নিজস্ব প্রতিবেদক
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের কাছে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন চাঁদাবাজিতে জড়িত থাকার অভিযোগে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়া গোলাম রাব্বানী।
তার দাবি, ‘পরিবারকে বাঁচাতে গিয়ে ছাত্রলীগের ওপর দোষ চাপিয়ে দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফারজানা ইসলাম।’
এছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি কারণে গিয়েছিলেন বলে দাবি জানিয়ে গোলাম রাব্বানী বলেন, জাকসু নির্বাচন সামনে রেখে ছাত্রলীগকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিতর্কিত করে হারানোর কোনো প্ল্যান কি না- এটা জানতে ও উন্নয়ন প্রকল্পের বিষয়টির সঙ্গে ছাত্রলীগের নামটা কেন এল- এটা জানতে আমরা জাহাঙ্গীরনগর গিয়েছিলাম।
তিনি বলেন, ‘আমরা যখন উপাচার্য ম্যামকে বললাম যে এর সঙ্গে আপনার স্বামী ও ছেলের সংশ্লিষ্টতার কথা বলছেন, তখন সেই বিষয়টিকে ব্যক্তিগতভাবে নিয়ে তিনি আপার (প্রধানমন্ত্রী) কাছে আমাদের নামে কিছু কথা বলেছেন। তবে তিনি কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি। অথচ যারা টাকা নিয়েছেন, তারাই বলেছেন যে উপাচার্যের স্বামী ও ছেলে এর সঙ্গে জড়িত।’
এছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে ‘ঈদের খরচ’ হিসেবে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী ও গোলাম রাব্বানী ‘ন্যায্য পাওনা’ চেয়েছিলেন বলে যে অভিযোগ উঠেছে সেটাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন রাব্বানী।
তার কথাকে ভুলভাবে উদ্ধৃত করা হয়েছে বলে দাবি করে রাব্বানী বলেন, ‘ভিসি ছেলেপেলেদের যখন টাকা দিয়েছিলেন, তখন বলা হয়েছিল ঈদের বোনাস হিসেবে টাকাটা দেয়া হয়েছে। এটি আমাদের কানেও আসে। তখন আমি আর শোভন ম্যামের কাছে গিয়ে (ছাত্রলীগের পদচ্যুত সভাপতি) হাসতে হাসতে বললাম যে বিশ্ববিদ্যালয় শাখাকে ঈদের খরচ দিলেন, আমাদের খরচ কই? বঙ্গবন্ধু যেমন বলেছিলেন, সাড়ে সাত কোটি কম্বল এল, আমার কম্বলটা গেল কই- সে রকমভাবেই কথাটা বলেছিলাম। এটা ছিল মজা করে বলা। আমার কথাকে ভুলভাবে উদ্ধৃত করা হয়েছে।’
ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে রাব্বানী বলেন, নেত্রীর কাছে কিছু বিষয় গিয়েছে, তিনি কষ্ট পেয়েছেন। সেই জায়গা থেকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, নেত্রীর মনে কষ্ট দিয়ে আমরা ছাত্রলীগ করব না। এই জায়গা থেকে আমরা ছাত্রলীগের পদ থেকে পদত্যাগ করেছি। আমরা অপরাধী নই, আমাদের বলির পাঁঠা বানানো হয়েছে, আমরা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি।
অন্যদিকে দুর্নীতির অভিযোগ আরও জোরালো করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। সোমবার বিকালে জাবি শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন স্বীকার করেছেন ভিসি ফারজানা ইসলাম তাদের টাকা দেওয়ার বিষয়ে। তিনি জানিয়েছেন, ‘ফাঁস হওয়া ফোনালাপে আলোচিত ১ কোটি টাকা শাখা ছাত্রলীগকে ঈদ সালামি হিসেবে দিয়েছেন ভিসি ফারজানা ইসলাম। এটি অস্বীকার করার কিছুই নেই।’
সাদ্দাম হোসেন বলেন, ভিসির বাসায় মিটিংয়ে আমাদের সঙ্গে কথাবার্তা হয়, আমাদের ঈদ সালামি বাবদ টাকা দেবে। সেখানে আমাদের ১ কোটি টাকা ঈদ সালামি দেওয়ার কথা হয়। পরদিন শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি জুয়েল ও ছাত্রলীগ সম্পাদক চঞ্চলের কাছে ১ কোটি টাকা পৌঁছে দেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, আমরা (সাদ্দাম গ্রুপ) চঞ্চলের কাছ থেকে ভাগের টাকা বুঝে নেই। তবে ভিসি কোথা থেকে এই টাকা আমাদের দিয়েছেন তা আমরা জানি না।
১ কোটি টাকা ঈদ সালামি পেয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছি বলেও জানান সাদ্দাম হোসেন।
জাবি ছাত্রলীগের সহসভাপতি নিয়ামুল হাসান তাজ ওই ১ কোটি টাকা থেকে ২৫ লাখ টাকার ভাগ পেয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ঈদের আগে এক কোটি টাকার চাঁদা থেকে আমি ও সাদ্দাম (জাবি ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক) ২৫ লাখ টাকার ভাগ পেয়েছি।
তিনি বলেন, এ টাকা আমরা কীভাবে পেয়েছি, সেটা জানি; কিন্তু বাকি টাকার কারা কত পেয়েছে, তা জানি না। এখন যেহেতু প্রশাসনের বিরুদ্ধে বড় অঙ্কের দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, তাই এটা তদন্ত হওয়া উচিত। প্রশাসন কত টাকার দুর্নীতি করেছে, তা প্রমাণ হওয়া উচিত।
এর আগে সোমবার দুপুরে গণমাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এই দুর্নীতির বিষয়ে স্বীকারোক্তি দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি নিয়ামুল হাসান তাজ।
এ সময় তিনি বলেন, ‘আমাদের বলা হয়েছে, তোমরা (তাজ ও সাদ্দাম) ২৫ লাখ নিবা, জাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক চঞ্চল ২৫ লাখ নিবে আর সভাপতি মো জুয়েল রানা ৫০ লাখ নিবে। আমরা আমাদেরটা পেয়েছি। তবে অপ্রকাশ্যে এর বেশি কে কত পেয়েছে, তা আমরা জানি না। কেউ এর বেশিও পেতে পারে।’
যদিও ফাঁস হওয়া কথোপকথনে যে দুর্নীতির কথা বলা হয়েছে, সেটিকে মিথ্যা-ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সোমবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ অফিস থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি করা হয়।
তবে তাদের এমন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার গণমাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে জাবি ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন ২৫ লাখ টাকা পাওয়ার কথা আবারও স্বীকার করেন।
অন্য দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন, সুষ্ঠু তদন্ত হলে উপাচার্য ও তার পরিবার দুর্নীতির অভিযোগে ফেঁসে যাবেন।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে এক হাজার ৪৪৫ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হলে গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়- উপাচার্যের মধ্যস্থতায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে দুই কোটি টাকা ভাগাভাগি করে দেওয়া হয়। এরপর উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে আন্দোলনে নামেন ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
গত শনিবার প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ থেকে কয়েক শতাংশ চাঁদা দাবির অভিযোগ নিয়ে সমালোচনার মধ্যে ছাত্রলীগ সভাপতি পদ থেকে রেজাওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে গোলাম রাব্বানীকে পদচ্যুত করা হয়। পরে সিনিয়র সহ সভাপতি আল নাহিয়ান জয়কে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করা হয়। শনিবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
ওডি/এআর
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড