রংপুরে প্রস্তুত করা হয়েছে এরশাদের কবর ও জানাজার মাঠ

সাবেক রাষ্ট্রপতি, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মরদেহ আজ মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) রংপুরে নেওয়া হবে। বেলা ১১টায় এরশাদের মরদেহ বহনকারী হেলিকপ্টার তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দর থেকে রংপুর সেনানিবাসের হ্যালিপ্যাডে অবতরণ করার কথা রয়েছে। সেখান থেকে তার মরদেহ নেওয়া হবে রংপুর কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে। সেখানে সর্বসাধারণ তার কফিনে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন এবং তাকে শেষবারের মতো দেখবেন। বাদ জোহর তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।

এরশাদের নামাজে জানাজায় ইমামতি করবেন রংপুর করিমিয়া নুরুল উলুম মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা মুহম্মদ ইদ্রিস আলী। তাকে সমাহিত করতে পল্লীনিবাসের লিচু বাগানে প্রস্তুত করা হয়েছে কবর। তবে দলের পূর্বসিদ্ধান্ত অনুযায়ী জানাজা শেষে এরশাদের মরদেহ রাজধানীতে নিয়ে গিয়ে বনানীর সামরিক কবরস্থানে দাফনের কথা রয়েছে।

এ বিষয়ে রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির দপ্তর সম্পাদক জাহিদ হোসেন লুসিড জানান, নামাজে জানাজায় ও দাফন কার্যে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের ১৬ জেলার জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের পাশাপাশি লক্ষাধিক মানুষ অংশ নেবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।

দাফনের বিষয়ে রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন বলেন, জানাজা শেষে স্যারের (এরশাদ) মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে পল্লীনিবাসে। সেখানে লিচুতলায় তাকে দাফন করা হবে। এজন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াসির বলেন, এরশাদ স্যারের পল্লীনিবাসের ভেতরে গড়া পিতা মকবুল হোসেন মেমোরিয়াল ডায়াবেটিক হাসপাতালের লিচু বাগানের উত্তরপূর্ব পাশে সমাধির স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে।

সোমবার (১৫ জুলাই) বিকাল ৩টায় জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফার নেতৃত্বে জেলা ও মহানগর নেতাদের উপস্থিতিতে কবর খনন শুরু করা হয় । নগরীর দর্শনা মোড় এলাকার জাতীয় পার্টি কর্মী মোহাম্মদ নুরুজ্জামান, আশরাফ আলী ও রোকনুদ্দিন এবং বালাপাড়া এলাকার জাকির হোসেন ও সবুজ আহমেদ কবরটি পুরোপুরি প্রস্তুত করেন। এখন কবরটি প্রস্তুত রয়েছে।

পল্লীনিবাসের লিচু বাগানটি এরশাদ স্যারের আগ্রহে তৈরি হয়েছে জানিয়ে রংপুর জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাফিউল ইসলাম শাফী বলেন, তিনি নিজেই গাছ লাগিয়েছেন। রংপুর আসলেই ভোরে তিনি গাছে পানি দিতেন। পরিচর্যা করতেন। সেখানেই তিনি সমাহিত হবেন। কবর খননের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।

রংপুরে দাফনের প্রসঙ্গে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, এইচ এম এরশাদ স্যার পল্লীনিবাস থেকেই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছিলেন। একটি নতুন বাড়িও নির্মাণ করছিলেন। কিন্তু সেই বাড়িতে উঠতে পারেননি। তাকে পল্লীনিবাসে সমাহিত করে আমরা একটি স্মৃতি কমপ্লেক্স তৈরি করব। সেখানে এরশাদের জীবন দর্শন নিয়ে একটি মিউজিয়াম করা হবে। মসজিদ-মাদ্রাসা কমপ্লেক্স থাকবে। তার সমাধিকে ঘিরে তার জীবন ও কর্মের চেতনার বাতি আমরা দেশে-বিদেশে জ্বালিয়ে দিতে চাই। তার অবর্তমানে তার ভাই জিএম কাদেরের নির্দেশনার আলোকে আমরা জাতীয় পার্টিকে এগিয়ে নিতে চাই। এজন্য সকল প্রস্তুতি আমরা নিয়েছি।

এ দিকে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ইন্তেকালে শোকে স্তব্ধ রংপুর। মসজিদ, বাসায় ও অফিসে অফিসে চলছে কোরআনখতম। নগরীর মোড়ে মোড়ে মাইকে প্রচার হচ্ছে কোরআন তেলাওয়াত। পার্টির নেতাকর্মীরা কালো ব্যাচ ধারণ করেছেন। এছাড়াও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদের স্মরণে রংপুরের সকল ব্যবসায়ী সংগঠন আজ দুপুর ২টা পর্যন্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন।

এ তথ্য নিশ্চিত করে মহানগর দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন জানান, সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা এরশাদ স্যার আমাদের জন্য অনেক করেছেন। আজ তিনি নেই। তার সম্মানে আমরা মঙ্গলবার আধাবেলা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ওষুধ-খাবার ছাড়া সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।

প্রসঙ্গত, রবিবার (১৪ জুলাই) সকালে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন এরশাদ। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। তিনি রক্তে সংক্রমণসহ লিভার জটিলতায় ভুগছিলেন। রবিবার বাদ জোহর ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট কেন্দ্রীয় মসজিদে তার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সোমবার সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটের দিকে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় দ্বিতীয় এবং বাদ আসর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম মসজিদে তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

ওডি/এএস