অধিকার ডেস্ক
বিএনপি নেতারা বলেছেন, সম্প্রতি ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চারটি চুক্তির মধ্যে একটাও বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে নয়। বিএনপির নেতারা দাবি করেছেন, ভারতকে তোষণের নীতি হিসেবে এ চুক্তিগুলো করা হয়েছে। এখানেই শেষ নয়, তারা আরও বলেন, ভারতকে খুশি রাখতেই ফেনী নদীর পানি প্রত্যাহারসহ চারটি চুক্তি করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার (১২ অক্টোবর) রাজধানীর নয়াপল্টনে ভারতের সঙ্গে চুক্তি বাতিল ও বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ প্রতিবাদে এবং বন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে পূর্বনির্ধারিত সমাবেশে করেছে বিএনপি।
এ দিন বিকেলে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত জনসমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ মন্তব্য করেছেন।
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারের অনুমতি, ফেনী নদীর পানি প্রত্যাহার, উপকূলীয় এলাকায় ভারতের রাডার স্থাপন এই চারটি চুক্তিই বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী। ভারতে ফেনী নদী থেকে কী পরিমাণ পানি নিবে চুক্তিতে সে বিষয়ে কিছুই উল্লেখ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, তারা কী পরিমাণ পানি ফেনী নদী থেকে প্রত্যাহার করে নেবে, তার কিছুই সেখানে নেই। পত্রিকায় দেখেছি উল্লেখ করে বলেন, বিনা অনুমতিতে ইতোমধ্যে ৩৬টি পাম্প লাগিয়ে ফেনী নদী থেকে ৭২ কিউসেক পানি জোর করে নিয়ে যাচ্ছে ভারত।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশে খন্দকার মোশাররফ বলেন, সম্প্রতি ভারত সফরে গিয়ে আপনি ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানির চুক্তি করে এসেছেন। এরপর সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, সামান্য পানি, পান করার জন্য পানি। এটার জন্য এত হইচই করছি কেন আমরা। ভারতে চুক্তি ছাড়াই ৭২ কিউসেক পানি নিয়ে যাচ্ছে, আর আপনারা ১ দশমিক ৮২ কিউসেক দিয়ে বলছেন সামান্য।
এই পরিমাণ পানির প্রত্যাহারের ফলে ফেনী নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকার কৃষিকাজ ব্যাহত হবে, শুষ্ক মৌসুমে পানি অভাব হবে। অথচ আপনি বলছেন, জাতীয় স্বার্থবিরোধী কিছু করেন নি। বলেন বিএনপির এই নেতা।
আমরা পানি না দিলে নাকি ত্রিপুরা রাজ্যের সাব্রুম শহর কারবালা হয়ে যেত পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন কথার জবাবে তিনি বলেন, ভারতকে খুশি করার জন্য এটার মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারের চুক্তি প্রসঙ্গে মোশাররফ বলেন, এ বন্দর দুটি দিয়ে মাল খালাসে বিলম্বের কারণে আমাদের নিজেদের দেশের ব্যবসায়ীদেরই ক্ষতিপূরণ দিতে হয়। সেখানে এখন থেকে যদি ভারতের পণ্যও এই বন্দর থেকে খালাস হয়, তাহলে ব্যবসায়ীদের মাল খালাসে আরও বিলম্ব হবে, ফলে আরও বেশি ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তাহলে ভারতকে এই দুই বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে দেশের স্বার্থ আপনি কোথায় রক্ষা করেছেন? প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে এ প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন তিনি।
খন্দকার মোশাররফ প্রশ্ন তুলেছেন, বাংলাদেশের উপকূলে যৌথ পর্যবেক্ষণের নামে যে রাডার স্থাপন হবে, এটা কার স্বার্থে। একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশে বিদেশি কোনো রাডার থাকলে সেই দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব থাকে না। এতে করে আমাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করেন তিনি।
ভারতে এলপিজি রপ্তানি চুক্তির বিরোধিতা করে তিনি বলেন, আমরা বিদেশ থেকে এলপিজি আমদানি করি। এখানে ডিউটি ফ্রি এলপিজি আমদানি করে কয়েকটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। তাদের সুবিধা করে দেওয়ার জন্য আবার ভারতে এখান থেকে সেই এলপিজি সরবরাহ করা হবে। ভারতে থেকে যেখানে ১৫০০ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করে যে এলপিজি নিয়ে আসতে হতো, বাংলাদেশের এই সুবিধা দিয়ে মাত্র ২০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম সেই এলপিজি ভারতে পৌঁছেছে। এখানে কী তাহলে বাংলাদেশের স্বার্থ, না ভারতের স্বার্থ জড়িত।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবীব-উন-নবী খান সোহেলের সভাপতিত্বে সমাবেশ এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ।
ওডি/টিএএফ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড