাদেশি হাংজো হাইভ ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানির স্বত্ত্বাধিকারী মো. ফররুখ উদ্দিন পিয়াস বলেন, আমি নাননিংয়ে চার দিনব্যাপী ১৭তম চীন-আসিয়ান এক্সপো এবং চীন-আসিয়ান ব্যবসায় ও বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলন অংশ নিয়েছি। দুর্দান্ত এই এক্সপোতে অংশ নিয়ে চীনা বাজারের সন্ধানসহ বিশ্বজুড়ে সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী সম্প্রদায়, এবং পেশাদার ক্রেতাদের সাথে মিলিত হতে পেরেছি। প্রদর্শনী হলগুলোতে প্রযুক্তি, অটোমোবাইলস সরঞ্জামাদি, চিকিৎসা সরঞ্জাম, খাদ্য এবং কৃষি পণ্য ছিল।
লাওসের প্রধানমন্ত্রী থং লুন, ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি জোকো, মিয়ানমারের রাষ্ট্রপতি উইন মিন্ট, ফিলিপাইনের রাষ্ট্রপতি দুতার্তে, কম্বোডিয়ায় প্রধানমন্ত্রী হুন সেন, থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত, ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রী টুগেইন জুয়ান ফুক, পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি আরিফ আলভী এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্স মাধ্যমে বক্তৃতা প্রদান করেন।
চীন-আসিয়ান এক্সপোতে অংশ নেওয়া কয়েকজন (ছবি : দৈনিক অধিকার)
বক্তব্যে তারা চীন-আসিয়ান কৌশলগত অংশীদারিত্বের পক্ষে কথা বলেন। চীন-আসিয়ান এক্সপো এবং দুই পক্ষের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে শীর্ষ সম্মেলন, মুক্ত বাণিজ্য সহযোগিতা জোরদার করার দৃঢ় আত্মবিশ্বাস প্রদর্শন, যৌথভাবে বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থার সুরক্ষা লড়াইয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার কথা ব্যক্ত করেন। তাছাড়া মহামারি এবং আঞ্চলিক অর্থনীতির পুনরুদ্ধার ত্বরান্বিত করতে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানান বক্তারা।
আরও পড়ুন : করোনায় সৌদিতে প্রাণ গেল ৯৮০ বাংলাদেশির
প্রদর্শনীতে ১ হাজার ৬৬৮ কোম্পানি সরাসরি অংশ নিয়েছিল এবং হুয়াওয়েসহ ৫০০টি বড় এবং সুপরিচিত কোম্পানি এই প্রদর্শনীতে অংশ নেয়। পাকিস্তান, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, ইতালি, রাশিয়া ইত্যাদিসহ ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ এর ২২টি দেশের ১০৮টি কোম্পানি প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছিল। ক্লাউড কভারেজ এর মাধ্যমে মোট ১ হাজার ৯৫৬টি কোম্পানি ‘ইস্টার্ন ক্লাউড এক্সপো’-তে অংশ নেয়। পাশাপাশি এক্সপোতে দেশি-বিদেশি ৮৮টি ক্রেতা গ্রুপ অনলাইনে এবং অফলাইনে অংশ নেয়।
চীন-আসিয়ান এক্সপোতে নতুন ব্যবসায়ের সুযোগ প্রদর্শনী ১ লাখ ৪ হাজার বর্গমিটার আয়তনের এক্সিবিশন হলে প্রদর্শন করা হয়, যার মধ্যে আসিয়ান এবং নন রিজিওনাল প্রদর্শনী অঞ্চল ছিল ১৯ হাজার বর্গমিটার এবং মোট বুথের সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৪০০টি। একই সাথে চালু হয়েছিল ‘ইস্টার্ন ক্লাউড এক্সপো’।
এক্সপোতে বিল্ডিং উপকরণ, স্মার্ট শক্তি এবং বৈদ্যুতিক বিদ্যুত সরঞ্জাম, খাবার প্রসেসিং এবং প্যাকেজিং যন্ত্রপাতি, ইঞ্জিনিয়ারিং যন্ত্রপাতি ও যানবাহন ইত্যাদি পণ্য প্রদর্শীত হয়। চীন-আসিয়ান এক্সপোতে চাইনিজ কোম্পানিসহ আসিয়ান দেশগুলোর প্যাভিলিয়ন, বেল্ট অ্যান্ড রোড এবং আন্তর্জাতিক প্যাভিলিয়ন ছিল। প্যাভিলিয়ন গুলোতে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো তাদের পণ্য সামগ্রী তুলে ধরে। সমাপনী অনুষ্ঠানে এক্সপোর সচিবালয়ের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, চার দিনের এই এক্সপো ২৬৩.৮৭ বিলিয়ন ইউয়ান (প্রায় ৪০.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) মূল্যের মোট ৮টি বিনিয়োগ প্রকল্পে স্বাক্ষরিত হয়েছিল, যা বার্ষিক ৪৩.৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশ, সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান, ইয়েমেন, মিশর, আমেরিকা, গুয়াতেমালা, কোরিয়া, নেপাল, সুদান, ভারত, সোমালিয়া, মরক্কো, ক্যামেরুন, পাকিস্তান, প্যালেস্তাইন, ইথিওপিয়া, তানজানিয়া, মরিশাস, নাইজেরিয়া, কেনিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, আলজেরিয়া, মোজাম্বিক, চাদসহ আরও অনেক দেশ থেকে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা এই এক্সপোতে অংশগ্রহণ করে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড