• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ডা. ফেরদৌস বাংলাদেশি নন!

  নিজস্ব প্রতিবেদক

২৮ জুন ২০২০, ১৬:২৭
ডা. ফেরদৌস খন্দকার
ডা. ফেরদৌস খন্দকার

করোনাভাইরাসের সময়ে স্বঘোষিত দেবদূত বিতর্কিত ডা. ফেরদৌস খন্দকার বাংলাদেশি নন; তিনি হলেন পাকিস্তানি। তাই তাঁকে বাংলাদেশ থেকে ফেরত আসতে হচ্ছে বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে।

সূত্রটি জানিয়েছে বাংলাদেশী আমেরিকান নাগরিকদের পাসপোটে ‌নো ভিসা রিকয়ার্ড ফর ট্রাভেল টু বাংলাদেশ' লেখা থাকার কারণে তাদের বাংলাদেশের জন্য আলাদা করে ভিসা নিতে হয় না। কিন্তু গত ২৩ জুন বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমকে তিনি নিজেই জানিয়েছেন তার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার ফলে তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যেতে হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আগামী ২/৩ সপ্তাহের মধ্যে তিনি আবার ফিরে আসবেন এবং তার সঙ্গে আসা ২০ সদস্যের চিকিৎসক দলটি বাংলাদেশে করোনা রোগীদের সেবায় নিয়োজিত হবেন।

কূটনৈতিক সূত্রটি আরও জানিয়েছে ডা. ফেরদৌস খন্দকারের আমেরিকান পাসপোর্টে প্লেইস অব বার্থ এর স্থানে পাকিস্তান লেখা রয়েছে। তাহলে তিনি কী আমেরিকায় পাকিস্তানি পাসপোর্টে ঢুকেছিলেন, যার ফলে লিগালাইজেশনের সময় যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন ডিপাটমেন্টকে পাকিস্তানের বার্থ সার্টিফিকেট জমা দিতে হয়েছে।

সূত্রটি জানায় আমেরিকায় নাগরিকত্ব নেওয়ার আগে তিনি যদি বাংলাদেশি হতেন তাহলে তার পাসপোর্টেও ‌নো ভিসা রিকয়ার্ড সিল থাকতো। প্রশ্ন উঠেছে যে মা-মাতৃভূমির সেবা করার জন্য তিনি বাংলাদেশে ছুটে গেলেন। তিনি কেনো বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে তার পাসপোর্টে জন্মস্থান পাকিস্তান লেখা?

১৯৭১ সালের পূর্বে যাদের জন্ম হয়েছে তারাতো স্বাধীন বাংলাদেশ থেকেই বার্থ সার্টিফিকেট নিয়েছেন। কেউ তো নিজেদের পাকিস্তানি নাগরিক বলেন না। বিদেশে ১৯৭১ সালের পূর্বে জন্ম হওয়া অসংখ্য বাংলাদেশি থাকলেও কারো পাসপোর্টে পাকিস্তান লেখা রয়েছে এইরকম তথ্য জানা নেই বলে জানালেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক ডেস্কে কর্মরত একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। ২০ জনের যে দলটির কথা বলছেন ফেরদৌস খন্দকার, তারা কারা সেটা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কেননা তিনি যাওয়ার সময় বলেছেন ১২ জন। এখন বলছেন ২০ জন। দেশের মানুষদের করোনা থেকে উদ্ধার করার জন্য চিকিৎসক দল নিয়ে গেছেন অথচ সে দলে কারা ছিলেন কখনোই তিনি জানাননি।

আমেরিকার ডাক্তারদের সংগঠন বিএমএও জানেনা কোন কোন ডাক্তার গিয়েছেন ডাক্তার ফেরদৌস এর সাথে। পাদপ্রদীপের আলোয় শুধু তিনি। নাকি এর অন্তরালে আরো কোন গূঢ় রহস্য রয়েছে সেটি এখন পর্যালোচনা করছে সরকারের গোয়েন্দা বিভাগ।

এদিকে গত ৭ জুন বাংলাদেশে পৌঁছার পর ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে দুই সপ্তাহের কোয়ারেন্টাইনে বনানীতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ফেরদৌস খন্দকারের ফেসবুক থেকে জানা যায় ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন থেকে মুক্তি পাওয়ার পর গত ২২ জুন ছুটে গেলেন শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে প্লাজমা দিতে। স্বাভাবিক ভাবেই মহান ডাক্তারের ছবি সমেত পোস্ট। পোস্টটি দিয়েছেন সাংবাদিক নামী ডাক্তারের পেইড এমপ্লয়ী শামিম আল আমীনের পরিবর্তে বাংলাদেশের হায়দার আলী। তবে নাম পরিবর্তন হলেও দুজনই একই পত্রিকার সাংবাদিক।

ফেরদৌস খন্দকারের ফেসবুকে হায়দার আলীর পোস্টে দেখা যায়, একই দিন একই সাংবাদিকের কাছে সাক্ষাতকার দিলেন। সেই ভিডিওটিও ডাক্তারের ফেসবুকে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে এবং হাজার হাজার মানুষকে বিভ্রান্ত করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এবার দেখা যাক সেই সাংবাদিকের ভাষায় তিনি কি লিখলেন- নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশে আসা ডাক্তার ফেরদৌস খন্দকার ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন শেষে প্রথম সাক্ষাৎকার দিলেন। পরিবার ছেড়ে হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে এসেছিলেন দেশের সেবা করতে। মনে কষ্ট থাকলেও কোনো অভিযোগ নেই বলে জানালেন আমেরিকা প্রবাসী ডা. ফেরদৌস খন্দকার। সর্বশেষ খবরও দিলেন সেই সাংবাদিক। হলো ২৩ জুন সকালে ওই পত্রিকাটিতে গিয়েছিলেন নিউইয়র্কের ডাক্তার ফেরদৌস খন্দকার।

এর আগে একটি সূত্র জানিয়েছে- ডাক্তার ফেরদৌস খন্দকার যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতার কাছে স্বীকার করেছেন, তিনি একজন জামাত নেতার সঙ্গে দীর্ঘদিন ব্যবসা করেছেন। জানা যায়, ডাক্তার ফেরদৌস খন্দকারের ব্যবসায়িক পার্টনারের নাম আতাউল ওসমানী। সে ছিল চট্টগ্রাম মেডিকেলের জামাতের সেক্রেটারি। বর্তমানে নর্থ আমেরিকার মুসলিম উম্মা সংক্ষপে ইকনা’র কালচারাল ডিরেক্টর।

২০১৯ বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন অব আমেরিকার নির্বাচনে ডা. ফেরদৌস বিএনপি-জামাতের প্যানেলের ছিলেন অর্থ যোগানদাতা ছিলেন বলে অভিযোগ করছে তার বিরোধীরা। কারণ, ঐ নির্বাচনে ব্যবসায়ীক বন্ধু আতাউল ওসমানীর পক্ষে নির্বাচনী সভাও করেছেন।

২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সজীব ওয়াজেদ জয়কে ফাঁসাবার জন্য এফবিআইএর সাবেক এজেন্ট রবার্ট লাস্টিক এবং বিএনপির রিজভী আহমেদ সিজারসহ যে গ্রুপটির সাজা হয় তাদের সাথেও রয়েছে ডাক্তার ফেরদৌস খন্দকারের ব্যবসায়ীক পার্টনারের নাম আতাউল ওসমানীর সম্পর্ক।

নিজেকে ছাত্রলীগ নেতা দাবি করলেও ২০১৯ সালের আগে নিউইয়র্কে ডা. ফেরদৌসকে জাতির পিতার জন্মদিন, মৃতুবার্ষিকী, ১৬ ডিসেম্বর বা ২৬ মার্চের কোনো অনুষ্ঠানে কোনদিন দেখা যায়নি।

প্রবাস জীবন, আকাঙ্খা, প্রত্যাশা-প্রাপ্তির সমীকরণ সবই লিখুন দৈনিক অধিকারকে [email protected] আপনার প্রবাস জীবনের প্রতিটি ক্ষুদ্র অনুভূতিও আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড