• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বুয়েটে রাজনীতি নিষিদ্ধ, যা বলছে ছাত্র সংগঠনগুলো

  আয়াজ উর রাহমান

১২ অক্টোবর ২০১৯, ১৫:৪৯
বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি
ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের প্লে-কার্ড হাতে বুয়েটের শিক্ষার্থী (ছবি : আল আমিন পাটওয়ারী, দৈনিক অধিকার)

শিবির সন্দেহে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদকে ডেকে নিয়ে নির্যাতন চালায় শাখা ছাত্রলীগ। নির্যাতনের মুখে প্রাণ দিতে হয় আবরারকে। তার হত্যার প্রতিবাদে আন্দোলনে নামে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আবরার নোংরা রাজনীতির কারণে হত্যার শিকার এমন অভিযোগে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বুয়েটের সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি!

আবরার হত্যার বিচারের দাবিতে ১০ দফা দাবি জানিয়ে আন্দোলন করছেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। তাদের ১০ দফা দাবির মধ্যে একটি হল বুয়েটে সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা। তাদের চলমান আন্দোলনের মুখে শুক্রবার ছাত্রদের সঙ্গে উন্মুক্ত আলোচনায় বসেন বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম। এসময় বুয়েটে স্থায়ীভাবে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের ঘোষণা দেন তিনি। একই সঙ্গে বুয়েটে শিক্ষক রাজনীতিও নিষিদ্ধ করেন।

তবে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তকে যৌক্তিক বলে মনে করছেন না রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলো। তারা বলছেন বুয়েটে রাজনীতির নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। কোনো প্রকার রাজনীতি না থাকলে সেখানে সন্ত্রাসবাদ মাথা চাড়া দেবে।

ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নুরুল হক নুর বলেছেন, ছাত্ররাজনীতি নয় বরং এর নামে সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। মূলত দলীয় লেজুড়বৃত্তির কারণে ছাত্র রাজনীতির এই অবস্থা, এছাড়া হল প্রশাসনের দায়িত্ব অবহেলার কারণেও সেচ্ছাচারিতা তৈরি হয়েছে। তাই এসব ছাত্ররাজনীতির নামে সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে।

এ বিষয়ে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের সমন্বয়ক আল কাদেরী জয় বলেছেন, সব ধরনের সাংগঠনিক রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত ভয়ঙ্কর অগণতান্ত্রিক। এর মাধ্যমে সব ধরনের বিরোধী মত ও তার ভিত্তিতে সংগঠিত শক্তিকে দমনের একটি হাতিয়ার।

ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের ফলে বুয়েটে মৌলবাদী ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড মাথা চাড়া দিতে পারে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

আবরার হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বুয়েটে বিক্ষোভ

এমন সিদ্ধান্তে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা হয়েছে বলে মন্তব্য করে আল কাদেরি জয় বলেন, এই সিদ্ধান্ত একটি প্রতারণাও বটে। কার্যত বুয়েট চলে ’৬১ এর অধ্যাদেশে, সে অনুযায়ী ইতোমধ্যে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ। গত এক দশক ধরে বুয়েটে কোনো ছাত্ররাজনীতি ছিল না। শুধু ছিল রাজনীতির নামে ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি-সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আর নির্যাতন। বিরোধী কোনো ছাত্র সংগঠনই ক্যাম্পাসে কাজ করতে গেলে নির্মমভাবে তাদের দমন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নাহিয়ান খান জয় দৈনিক অধিকারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, যারা বর্তমানে আই হেইট পলিটিক্স বলছেন, মূলত তারা হয়ত বাংলাদেশে ছাত্ররাজনীতির ইতিহাস সঠিকভাবে জানেন না। আমার আহ্বান থাকবে ছাত্ররা যেন দেশের ছাত্র রাজনীতির ইতিহাসকে সঠিকভাবে জানার চেষ্টা করে।

বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধকে কোনোভাবেই সমর্থন করে না ছাত্রলীগ। এটা কোনো সমাধান হতে পারে না। ছাত্ররাজনীতি বন্ধের কারণে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি মাথা চাড়া দিতে পারে। কোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাব ফুটে উঠতে পারে। বুয়েটের ভিসির কাছে আমার অনুরোধ থাকবে তিনি যেন বিষয়টা বিবেচনা করে দেখেন।

বুয়েটে ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজনবোধ করে না আন্দোলনকারীরা

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ইঞ্জিনিয়ারদের প্রতিষ্ঠান বলে এখানে সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজনবোধ করছেন না আন্দোলনকারীরা। বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি কেন নিষিদ্ধের প্রয়োজন এই বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তারা।

আবরারের সহপাঠীরা বলেন, ‘ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা আমাদের দাবি না। আমাদের দাবি হচ্ছে, শুধু বুয়েট ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ।’

বুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থীর প্লেকার্ডে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি

তারা বলেন, ‘বুয়েটে ভর্তি হওয়ার ছাত্ররাজনীতির উপকারিতা বলতে সর্বসাকুল্যে দুটি পেয়েছি আমরা। প্রথম উপকারিতাটি হচ্ছে- ছাত্রদের দাবি-দাওয়ার কথাগুলো বলতে পারা। দ্বিতীয়টি হচ্ছে ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমে রাজনৈতিক শিক্ষা প্রদান, যাতে ভবিষ্যতে নেতা গড়ে উঠতে পারে।

কিন্ত এ দুই উপকার অন্যভাবেও পাওয়া যাচ্ছে বলে দাবি করে তারা বলেন, এই দুই উপকার পেতে বুয়েটে আমাদের ছাত্ররাজনীতি করার দরকার নেই। এর ক্ষতির যে ব্যাপকতা তা বলে শেষ করা যাবে না। তাই বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে আমরা।

আবরার ফাহাদের ব্যাচের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের দাবি-দাওয়া উত্থাপনের জন্য অনন্ত বুয়েটে ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজন নেই। কারণ খুব বেশি হলে বুয়েট পাঁচ হাজার শিক্ষার্থীর একটা ক্যাম্পাস। বুয়েটের প্রতিটি ক্লাসে সিআর (ক্লাস রিপ্রেজেন্টেটিভ) আছে। পাশাপাশি প্রতিটা অনুষদের নিজস্ব অ্যাসোসিয়েশন আছে। অ্যাসোসিয়েশন রিপ্রেজেন্টেটিভ (এআর) আছে। হল রিপ্রেজেন্টেটিভ, ব্যাচ রিপ্রেজেন্টেভি – এমন বিভিন্ন পদ আছে। এসব পদ নির্বাচিত। শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া বলার মতো আমাদের এমন শক্তিশালী একটি প্লাটফর্ম আছে। তাই কাজেই আমাদের দাবি-দাওয়ার কথা বলার জন্য ছাত্ররাজনৈতিক সংগঠন অতটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে আমরা মনে করি না।’

এছাড়া ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘ছাত্ররাজনীতির উদ্দেশ্য রাজনৈতিক শিক্ষা প্রদান। পুরো বিষয়টি রাষ্ট্রবিজ্ঞানভিত্তিক। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মতো বিষয়গুলো আমাদের নেই। বুয়েট একটা টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে ইঞ্জিনিয়ারিং শেখানো হয়। বুয়েটে যেসব বিষয় শেখানো সেগুলো এতোটাই গভীর যে ভালো ফলাফল করতে বা গবেষণামূলক কাজ করতে গেলে এসব রাজনীতিতে না জড়ানোই ভালো। যারা বিজ্ঞানী হবেন তারা কেন নোংরা, কাঁদা ছোড়াছুড়ির রাজনীতিতে মননিবেশ করবেন? এতে সৃজনশীলতা হ্রাস পাবে আমাদের।

তবুও নীতি-নির্ধারণী তৈরিতে রাজনৈতিক শিক্ষা প্রয়োজন স্বীকার করে তিনি বলেন, দেখুন, যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশেই ছাত্ররাজনীতি নাই। তারপরও সে দেশের মানুষরা দেশ চালাচ্ছেন। প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন। বিশ্ব রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো চতুরতার সঙ্গে তারা সামলাচ্ছেন।

বুয়েট শিক্ষার্থীরা যুক্তি দেখান, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, এমআইএসটি, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও তো নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে যাচ্ছে। বুয়েট থেকে আলাদাভাবে একজন মানুষ কী এমন একটা পর্যায়ে যাবে, যে জিনিসটা শেখাতে এখন থেকেই এরকম একটা নোংরা রাজনীতির মধ্যে আনতে হচ্ছে। তাই শিক্ষার্থীরা মনে করেন, বুয়েট ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করা দরকার। কেউ ব্যক্তিগতভাবে রাজনৈতিক দল সমর্থন করলে করতে পারে। এটা তার গণতান্ত্রিক অধিকার, এটা নিয়ে তাদের কোনো সমস্যা নাই।

শিক্ষার্থীরা আরও যুক্তি দেখান, ‘এখন পর্যন্ত ছাত্র রাজনীতির শুধু মিস ইউজ (অপব্যবহার) হয়েছে। এটা শুধু এ ক্যাম্পাসে খারাপ প্রভাব ফেলেছে, আর কিছুই হয় নাই। দলীয় স্বার্থে খুনখারাপি হয়েছে। যার বলি হলেন আবরার ফাহাদ। তাই আমরা মনে করি, ছাত্র রাজনীতি বুয়েটে প্রয়োজনীয় নয়।’

ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য

বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ড ঘিরে বুধবার ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা নিয়ে সাংবাদিকের এক প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে ছাত্ররাজনীতি জড়িত। কিছু ঘটনার জন্য ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করে দেওয়ার কথা ঠিক নয়। প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর পেছনে সরকারের লাখ টাকার বেশি খরচ হয়। সরকারের টাকায় কেউ বসে বসে খারাপ কাজ করবে এটা হতে দেওয়া হবে না।

ওডি/এআর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড