নুরুজ্জামান খান
দেশে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। নির্বাচনকে ঘিরে রাজনীতির মাঠ থেকে শুরু করে চায়ের দোকানে পর্যন্ত একই আলোচনা। প্রচারণা শুরু করেছে নির্বাচনে অংশ নেয়া রাজনৈতিক নেতারা এবং তার কর্মী-সমর্থকরা। প্রিয় দলের নেতাকে নির্বাচনে বিজয়ী করতে তরুণ রাজনীতিবিদরা বেশি সোচ্চার।
শিক্ষিত তরুণদের রাজনীতিতে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন প্রতিটা দলই। তাইতো নির্বাচনের আগে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতির সাথে যুক্ত তরুণ রাজনীতিকদের তৎপরতা বেশি নজরে পড়ে। পছন্দের প্রার্থীর হয়ে কাজ করেন তারাও। প্রার্থী বা দলের পক্ষে নানা প্রতিশ্রুতিও দেন।
দেশের বর্তমান রাজনীতি, জাতীয় নির্বাচন এবং ক্যাম্পাস রাজনীতি নিয়ে ‘দৈনিক অধিকারের’ সাথে কথা বলেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া, ছাত্রদলের সভাপতি ইমতিয়াজ আহমেদ এবং ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি তাসবিরুল ইসলাম কিঞ্জল। দলের হয়ে তারা দিয়েছেন নানা প্রতিশ্রুতি, শুনিয়েছেন ভবিষ্যতে কেমন রাবি চান তারা।
তাদের দেয়া সাক্ষাৎকারের কিছু অংশ তুলে ধরা হলো:
প্রশ্ন: দেশের রাজনীতিতে বর্তমানে একটি আলোচিত বিষয় হেলমেট বাহিনী। বিভিন্ন আন্দোলনের সময় কিছু যুবককে আমরা হেলমেট মাথায় দিয়ে হামলা করতে দেখি, যেমনটা পল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের হয়েছে। এগুলোর সাথে সাথে কারা যুক্ত থাকতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
ছাত্রলীগ সভাপতি গোলাম কিবরিয়া: ‘আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং তার হাতে তৈরি ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগ একটি ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন। আমাদের আদর্শে জ্বালাও পোড়ার কোনো নীতি নেই। তাই এর সাথে ছাত্রলীগের সম্পৃক্ততা থাকার কোনো উপায় নেই। এর সঙ্গে বিএনপি বা তাদের অঙ্গসংগঠনের লোকজন জড়িত। সেটা বিভিন্ন সময় প্রমাণিত হয়েছে। তারা জ্বালাও পোড়াও রাজনীতিতে বিশ্বাসী। পল্টনের হামলা নির্বাচনকে প্রতিহত করার জন্য তাদের চক্রান্ত। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তারা এ কাজগুলো করেছিলো। এখন আবার নির্বাচনকে সামনে রেখে এমনটা শুরু করেছে।’
ছাত্রদল সভাপতি ইমতিয়াজ আহমেদ: ‘আমি সরাসরি কাউকে দোষারোপ করবো না। আমাদের প্রতিক্রিয়া যাই হোক, যারা জড়িত তাদেরকে সনাক্ত করে পরিচয় প্রকাশ করা হোক। পল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে যে ঘঁনা ঘটেছে সে সময় সেখানে অনুপ্রবেশকারী ছিলো তা আমরা শতভাগ নিশ্চিত। পুলিশকে এক্ষেত্রে বলা হয়েছে, আহ্বান করা হয়েছে আপনারা তাদের পরিচয় প্রকাশ করেন, তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসেন। আমাদের দাবি এর সাথে যারা যুক্ত সেসব অপরাধীকে বিচারের আওতায় এবং শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হোক।’
ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি তাসবিরুল ইসলাম কিঞ্জল: ‘এটা সম্পূর্ণ রাজনীতি বিষয় আমি কোনো নির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক দলকে দোষ দেবো না। আমরা দেশের জনগণ দেশটা ভালো থাকুক এটাই আমাদের চাওয়া। যারা এর সাথে সম্পৃক্ত তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হোক।’
প্রশ্ন: বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি জাতীয় রাজনীতির খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ, এ বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখছেন?
ছাত্রলীগ সভাপতি গোলাম কিবরিয়া: ‘এটা অবশ্যই পজিটিভভাবে দেখি। দেশের রাজনীতিতে বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালণ করে। একটা দেশের নেতৃত্ব দেয়ার জন্য শিক্ষিত তরুণ রাজনীতিকদের ভুমিকা সবসময় থাকে। এজন্য জাতীয় রাজনীতিতে বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেন প্রতিটি রাজনৈতিক দল।
ছাত্রদল সভাপতি ইমতিয়াজ আহমেদ: ‘ক্যাম্পাস রাজনীতি জাতীয় রাজনীতির অংশ। জাতীয় ইলেকশনে (নির্বাচন) ক্যাম্পাসের ভুমিকা সবসময়ই থাকে। দেশের রাজনৈতিক উন্নয়নে তরুণ এবং শিক্ষিতরা সবসময় এগিয়ে থাকে। রাষ্ট্রের সমস্যাগুরোকে দূর করার জন্য সবসময় ছাত্র-রাজনীতিরকর্মীরা আগে রাস্তায় নেমেছে। আপনি আমাদের দেশের ইতিহাস দেখেন, ভাষা আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান, মহান মুক্তিযুদ্ধ সবসময় তরুণরা সামনে ছিলো।’
ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি তাসবিরুল ইসলাম কিঞ্জল: ‘বিশ্ববিদ্যালয় আসলে জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব ফেললেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যটা কিন্তু সম্পুর্ণ ভিন্ন। এখানে রাজনৈতিক আদর্শতা বা রাজনৈতিক যে আইডিয়লজি থাকে সেটা কাজ করতে পারে তবে সেটা এমন নাহয় যে, এখানে রক্তপাতের মতো ঘটনা ঘটবে। আমরা এমন একটা বিশ্ববিদ্যালয় চাই যেখানে রাজনৈতিক সহবস্থান থাকবে, রাজনীতি আসলে দলের স্বার্থে না হয়ে ছাত্র স্বার্থে মানে বৃহত্তর স্বার্থে এটা হতে পারে। কিন্তু আমরা এটা দেখছি দলের স্বার্থে লেজুরভিত্তিক রাজনীতি চলছে এটা আমরা চাই না। রাজনীতি এমন হলে সেটা জাতীয় রাজনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করি।’
প্রশ্ন: সামনেই নির্বাচন, নির্বাচন এবং ক্যাম্পাস নিয়ে আপনাদের পরিকল্পনা কী?
ছাত্রলীগ সভাপতি গোলাম কিবরিয়া: ‘যিনি নৌকা প্রতীক বা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধিত্ব করবে আমরা সব নেতাকর্মীরা তার পক্ষে কাজ করবো। নির্বাচনের সময় আমরা চাই ক্যাম্পাস স্বাভাবিক এবং সুশৃঙ্খল থাকুক। ক্যাম্পাসের শান্তি-শৃঙ্খলা বজাই থাকুক এবং জাতীয় নির্বাচন হোক সকলের কাছে উৎসব এটাই চাওয়া। তবে, যদি কোনো পক্ষ ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে তবে আমরা তা প্রতিহত করবো।’
ছাত্রদল সভাপতি ইমতিয়াজ আহমেদ: ‘নির্বাচন তো আর একমাস আছে। ক্যাম্পাস নিয়ে পরিকল্পনা বলতে ক্যাম্পাসে আমাদের হাজার-এগারোশ মতো ভোট আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যারা আছেন আমরা তাদের সাথে কাজ করছি। প্রত্যেকটা শিক্ষক কোয়াটারে হ্যান্ডবিল, পোস্টার, লিফলেট, ব্যানার যা যা বিলি করার দরকার তা করছি। যখন প্রচারের কার্যক্রম শুরু হবে আমরা তখন করবো। বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের এলাকাগুলোতে ছাত্র-ছাত্রী, কর্মকর্তা-কর্মচারী বেশি থাকে। এ এলাকাগুলোতে আমরা এখনো মুভমেন্ট করি। ক্যাম্পাসে সংগঠন নিয়ে মুভমেন্ট করতে পারি না, কিন্তু আমাদের মুভমেন্ট আছে আমরা পোগ্রাম করি। এখন নির্বাচন যেহেতু তাই ক্যাম্পাসেও আমাদের মুভমেন্ট করতে হবে।
ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি তাসবিরুল ইসলাম কিঞ্জল: ‘নির্বাচন নিয়ে না, মানে পুর্ব যে পরিস্থিতি তার জন্য না বরাবরই আমরা এমন একটা বিশ্ববিদ্যালয় চাই যে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো সিট বাণিজ্য থাকবে না। সবাই সমান অধিকার পাবে এখানে। এখানে চাই রাজনৈতিক হানাহানি বন্ধ হয়ে শান্তিপূর্ণ শিক্ষাঙ্গন হিসাবে থাকুক।’
প্রশ্ন: জাতীয় নির্বাচনের পর ডাকসু নির্বাচন করার কথা বলেছেন ঢাবি উপাচার্য সেক্ষেত্রে রাকসু নির্বাচন নিয়ে আপনারা কিছু ভাবছেন কিনা?
ছাত্রলীগ সভাপতি গোলাম কিবরিয়া: ‘আপনারা অবগত আছেন আমি এবং রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রুনু (ফয়সাল আহমেদ রুনু) অনেকদিন আগে উপাচার্য অধ্যাপক সোবহান স্যারের কাছে ২২ দফা দাবি জানিয়ে স্মারকরিপি দিয়েছিলাম। আমাদের স্মারকলিপির প্রথম দফাই ছিলো রাকসু নির্বাচন। আমরা চাই রাকসু নির্বাচন হোক। তবে সেটা অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী জামাত-শিবিরকে বাদ দিয়ে। রাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে আগামীর জন্য যোগ্য নেতা পাওয়া সম্ভব’
ছাত্রদল সভাপতি ইমতিয়াজ আহমেদ: ‘ছাত্রদের অধিকার আদায়ে রাকসুর বিকল্প নেই। আগামী নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে আমরা রাকসু নির্বাচনের দাবিতে সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে দাবি জানাবো।’
ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি তাসবিরুল ইসলাম কিঞ্জল: ‘রাকসু নির্বাচন আসলে দেওয়া না দেওয়ার প্রশ্ন না, এটা হলো রাকসু নির্বাচন আটকিয়ে রাখা না রাখার প্রশ্ন। রাকসু নির্বাচন কে দিবে? কোনো সরকার কি দেবে? বাংলাদেশের যিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কি এখানে রাকসু নির্বাচন দেয়ার এখতিহার রাখেন? আওয়ামীলীগের সভাপতি কিংবা বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া কিংবা আমার গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জুনাইদ সাকী তিনি কি এখানে নির্বাচন দেয়ার এখতিহার রাখেন? রাখেন না। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবিধানিক প্রধান হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মহামান্য রাষ্ট্রপতি। তার অবর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর এবং তাদের একটি বডি আছে যারা বিষয়টি দেখেন। আচার্য মহোদয় সমাবর্তনে এসে বলেন যান রাকসু নির্বাচন দিতে তাহলে আটকাচ্ছে কে? সবাই বলেন রাকসু চাই তাহলে আমি পাল্টা প্রশ্নটা রাখতে চাই তাহলে রাকসু নির্বাচন আটকাচ্ছে কে?
প্রশ্ন: একাদশ সংসদ নির্বাচনে আপনাদের দল নেতৃত্বে আসলে ক্যাম্পাসের জন্য আপনাদের কী পরিকল্পনা থাকবে?
ছাত্রলীগ সভাপতি গোলাম কিবরিয়া: ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বিগত ১০ বছর ধরে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে নানা কাজ করে যাচ্ছে। আগামীতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে। আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য থাকবে শিক্ষার্থীদের অধিকার নিশ্চিত করা। আবাসন সংকট এখানের একটা বড় সমস্যা। ছাত্রলীগ এর আগে বিভিন্ন সময় এ বিষয়ে প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন। আবাসন সংকট দূরীকরণের লক্ষ্যে দুইটি নতুন হল নির্মানের কাজ শুরু হচ্ছে। আমরা ভবিষ্যতে চাই কেউ যেনো আবাসন সমস্যায় না থাকে। ক্যাম্পাসে মাদক, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি বন্ধে সাধারণ ছাত্রদের সাথে নিয়ে কাজ করবে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। আমরা চাই একটি সুন্দর ও শান্তিপুর্ণ ক্যাম্পাস উপহার দিতে।’
ছাত্রদল সভাপতি ইমতিয়াজ আহমেদ: ‘বিশ্ববিদ্যালয় একটা গবেষণার জায়গা এখানে লেখাপড়া চলবে, গান চলবে, খেলাধুলা চলবে। এক কথায় এখানে সব ধরনের এক্টিভিটি চলবে এবং সেগুলো সুন্দর ও বাধাহীনভাবে চলবে। এটা আমরা নিশ্চিত করতে চাই আর বর্তমান যে অবস্থা যে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির কিংবা অন্য কোনো দল, এন্টি আওয়ামীলীগ ছাত্রসংগঠন যারা আছে তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো কার্যক্রম করতে দেয় না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা ছাত্রলীগ। এ ধরনের কোনো চিন্তা-ভাবনা আমাদের নাই।
কারণ আমরা দেখছি যে, বিএনপি ছাত্রদল যখন ক্ষমতায় ছিলো তখন ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে কোনো কর্মসূচি করতে পারবে না এমন টেনডেন্সি ছিলো না। আমাদের আগের নেতাদের মধ্যে এটা ছিলো না। তাই আমাদেরও এ ধরনের কোনো মন-মানষিকতা থাকবে না। বিশ্ববিদ্যালয় সবার রাজনীতি চর্চার জায়গা। এখানে ছাত্রদল-ছাত্রলীগ, ছাত্রশিবির, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রমৈত্রীসহ যত ছাত্রসংগঠন আছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন আছে তারা সবাই সবার মতো নিজ নিজ কার্যক্রম চালাতে পারবে। সেখানে কারোর জন্য বাধা বা নিষেধাজ্ঞা থাকবে না। এখন ছাত্রলীগ প্রতিদিন মিছিল-মিটিং করে কিন্তু ছাত্রদল কিছুই করতে পারে না। আমাদেরকে পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে কার্যক্রম করতে বাধার সৃষ্টি করা হয়। আমরা এ প্রক্রিয়াটা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবো এবং পুলিশ প্রশাসনকে অনুরোধ করবো বিরোধী পক্ষকে নিরাপত্তার সাথে কর্মসূচি পালন করতে দেয়ার জন্য।'
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড