• বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

যৌন হয়রানি ও দুর্নীতি, রিয়াজের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে আ. লীগ 

  স্টাফ রিপোর্টার:

১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৫:০৪
আ. লীগ 

রাজধানীর পুরনো ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান নারী শিক্ষা মন্দির বর্তমানে পরিচিত শেরেবাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয় নামে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে প্রকাশিত মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড ঢাকা এর এক বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয় ঢাকা মহানগরীর সূত্রাপুর থানাধীন শেরেবাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয় এর গভর্নিং বডির বর্তমান সভাপতি জনাব মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন পদত্যাগ করায় অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য সভাপতি হিসেবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) কে মনোনয়ন প্রদান করা হলো।

বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে গভর্নিং বডির সভাপতি রিয়াজ স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করপছেন এমন নয় বরং তার বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ নানা অনিয়ম, দুর্নীতি-স্বেচ্ছাচারিতা ও যৌন হেনস্তার অভিযোগের স্মারক লিপি সম্প্রতি ঢাকা -৬ আসনের সংসদ সদস্য জনাব কাজী ফিরোজ রশিদ বরাবর জমা দেন, যার ফলশ্রুতিতে অভিযোগের সত্যতা মেলায় রিয়াজ পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দের দেওয়া স্মারকলিপিতে উঠে এসেছে গভর্নিং বডির সভাপতি জনাব মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিনের বিভিন্ন স্বেচ্ছাচারিতা, অর্থ ও নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ। রিয়াজ গভর্নির বডির সভাপতি হওয়ার পর শিক্ষামন্ত্রীর সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের পরিচয় দিয়ে শিক্ষামন্ত্রণালয় ম্যানেজ করে অডিট আটকে রেখে শূণ্যের কোটায় এনেছেন বিদ্যালয়ের প্রায় ১৩ কোটি টাকার ফান্ড। বিপুল এ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন রিয়াজ।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মণির দোহাই দিয়ে নিয়মিত তার অনৈতিক আচরণে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের হয়রানি করছেন এবং নারী শিক্ষকদের তিনি তার সাথে পার্সোনাল সাক্ষাৎ ও লংড্রাইভে যেতে প্রস্তাব দেন এবং এ প্রস্তাবে সাড়া না পেলে তার রোষানলে পড়তে হয় তাদের। এছাড়া শিক্ষামন্ত্রীর কাছের লোক পরিচয় দিয়ে তিনি শিক্ষকদের এমপিও বন্ধ এমনকি চাকরিচ্যুত করার হুমকি দিয়ে থাকেন। এখানেই শেষ নয়, শিক্ষার্থীদের অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বিদ্যালয়টিতে শিক্ষকদের জন্য সিটিং রুম সংকট থাকলেও রিয়াজ নিজের ক্ষমতার দাপটে বিদ্যালয়ে নিজের জন্য অত্যাধুনিক একটি সভাকক্ষ তৈরী করেছেন এবং গভীর রাত পর্যন্ত তিনি সেখানে অবস্থান করেন এবং নারী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সেখানে বিশেষ প্রয়োজনে সাক্ষাৎ করতে বলেন এমনটি অভিযোগের স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়।

স্মারক লিপিতে শিক্ষকবৃন্দ আরও উল্লেখ করেন, রিয়াজ বলে থাকেন তার সাথে শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপুমণির বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। রিয়াজ শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপুমণির বেডরুমে যান এমন কি তারা রিক্সায় চড়ে ঘুরে বেড়ান, যা রিয়াজ তার ফেসবুক প্রোফাইলে লাইভ প্রকাশ করেছে। এছাড়া রিয়াজ মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রীর ক্ষমতা ব্যবহার করে সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজ ও যাত্রাবাড়ি আইডিয়াল কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতির পদও বাগিয়ে নেন। যাত্রাবাড়ি আইডিয়াল কলেজের এক অনুষ্ঠানে ঢাকা ৫ আসনের সংসদ সদস্য কাজী মনিরুল ইসলাম মনু রিয়াজের বিভিন্ন অনিয়মের বিষয় তুলে ধরে বক্তব্য দিলেও মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রী এ বিষয়ে কোন ভ্রুক্ষেপ করেননি। ফলে বিভিন্ন অপকর্মে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে রিয়াজ।

এর আগেও রাজনীতিতে তার বেপরোয়া হওয়া নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক এবং সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা রিয়াজউদ্দিন রিয়াজের ঢাকা শহরে জীবন শুরু গুলিস্তানে ঝুঁড়িতে করে জুতা বিক্রি করার মধ্য দিয়ে। এরপর উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে অধীনে এসএসসি পাশ করে ভর্তি হন বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি মেডিকেল কলেজে। মূলত হোমিওপ্যাথি মেডিকেল কলেজে স্বঘোষিত জিএস পরিচয় দিয়ে সেখানে ত্রাসের রাজত্ব গড়ে তোলেন তিনি। তৎকালীন সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে উল্লেখ করা হয় রিয়াজের হোমিওপ্যাথি মেডিকেল কলেজে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়ে জীবন বদলে যাওয়ার চিত্র। তিনি সকল টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ এবং ভর্তি বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল অর্থের মালিক হন। ছাত্রলীগের সিন্ডিকেট ম্যানেজ করে বাগিয়ে নেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের (সোহাগ - নাজমুল) কমিটির সহ-সভাপতি পদ। এছাড়া তিনি জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ঢাকা মহানগর নেতা ও হোমিওপ্যাথি বোর্ডের সদস্য ডা. যুবরাজ এর স্ত্রী ডা. তাহমিনার সাথে পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং পরবর্তীতে এটি জানাজানি হলে ডা. যুবরাজ গুপ্ত হত্যার শিকার হন। এ ঘটনায় ডা. রিয়াজ এর সম্পৃক্ততা নিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।

সেখানে আরও বলা হয়, একসময় মাদ্রাসায় পড়ুয়া রিয়াজ শিবিরের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন। শিবির থেকে রিয়াজ ঢাকায় এসে বনে যান ছাত্রলীগ এবং এখন আওয়ামী লীগের রিয়াজে। বিশেষ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মণি তার জন্য বড় আশীর্বাদ। আওয়ামী লীগের একাধিক বিশ্বস্ত সূত্র নিশ্চিত করেছে, শিক্ষামন্ত্রীর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলে তার রাজনৈতিক মহলে প্রচারণা আজ তাকে নিয়ে এসেছে এ পর্যায়ে। রিয়াজ শিক্ষামন্ত্রী ডা. দপু মণি এর ঘনিষ্ঠ এবং আস্থাভাজন এটি রাজনৈতিক অঙ্গনে ওপেন সিক্রেট বিষয়। এছাড়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের শীর্ষ একজন নেতাকে অর্থ দিয়ে ম্যানেজ করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক পদ বাগিয়ে নেওয়ার ঘটনাও রাজনৈতিক অঙ্গনে ওপেন সিক্রেট বিষয়। এসকল সুযোগ-সুবিধা নিয়ে তিনি বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত হয়ে পড়েন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা - কর্মীদের সাথে অসদাচরণ ও ভয়ভীতি প্রদর্শন ও দলের সুনাম নষ্ট করতে তৎপর এমন একাধিক অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আবু আহম্মেদ মন্নাফী বলেন, সংগঠন কারও অপকর্মের দ্বায় নেবে না। আমি কাউকে কোনো ছাড় দেই নাই। যেকোনো ঘটনায় আমি সবসময় ব্যবস্থা নিয়েছি।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মোঃ হুমায়ুন কবির বলেন, আওয়ামী লীগের পদে থেকে এমন কাজ নিশ্চয় নিন্দনীয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করেছেন সে প্রতিষ্ঠানে যদি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে রিয়াজ কোনো অপকর্ম করে থাকে তাহলে অবশ্যই সংগঠনের সভাপতির সাথে আলোচনা করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ সকল অভিযোগের বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন রিয়াজের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড