• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩১ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ফখরুল-মওদুদের তুমুল ঝগড়া দেখলেন তারেক  

  অধিকার ডেস্ক

১৭ জুন ২০১৯, ১৪:২৯
ফখরুল-মওদুদ ঝগড়া
মির্জা ফখরুল বামে, তারেক রহমান মাঝে, মওদুদ আহমেদ ডানে (ছবি : সম্পাদিত)

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ভূমিকা নিয়ে অনেকটাই ক্ষুব্ধ দলের শীর্ষ নেতারা। তার কাজের সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল না থাকায় এবং সিদ্ধান্তের পরিবর্তন দেখা দেয়ায় দীর্ঘদিনের ক্ষোভের জন্ম নিয়েছে বিএনপি নেতাদের মধ্যে। আর এসব ক্ষোভ শনিবার স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ঝাড়লেন নেতারা। এ সময় স্কাইপে ছিলেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

প্রায় দেড় মাস পর শনিবার রাতে বৈঠকে বসেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতারা। সেখানে স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ও দলের প্রবীণ নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ সাম্প্রতিক ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত করেন। বিএনপি এমপিদের শপথগ্রহণ, সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়ন এবং বগুড়া উপ-নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত স্থায়ী কমিটিতে না হওয়ায় ‘চরম’ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দলটির এই জ্যেষ্ঠ নেতা।

বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা যায়, এ সময় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ভূমিকার সমালোচনা করলে দুই নেতার মধ্যে ব্যাপক উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। এ সময় স্কাইপের মাধ্যমে সেখানে যুক্ত ছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি দুই নেতার তুমুল ঝগড়া চুপ করে শুনেন। তবে কোনো কথা বলেন না। পরে স্থায়ী কমিটির অন্য সদস্যদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক এবং দ্বন্দ্বের নিরসন হয়।

ফখরুলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মওদুদ আহমেদ বলেন, কীভাবে এসব সিদ্ধান্ত হয়। স্থায়ী কমিটির কেউ জানেও না। আপনি (ফখরুল) বললেন, শপথ নেওয়া ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্ত। কিন্তু নিজে শপথ নিলেন না। আবার বললেন, আগের নেওয়া সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। আপনি তো স্থায়ী কমিটিকে অপমান করেছেন। এক পর্যায়ে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে ফখরুলের উদ্দেশে প্রশ্ন ছুঁড়ে বলেন, ‘আপনি কার ব্যাগ ক্যারি (বহন) করছেন?’

এ প্রশ্নে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন বিএনপি মহাসচিবও। কেন এমন মন্তব্য করা হলো তা জানতে চান। ফখরুল বলেন, ‘আপনি তো জাতীয় পার্টি করতেন। আপনি তো এরশাদের ব্যাগ ক্যারি করেছেন।’ এর পরিপ্রেক্ষিতে মওদুদ বলেন, ‘আগে কী করেছি, সেটা মূল বিষয় নয়। এখন কী করছি, সেটা দেখার বিষয়।’

বৈঠক সূত্রে আরও জানা যায়, এ বিষয়ে দুই নেতার মধ্যে তুমুল বাকবিতণ্ডা হয়। ওই সময় তারেক রহমান স্কাইপে সব দেখেন। তবে তিনি কিছু বলেননি। স্থায়ী কমিটির অন্য সদস্যরাও তেমন কথা বলেননি। তবে তারা মওদুদের বক্তব্যের সঙ্গে একমত ছিলেন। পরে বিএনপি মহাসচিব ক্ষোভে বলেই ফেললেন, এভাবে দায়িত্ব পালন সম্ভব নয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৈঠকে উপস্থিত এক নেতা বলেন, ‘দুই নেতার মধ্যে তুমুল ঝগড়া চলাকালীন স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দুজনকে থামান। ওই নেতা সবার উদ্দেশ্যে বলেন- আমরা শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাব না বললেও গিয়েছি। খালেদা জিয়া ছাড়া নির্বাচনে যাব না বলেও গিয়েছি। ছিয়াশি সালে শেখ হাসিনা নির্বাচনে যাবে বলে ঘোষণা দেওয়ার পরও তা পরিবর্তন করেছেন। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হতেই পারে। আমরা নির্বাচনে যাব না বলেও গিয়েছি। শপথও নিয়েছি।

ওই নেতা ফখরুলের উদ্দেশ্যে বলেন- সিদ্ধান্ত আমরা পরিবর্তন করতেই পারি। কিন্তু আপনি কেন বললেন- এটি শুধু ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্ত। উনি যখন সিদ্ধান্ত দেন তখন তা দলীয় সিদ্ধান্তই বলতে হবে। আবার আপনি শপথ নিলেন না। তাহলে দাঁড়াল কী? ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান একই বিষয়ে দুটি সিদ্ধান্ত দিল? আবার আপনি বললেন- শপথ না নেওয়ার আগের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল, এটিও কেন বলতে গেলেন?’

স্থায়ী কমিটির এক নেতা বলেন, ‘দুই নেতাকে থামাতে এক নেতা যে ভূমিকা রাখলেন তাতে পরিস্থিতি শান্ত হয় এবং দ্বন্দ্বেরও নিরসন হয়। এর পরই দলের ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি হয়।

তিনি আরও বলেন, আসলে যা হয়েছে তা ভালোই হয়েছে। সবার মধ্যে ক্ষোভ ছিল। একজনের বক্তব্যের মাধ্যমে সবার বক্তব্য উঠে এসেছে। ক্ষোভ প্রশমিতও হয়েছে।

এর আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামকে সরাসরি আওয়ামী লীগের দালাল বলে মন্তব্য করেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

ওই সময় নয়াপল্টনে বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে সাক্ষাতে রিজভী বলেন, ‘ফখরুল ভাই, দেখলেন তো আপনার শান্তি মডেল ফেল মারল। ওরা পতাকা নিয়ে দাঁড়াতে পর্যন্ত দিলো না।’

মির্জা ফখরুল একটু বিষণ্ণ হয়ে বললেন, আশ্চর্য। একটা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতেও এভাবে আক্রমণ করল ওরা। এসময় তিনি নেতা-কর্মীদের খোঁজ নিলেন। সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বললেন। তারপর সোমবার প্রতিবাদ মিছিলের কর্মসূচি ঠিক করলেন।

রিজভী এ সময় বললেন, ‘ফখরুল ভাই একটু কড়া ডোজ দেন। অ্যান্টিবায়োটিক দেন। এগুলোতে তো কাজ হবে না। কি মিছিল করবে। রাস্তায় তো বেরুতেই দেবে না। এ বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হলেন মির্জা ফখরুল। বললেন, ‘আপনি কী কর্মসূচি চান, বিএনপি অস্ত্র নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়বে? পুলিশের সঙ্গে যুদ্ধ করবে? এমন কর্মসূচি চান? পরিপ্রেক্ষিতে রিজভী বলেন, ‘করেন আপনার দালালি কর্মসূচি। দালালির ফল হয় পুলিশের লাঠি। বিএনপির উচিত খালেদাকে আমৃত্যু কারাগারে রাখা।

ওডি/এআর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড