• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

করোনা ভাইরাসে উৎকণ্ঠায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা

  চীন প্রতিনিধি

২৭ জানুয়ারি ২০২০, ১২:২৮
করোনা ভাইরাস
করোনা ভাইরাস (ছবি- সংগৃহীত)

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চীনে মৃতের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়ে পৌঁছেছে ৮০ তে। এতে চীনে অবস্থানরত বাংলাদেশি প্রবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক আরও বাড়ছে। তবে এখন পর্যন্ত চীনে অবস্থানরত কোনো বাংলাদেশি আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।

এই ভাইরাসে এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ৭৬২ জন। এই রোগের লক্ষণ পাওয়া গেছে ৫ হাজার ৭৯৪ জনের মধ্যে। ভাইরাস থেকে মুক্তি পেয়ে হাসপাতাল ছেড়েছে ৫১ জন। হুবেই প্রদেশ উহান থেকেই প্রথম ছড়িয়ে পড়ে এই করোনা ভাইরাস।

এ দিকে ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল উহানে অবস্থিত বাংলাদেশ কমিউনিটিতে আতঙ্ক বিরাজ করছে। শহরে জন উপস্থিতি কমানোর লক্ষ্যে সরকার সকল ধরনের গণপরিবহন তথা বাস, ট্রেন, মেট্রো ও বিমানবন্দর পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করেছে। উহান ও হুবেইসহ চীনের একাধিক জায়গাকে নজরবন্দি করা হয়েছে, যাতে ভাইরাসের সংক্রমণ সঙ্গে সঙ্গে না ছড়িয়ে পড়ে।

এমন অবস্থায় উহান শহর ভুতুড়ে নগরীতে পরিণত হয়েছে। শহরের রাস্তা এখন জনমানব শূন্য। ক্যাম্পাসের আশপাশে সুপার শপগুলো বন্ধ হওয়াতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। চীনের বড় উৎসবের (চাইনিজ নিউ ইয়ার) কারণে সরবরাহ কম থাকায় সকল ধরনের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি পেতে বেগ হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। উহান ছাড়াও চীনের অন্যান্য শহরে বসবাসরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশে ফেরত যেতে চাচ্ছেন। তারা চীনে বাংলাদেশি দূতাবাসসহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

উহান বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ড. মো. এনামুল হক বলেন, ‘সম্প্রতি চায়নার হুবেই প্রদেশের উহান শহরের করোনা ভাইরাস সম্পর্কে মোটামুটি বিশ্বের সকল সচেতন মানুষই অবগত। আমি এই উহান শহরে দীর্ঘ প্রায় ছয় বছর যাবত আছি। যাই হোক, সন্দেহ নেই বর্তমানে আমরা কঠিন সময় পার করছি। এরপরও বলব বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা যারা উহান শহরে আছি তাদের জন্য উহান শহরই করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সবচেয়ে নিরাপদ শহর। কারণ, এ শহরে যে পরিমাণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বিশ্বের অন্য কোথাও এত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। চায়নার অন্য শহরগুলো থেকে উহানে করোনা ভাইরাস মোকাবিলার জন্য স্পেশালিস্ট ডাক্তার নিয়ে আসা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘চিকিৎসা কর্মীরা তাদের সবচেয়ে বড় উৎসবে (চাইনিজ নিউ ইয়ার) বাড়িতে না গিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের এই পরিস্থিতি প্রতিরোধে নিয়মিতভাবে জানানো হচ্ছে ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। আজ সকালে আমার অফিস থেকে আমাকে জানানো হয়েছে আমি যেন প্রতিদিন আমার শরীরের তাপমাত্রা সম্পর্কে তাদের রিপোর্ট করি। অর্থাৎ যদি কোনো সমস্যা দেখা দেয় তাহলে তারা যেন দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।’

উহানে সেন্ট্রাল চায়না নরমাল ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি প্রোগ্রামে অধ্যয়নরত শামিমা সুলতানা বলেন, ‘এখানের অবস্থা খুব একটা ভালো না। আমি আতঙ্কের মধ্যে আছি। দুই বাচ্চা নিয়ে আমি উহানে আছি। রাস্তাঘাটে কোনো মানুষ নেই। কিছুদিন পর আমার খাবার-দাবারের সংকট দেখা দেবে। সরকারের প্রতি আমার অনুরোধ এখানে আমরা যারা বাংলাদেশিরা আছি তারা আক্রান্ত হওয়ার আগেই ব্যবস্থা নিলে ভালো হয়। সবাইকে নিরাপদে বাংলাদেশে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য আবেদন জানাচ্ছি।’

ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জেরি জিংচু ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে অধ্যয়নরত টুম্পা প্রামানিক বলেন, ‘নিঃসন্দেহে আমরা করোনা ভাইরাসের কারণে খুবই খারাপ সময় পার করছি। আপনারা দয়া করে ফেসবুকে করোনা ভাইরাস নিয়ে প্যানিক না হয়ে মাস্ক ব্যবহার করুন। সাবধানে থাকুন। আমরা এখনো ভালো আছি, বেঁচে আছি। আমরাও দেশে যেতে চাই, তবে ভাইরাস নিয়ে নয়। আমরা নিয়ম মানছি, সতর্ক আছি। আমরা বিশ্বাস করি এ কঠিন সময় শেষে সুস্থ অবস্থায় হাসি নিয়ে মায়ের কোলে ফিরে যাব।’

তিনি আরেও বলেন, ‘বাংলাদেশি কিছু কিছু সংবাদমাধ্যম ও মানুষ দায়িত্ব নিয়ে এমন কিছু ছড়াচ্ছে যেগুলা দেখলে আমাদের বেঁচে থেকে লড়াই করার মনোবল এমনিই কমে যাবে। চাইনিজরা বাংলা বোঝে না বলে অনেকটা শান্তিতে রয়েছে।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ-চায়না ইয়ুথ স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট এ. এ. এম. মুজাহিদ জানায়, চীনে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হবার খবর পাওয়া যায়নি। তবে আমাদের সংঘটনের পক্ষ থেকে আমাদের স্বেচ্ছাসেবক দলটি উহানসহ অন্যান্য সিটিতে বসবাসরত বাংলাদেশিদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে তাদের উদ্বিগ্ন না হয়ে নিজ নিজ বাসস্থানে নিরাপদে থাকতে বলছে। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশাবলী মেনে চলতে বলা হচ্ছে। প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বা দুটি করে ক্যান্টিন খোলা রাখা আছে। তাই অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হতে বিশেষ অনুরোধ জানানো হচ্ছে সবাইকে।

চীনে বাংলাদেশি দূতাবাসের উপপ্রধান মাসুদুর রহমান করোনা ভাইরাসের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদকে বলেন, ‘আমাদের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী উহানে প্রায় ৩৫০ বাংলাদেশি আছেন। উহানে এখনো অচলাবস্থা বিরাজ করছে। সেখানে বা চীনের অন্য কোনো স্থানে বাংলাদেশি কেউ করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের খবর নেই। আমি ইতোমধ্যে ঢাকায় জানিয়েছি এখানকার পরিস্থিতি।’

বাংলাদেশ দূতাবাস কোনো খোঁজ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করছে দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা। ছাত্রদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা বেশিরভাগ অভিযোগ পাচ্ছি উহান শহর থেকে। কিন্তু শহরটি অচলাবস্থায় আছে। দূতাবাসে ২৪ ঘণ্টা হটলাইন সেবা দিচ্ছি। দূতাবাস কর্মকর্তারা পালাক্রমে ডিউটি দিচ্ছেন। আমরা উহানসহ অন্যান্য লোকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছি। এখানে ওইচ্যাটে বাংলাদেশি গ্রুপ আই এম ইন উহান নাউ খোলা হয়েছে। এই গ্রুপে আমরাও আছি এবং সর্বশেষ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা বাংলাদেশ সরকার, চীন সরকার ও চীন সরকার স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি।’

আরও পড়ুন : করোনা ভাইরাস : চীন ভ্রমণ নিয়ে জরুরি বৈঠক কাল

তিনি বলেন, ‘অনেকে অভিযোগ করেছে যে উহানে দোকানপাট বন্ধ। কিন্তু আসল ঘটনা হচ্ছে ওই শহরে কয়েকটি বড় শপিং মল খোলা। যেখানে সবধরনের জিনিস পাওয়া যাচ্ছে। ওই মলগুলোতে যাওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে শাটল বাসেরও ব্যবস্থা আছে।’

এছাড়াও তিনি বাংলাদেশিদের দেশে ফেরার পরামর্শ দিয়েছেন। হুবেই প্রদেশের উহান শহর ছাড়া অন্য শহর থেকে বিমানযোগে দেশে ফেরার সুযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন।

ওডি/এসজেএ

প্রবাস জীবন, আকাঙ্খা, প্রত্যাশা-প্রাপ্তির সমীকরণ সবই লিখুন দৈনিক অধিকারকে [email protected] আপনার প্রবাস জীবনের প্রতিটি ক্ষুদ্র অনুভূতিও আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড