সাঈদ মাহাদী সেকেন্দার
আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বহুল প্রতীক্ষিত ৩০ তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৮ ডিসেম্বর। সম্মেলন ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে উচ্ছ্বাস, ফিরে এসেছে প্রাণচাঞ্চল্য। নতুন নেতৃত্বে আসার জন্য দলের নীতি নির্ধারক পর্যায়ে লবিং-তদবিরে তৎপর ছাত্র নেতারা। আগামীর নেতৃত্বে কারা আসছেন তারই প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছেন কর্মীরা। সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পরপরই মধুর ক্যান্টিনের বাইরে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ও পদপ্রত্যাশীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে। ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, এতদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন-কেন্দ্রিক রাজনৈতিক কার্যক্রম ছিল ছাত্রলীগ নেতাদের। এখন পদপ্রত্যাশীদের চলাফেরা দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ের দিকে বেশি দেখা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে যাদের সাংগঠনিক সক্ষমতা ভালো, রয়েছে ক্লিন ইমেজ এবং যাদের পরিবারের সঙ্গে জামায়াত-বিএনপির কোনও সংশ্লিষ্টতা নেই, তারাই আগামীর নেতৃত্বে আসবে। এছাড়াও যারা শিক্ষার্থীদের কাছে জনপ্রিয় এবং মানবিক কাজে করে আলোচনায় আসতে পেরেছেন, এমন ছাত্রনেতারাও এগিয়ে থাকবেন।
ছাত্রলীগের বিগত কমিটিগুলো বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিভাগ ভিক্তিক রাজনৈতিক মেরুকরণের জন্য এক-এক সময় এক-এক বিভাগ থেকে নেতৃত্ব নিয়ে আসা হয়। তবে পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে সাংগঠনিক দক্ষতা, চারিত্রিক মাধুর্যতা, শিক্ষার্থীবান্ধব ও আওয়ামী পরিবারের মধ্য থেকেই নেতৃত্বে আনার কথা জানান দলের নীতি নির্ধারক ফোরাম। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বয়স ২৭ এর মধ্যে থাকলেই কেবল নেতৃত্বে আসার সুযোগ রয়েছে। সেই হিসেবে বিভিন্ন অঞ্চলের অনেকেই ছিটকে পড়বে শীর্ষ পদ থেকে। তবে বিগত কয়েকটি কমিটিতে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২ বছর বাড়িয়ে অনূর্ধ্ব ২৯ করেছেন। নীতি নির্ধারকরা মনে করেছেন গঠনতন্ত্রে ২৭ বছর বয়স, এর বাইরে নেত্রী প্রধানমন্ত্রী বড়জোর অনূর্ধ্ব ২৯ এর মধ্যে যেতে পারেন। কোনো ভাবেই ২৯ এর বেশি কেউ নেতা হতে পারবে না।
বিগত কয়েক বছরে দেখা গেছে, নির্দিষ্ট কয়েকটি অঞ্চল থেকে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে বৃহত্তর ফরিদপুর, বরিশাল, চট্টগ্রাম, উত্তরবঙ্গ, খুলনা, ময়মনসিংহ এবং সিলেট বিভাগ এবং সকলেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তবে দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসছে না। এবার সম্মেলনে চমক হিসেবে থাকতে পারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থেকে শীর্ষ এক পদ। সর্বশেষ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত শিকদার ও সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাহির থেকে নেতৃত্বে এসেছিলেন। লিয়াকত শিকদার ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের নেতা এবং নজরুল ইসলাম বাবু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। এছাড়া এর আগে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এনামুল হক শামীম ছিলেন জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালযের ছাত্র নেতা। সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ছিলেন বরিশাল কলেজের নেতা। এ ছাড়াও ছাত্রলীগের সোনালি অর্জন, যেসব নেতা রয়েছেন তারা বেশিরভাগেই ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের শিক্ষার্থী। আগামী জাতীয় নির্বাচনে ছাত্রলীগকে সু-সংগঠিত করতে এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থেকে একজনকে নেতৃত্বে আনার কথা ভাবছে ছাত্রলীগের নীতি নির্ধারনী ফোরাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্য থেকে কেন্দ্রীয় সভাপতি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করার কারণে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় দীর্ঘ দিন ধরেই অকেজো পড়ে আছে। শীর্ষ নেতৃত্বসহ কোনো ধরনের নেতাকর্মীদের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউস্থ কার্যালয়ে সচরাচর প্রবেশ করতে দেখা যায় না। দিবস ভিত্তিক কর্মসূচি পালন করতেই কেবল কেন্দ্রীয় নেতারা ছাত্রলীগের কার্যালয়ে যান। ২০০৬ সাল থেকে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হয়ে আসছে। এখন পযর্ন্ত এ ধারা অব্যাহত আছে। প্রতি বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের ক্যাম্পাস থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শীর্ষ পদের জন্য প্রার্থী হলেও আলোর মুখ দেখছে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসা প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সহ- সভাপতি আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতৃত্বের ভারসাম্য রাখতে শীর্ষ দুটি পদের একটা ঢাবির বাইরে থেকে দেওয়া প্রয়োজন।শীর্ষ দুটি পদ ঢাবি থেকে এলে এটি এককেন্দ্রিক হয়ে যায়।একটি পদ বাইরে থেকে এলে রাজনৈতিক গতি বৃদ্ধি পাবে।সুতরাং রাজনৈতিক গতিশীলতার জন্য প্রয়োজন এটি। সেক্ষেত্রে একটি পদ জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসতে পারে। সেখানে ২২ টি হল আছে,রাজনৈতিক চর্চা রয়েছে। রাজনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণ এর জন্য এমনটি গুরুত্বপূর্ণ।
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের উপ- নাট্য ও বিতর্ক সম্পাদক তারেক আজিজ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে দেশের অন্যসকল বিশ্ববিদ্যালয়েও রাজনৈতিক কার্যক্রম চলমান রয়েছে।সুতরাং দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে যোগ্য নেতৃত্ব আসতে পারে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের শীর্ষ পদে। বিগত সময়ে কিন্তু নেতৃত্ব দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থেকে। সুতরাং জেলা, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের শীর্ষ পদে আসতে পারে।যদি অতীতের আন্দোলন সংগ্রামের দিকে তাকানো হয় তাহলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবময় অতীত রয়েছে। এ বিদ্যাপিঠ থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতৃত্বে এসেছে।সুতরাং রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের শীর্ষ পদে আসতে পারে যোগ্য যে কেউ। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক সহাবস্থান নিশ্চিত হবে। সামনে জাতীয় নির্বাচন সুতরাং নির্বাচন এর বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে যোগ্য নেতৃত্ব আনতে হবে কেন্দ্রীয় কমিটিতে। আশাকরি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ পদে আসবে এবার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ পদে আলোচনায় আছে অনেকেই এর মধ্যে রয়েছে, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জোবায়ের আহমেদ, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান হৃদয়, চুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পাঠাগারবিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ ইমাম বাকের,জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপ- নাট্য ও বিতর্ক সম্পাদক তারেক আজিজ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপ- তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আব্দুর রশিদ রাফি এর মধ্যে যে কেউ শীর্ষ পদে আসতে পারেন বলে ছাত্রলীগের নির্ভরযোগ্যসূত্র নিশ্চিত করেছে। এ ছাড়াও আলোচনায় রয়েছেন জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক রাশেদ আল নাঈম , ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকিউল ইসলাম ফুয়াদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আল আমিন শেখ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নূরুল আফসার। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ঋত্বিক রায় বাহাদুর ঋতু।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড